পারকিনসন্স রোগের চিকিৎসায় বড় ধরনের অগ্রগতি ও সুই ছাড়া ইঞ্জেকশন দেওয়ার যন্ত্র
Tweet
বিজ্ঞানীরা বলছেন, পারকিনসন্স রোগ কেনো হয় – সেটা বোঝার ক্ষেত্রে তারা বড় ধরনের অগ্রগতি সাধন করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির একদল বিজ্ঞানী এই রোগের উপর গবেষণা চালিয়ে বলেছেন, মানুষের পেটের ভেতরে পরিপাক নালীর ভেতরে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থেকে এই রোগের সৃষ্টি হতে পারে।
বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন, এসব ব্যাকটেরিয়া থেকে কিছু রাসায়নিক পদার্থ নির্গত হয় যা মস্তিষ্কের কিছু অংশকে অত্যন্ত উদ্দীপ্ত করে তোলে যার ফলে মস্তিষ্কের ওই অংশের মারাত্মক ক্ষতিও হতে পারে।
পারকিনসন্স হচ্ছে এমন এক শারীরিক অবস্থা যাতে মস্তিষ্ক আক্রান্ত হয়।
এটা তখনই হয় যখন মস্তিষ্কের একটি অংশ ঠিকমতো কাজ করা বন্ধ করে দেয় এবং সময়ের সাথে এসব স্নায়ু কোষের মৃত্যু হয়।
মানুষের মস্তিষ্কে আছে অগণিত বহু স্নায়ু-কোষ। এসব থেকে তৈরি হয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক রাসায়নিক উপাদান – ডোপামিন।
হাঁটাচলায় সহায়তা করতে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে বার্তা পাঠানোর কাজে এই ডোপামিনকে ব্যবহার করে মানুষের মস্তিষ্ক।
হাঁটতে, কথা বলতে, লিখতে এমনকি হাসি দিতেও।
কিন্তু এই ডোপামিনের উৎপাদন যখন বন্ধ হয়ে যায় তখন সে ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। আর তখনই বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করে।
পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত হলে মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিশেষ করে হাত ও পা কাঁপতে থাকে। এর ফলে হাঁটাচলাতেও সমস্যার সৃষ্টি হয়।
মানুষের স্বাস্থ্যের জন্যে এই পারকিনসন্স বর্তমানে বড়ো ধরনের হুমকি হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশেও বহু মানুষ এই রোগে আক্রান্ত কিন্তু তাদের অনেকেই হয়তো বুঝতেও পারেন না যে তারা পারকিনসন্সে আক্রান্ত হয়েছেন।
কিংবদন্তীসম মুষ্টিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী দীর্ঘদিন পারকিনসন্সে ভোগার পর এই রোগে মারা গেছেন।
এই রোগটি নিয়ে শুনুন বাংলাদেশে বারডেম জেনারেল হাসপাতালে নিউরোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক নির্মলেন্দু বিকাশের সাক্ষাৎকার। শুনতে চাইলে উপরের অডিও লিঙ্কে ক্লিক করুন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, তাদের নতুন এই আবিষ্কারের ফলে এই রোগটি বোঝার ক্ষেত্রে মৌলিক কিছু পরিবর্তন ঘটবে।
এবং এর উপর, বিশেষ করে পরিপাক বা হজম সংক্রান্ত ব্যাকটেরিয়া নিয়ে গবেষণার উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতে পারকিনসন্স রোগের নতুন নতুন ও কার্যকরী ওষুধ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাও তৈরি হলো।
সুই ছাড়া ইঞ্জেকশন
ইঞ্জেকশন নিতে যারা ভয় পান তাদের জন্যে একটি সুখবর। কোনো ধরনের সুই ব্যবহার না করেই এখন ইঞ্জেকশন দেওয়া সম্ভব।
শরীরে ওষুধ প্রবেশ করানোর এরকম একটি কম্পিউটারাইজড পদ্ধতি উদ্ভাবন করে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে প্রযুক্তি সংক্রান্ত পুরস্কার জিতে নিয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান। পোর্টাল ইনস্ট্রুমেন্টস নামের একটি কোম্পানি এই যন্ত্রটি উদ্ভাবন করেছে। কিভাবে কাজ করে এই যন্ত্রটি। কোম্পানির প্রধান নির্বাহী প্যাট্রিক অ্যাঙ্কুয়েটিল বলেছেন,
“যন্ত্রটির ভেতরে প্রথমে ওষুধটি ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। তারপর শরীরের যেখানে ইঞ্জেকশন দিতে হবে সেখানে যন্ত্রটিকে উপুড় করে ধরা হয়। তখন ওই যন্ত্রটি থেকে ওষুধ গুলির মতো প্রচণ্ড গতিতে বেরিয়ে আসে।”
“ওষুধটি যে ধারায় ত্বকের ভেতর দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে সেটি চুলের চাইতেও সরু,” বলেন তিনি।
প্রায় তিনশো জন মানুষের ওপর এই পরীক্ষাটি চালানো হয়েছে।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, খুব সরু ধারায় এই ওষুধ প্রচণ্ড গতিতে বেরিয়ে আসে। এবং এটা হয় এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে।
শুধু ভয় পাওয়া দূর করাই নয়, কর্মকর্তারা বলছেন, প্রচলিত সুই থেকেও ইঞ্জেকশন দেওয়ার এই যন্ত্রটি হবে আরো অনেক উপকারী।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বলেন, “সুই এর চেয়ে এই যন্ত্রটি আরো দক্ষতার সাথে কাজ করতে পারে। অনেক সময় ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে শরীরে মধুর মতো চটচটে ও আঠালো ওষুধ দিতে হয়।”
তিনি বলেন, “সুই দিয়ে এধরনের আঠালো ওষুধ দেওয়া অনেক ঝামেলার। আঙ্গুলের সাহায্যে অনেক শক্তি দিয়ে ওই ওষুধ ইনজেক্ট করতে হয় শরীরে। কিন্তু এই যন্ত্রটিতে নানা ধরনের অপশন আছে। যেমন আপনি কি ধরনের ওষুধ দিচ্ছেন সেটা সিলেক্ট করে খুব সহজেই ইঞ্জেকশন দিতে পারেন। ফলে রোগীর খুব একটা কষ্ট হয় না।”
পোর্টাল ইনস্ট্রুমেন্টস বলছে, আগামী দু’বছরের মধ্যেই যন্ত্রটি বাজারে ছাড়া সম্ভব হবে বলে তারা আশা করছেন।