আত্মহত্যা বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা কমাতে হবে
Tweet
পৃথিবীতে নিকৃষ্টতম কাজের একটি হচ্ছে আত্মহত্যা। এ কথা জানার পরও কর্মটি থেমে থাকেনি। দিন দিন এর প্রবণতা বাড়ছে। বলা হচ্ছে আবেগজনিত রোগ মাদকাসক্তি ও বিষণ্নতাই আত্মহত্যার মূল কারণ। যদি তাই হয়, তাহলে মাদক এবং বিষণ্নতাকে কেন আমরা সমূলে উৎপাটিত করতে পারছি না। কর্মটি সহজ নয়। তবে অসম্ভবও নয়।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সমাজব্যবস্থার দুর্বলতার বিষয়টি কঠিন থেকে কঠিনতর হয়ে পড়ছে। তারা বলছেন, সমাজের সব স্তরের বৈষম্য অবস্থাকে ভয়াবহ করে তুলছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে এই প্রবণতা আরো ঘনীভূত হতে পারে।
হঠাৎ করেই রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে বেড়ে গেছে আত্মহত্যার প্রবণতা। করোনা মহামারির গত ১০ মাসে আত্মহত্যা করেছেন ১১ হাজার নারী-পুরুষ। গত বছরের তুলনায় এবার আত্মহত্যার হার বেড়েছে ১৩ শতাংশ। পরিসংখ্যান ব্যুরোর হিসাব অনুযায়ী, আত্মহত্যার ক্ষেত্রে নারীদের সংখ্যা বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। আগের তুলনায় এর সংখ্যা ২০ দশমিক ৭১ শতাংশ বেশি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবমতে, বিশ্বের প্রায় ৩০ কোটিরও বেশি মানুষ বিষণ্নতায় ভুগছেন। আর বাংলাদেশে বিষণ্নতায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা মোট জনসংখ্যার ৪ দশমিক ৬ শতাংশ অর্থাৎ ৭৪ লাখেরও বেশি। গত ১০ বছরে বিশ্বব্যাপী এ রোগের ব্যাপকতা বেড়েছে ১৮ শতাংশ। শুধু বিষণ্নতার কারণে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বাহ্যিকভাবে নানাবিধ কারণে মানুষের মাঝে বিষণ্নতা সৃষ্টি হতে পারে। পরীক্ষায় অকৃতকার্যতা, প্রেমে ব্যর্থতা, বাবা-মায়ের ওপর অভিমান এবং পারিবারিক কলহের কারণেই বেশির ভাগ মানুষ বিষণ্নতা, একাকিত্ব কিংবা মানসিক রোগে আক্রন্ত হন। এ ছাড়া পারিবারিক কলহের মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ব্যবধান সৃষ্টি আর অবিশ্বাস জন্ম নেওয়ার মধ্য দিয়ে মানসিক অশান্তি ত্বরান্বিত করে। এ ধরনের পরিবারের ছেলে-মেয়েরাও মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং এদের মধ্য থেকে বেশির ভাগই হঠাৎ করে বিষণ্নতায় আক্রান্ত হয়।
মাদকাসক্ত হওয়ার পথে পা বাড়ায়। আত্মহত্যার মতো জঘন্য সিদ্ধান্ত নিতেও কার্পণ্য করে না। তবে সবকিছুর পেছনে অর্থনীতির ভূমিকাই প্রধান। বিশেষকরে অর্থনৈতিক বৈষম্য বিষয়টিকে গতিশীল করতে সহায়তা করে। এ ছাড়া শারীরিক-মানসিক বা যৌন নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিরাও আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে থাকেন বেশি। কারণ হিসেবে বলা যায়, অর্থনৈতিক বৈষম্যজনিত কারণে সৃষ্ট সামাজিক অবক্ষয় এমন পরিবেশের জন্ম দিয়েছে।
পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ১৪ বছরে আত্মহত্যা করেছেন ২৩ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে গত তিন বছরেই আত্মহত্যা করেছেন ১১ জন। বিষণ্নতা, শিক্ষাজীবন নিয়ে হতাশা, সম্পর্কের টানাপড়েন, এবং চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে তারা আত্মহননের পথ বেছে নেন। পাশাপাশি অপর এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, আত্মহননকারীদের মধ্যে পারিবারিক সমস্যায় আত্মহত্যা করেছেন ৪১ দশমিক ২ শতাংশ, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে এ পথ বেছে নিয়েছেন ১১ দশমিক ৮ শতাংশ, বৈবাহিক সমস্যাজনিত কারণে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ, বিবাহ বহির্ভূত গর্ভধারণের কারণে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ, স্বামী নির্যাতনে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ এবং সরাসরি অর্থকষ্টে ৫ দশমিক ৯ শতাংশ।
আমরা মনে করি, সম্পদ বণ্টন ব্যবস্থায় যে ঘাটতি রয়েছে তা মেরামত করা গেলে, বৈষম্য কমিয়ে আনতে পারলে কেবল আত্মহত্যার প্রবণতাই নয়, সমাজের অনেক অনৈতিক কর্মকাণ্ড কমিয়ে আনা সম্ভব। সরকারের একার পক্ষে তা সম্ভব নয়। সাধারণ মানুষকেও এ কাজে এগিয়ে আসতে হবে। নৈতিকতা প্রতিষ্ঠিত হলে সমাজও দূষণমুক্ত হবে। তবে এ কাজে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে সরকারকেই।