ফাতেমী মোহরানা ও মোহরানা নিয়ে কিছু কথা
Tweet
একদিন হযরত আলী রা.-এর দাসী তাঁকে বললেন, আপনি কি জানেন ফাতিমার জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসছে একের পর এক। আলী বললেন, কই জানিনা তো!
দাসী- কিন্তু রাসূল সা. সব প্রস্তাব ফিরিয়ে দিচ্ছেন।
আলী- ও…
দাসী- তবে আপনি কেন যাচ্ছেন না?
আলী- আমি কেন যাব? আমার কী যোগ্যতা আছে যা দিয়ে ফাতিমাকে গ্রহণ করতে পারবো?
দাসী- আপনি যান, আপনাকেই রাসূল সা. জামাই হিসেবে গ্রহণ করবেন।
আলী রা. বলেন, এভাবে দাসীর বারংবার চাপে আমি রাসূল সা.-এর নিকট উপস্থিত হলাম। কিন্তু তাঁকে কিছুই বলতে পারলাম না। লজ্জায় জড়সড় হয়ে বসে ছিলাম। এই অবস্থা দেখে রাসূল সা. বললেন,
– আলী তুমি কি আমাকে কিছু বলবে? তোমার কি কোনো প্রয়োজন আছে?
– (জবাবে আলী রা. মাথা নিচু করে রাখলেন, কিছু বললেন না)
– আলী তুমি কি ফাতিমাকে বিয়ে করতে চাও? সেজন্যই কি এসেছ?
– জ্বি
– আলী! তোমার পূর্বেও অনেকে ফাতিমার প্রস্তাব নিয়ে এসেছে। কিন্তু যখনই আমি তাদের প্রস্তাব ফাতিমার নিকট উপস্থাপন করেছি, সে না-সূচক জবাব দিয়েছে। এখন তোমার বিষয়টিও তাঁর কাছে তুলে ধরব।
এরপর আল্লাহর রাসূল সা. ফাতিমা রা.-এর নিকট গেলেন এবং বললেন,
আমি চাই তোমাকে আলীর সাথে বিবাহ দিতে। এ সম্পর্কে তোমার মতামত কি?
হযরত ফাতেমা রা. লজ্জিত হয়ে মাথা নত করেন এবং নীরব থাকেন। এরপর রাসূল সা. উঠে আসলেন এবং প্রসিদ্ধ ব্যাক্যটি যা বিবাহ সংক্রান্ত ব্যাপারে ফকিহ্গণের নিকট অত্যন্ত সুপরিচিত তা উল্লেখ করেন, “আল্লাহু আকবার! তার নীরবতা হচ্ছে সম্মতির প্রমাণ।”
অতঃপর রাসূল সা. পুনরায় আলী রা.-এর নিকট আসলেন এবং বললেন,
– আলী, তোমার কাছে এমন কিছু কী আছে যা দ্বারা তোমার স্ত্রীর দেনমোহর প্রদান করবে?
– আমার পিতা-মাতা আপনার প্রতি উৎসর্গিত হোক। আপনি আমার জীবন-যাপন সম্পর্কে ভালভাবেই অবগত আছেন। আমার নিকট একটি তরবারী, একটি বর্ম ও একটি উট ছাড়া আর কিছুই নেই।
– ঠিক আছে, তরবারি তো তুমি দিতে পারবে না। তুমি যোদ্ধা, এই তরবারি দিয়েই তুমি শত্রুদের মোকাবিলা করবে। উটটিও দিতে পারবে না, কারণ উট দিয়ে খেজুর বাগানে পানি দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করবে এবং সফরের সময়ও তোমার উটের প্রয়োজন হবে। অতএব, অবশিষ্ট থাকে শুধুমাত্র বর্ম। বর্ম যুদ্ধে প্রয়োজন হলেও তুমি বর্ম ছাড়াই যুদ্ধ করবে। এই বর্মই হোক তোমার মোহরানা। যা তোমার স্ত্রীকে তোমার জন্য হালাল করবে। এই হলো আলী রা. ও ফাতিমা রা.-এর বিয়ের ইতিহাস। এই ইতিহাসকে সামনে রেখে বর্তমান সমাজে চালু হয়েছে ফাতেমী মোহর।
ফাতেমী মোহর
যদি এই ঘটনাকে আদর্শ হিসেবে নিই তাহলে স্ত্রী-কে মোহর দিতে হবে জীবিকা/ব্যবসায়ের মূলধন (উট) ও পেশাগত সম্পত্তি (তলোয়ার) বাদে যত অস্থাবর সম্পত্তি আছে সব দিতে হবে। আল্লাহর রাসূল আলীর কোনো সম্পদ নাই দেখে বর্মকে মোহরানা হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। এর মানে যদি কেউ বুঝে নেয় বর্ম হলো আদর্শ মোহরানা আমি বলবো তার বুঝের সমস্যা আছে। সে বুঝে হোক বা না বুঝে হোক স্ত্রী-কে ঠকানোর পাঁয়তারা করছে। আমার হিসেবে ফাতেমী মোহর অর্থাৎ সকল অস্থাবর দিয়ে দেওয়া খুবই কঠিন যা একজন মানুষের পক্ষে দেয়া কষ্টকর।
হজরত উমার রা. এর খিলাফতকালে যখন মুসলমানদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আসে তখন সাহাবারা তাদের সন্তানদের বিয়েতে বেশি মোহর ধার্য করতে শুরু করেন তখন হজরত উমার রা. দেনমোহরের ক্রমবৃদ্ধির গতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চেয়েছিলেন। তিনি এত বেশি পরিমাণ দেনমোহরের পক্ষে ছিলেন না। তিনি দেনমোহর কমানোর জন্য জুমুয়ার খুতবায় নসিহত করেন। অতঃপর তিনি একটি পরিমাণ নির্ধারণ করেন এবং বলেন এর বেশি মোহর ধার্য করা যাবে না।
কিন্তু সেখানে এক মহিলা হযরত উমারের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেন এবং সূরা আন নিসার ৪ নম্বর আয়াত পাঠ করেন। এ আয়াতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জানিয়েছেন, ‘তোমরা স্ত্রীদের তাদের মোহর দিয়ে দাও খুশি মনে’। তিনি আরো বলেন, এটা আমাদের হক আপনি এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। আল্লাহর রাসূল আমাদের এই অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছেন। হযরত উমার রা. তার এই কথার জবাবে ভুল স্বীকার করে নেন এবং সিদ্ধান্ত বাতিল করেন। অতএব মোহরানা সেটাই উত্তম যেটা উভয়ের জন্য ইনসাফপূর্ণ।