সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াতের ফজিলত

Share on Facebook

সুরা বাকারা পবিত্র কোরআনের দুই নম্বর সুরা। সবচেয়ে দীর্ঘ এই সুরার গুরুত্ব ও মর্যাদা অনেক, ফজিলতও বেশি। তবে শেষ দুই আয়াতের বিশেষ ফজিলত বর্ণিত হয়েছে হাদিসে।

সুরা আল-বাকারাকে আল্লাহ তাআলা এমন দুটি আয়াত দিয়ে শেষ করেছেন, যা আমাকে আল্লাহর আরশের নিচের ভাণ্ডার হতে দান করা হয়েছে। তাই তোমরা এ আয়াতগুলো শিখবে। তোমাদের স্ত্রীদেরকেও শেখাবে। কারণ, এ আয়াতগুলো হচ্ছে রহমত, (আল্লাহর) নৈকট্যলাভের উপায়। (দীন দুনিয়ার সকল) কল্যাণলাভের দোয়া। (মেশকাত: ২১৭৩)

সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত

২৮৫) اٰمَنَ الرَّسُوۡلُ بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡهِ مِنۡ رَّبِّهٖ وَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ ؕ کُلٌّ اٰمَنَ بِاللّٰهِ وَ مَلٰٓئِکَتِهٖ وَ کُتُبِهٖ وَ رُسُلِهٖ ۟ لَا نُفَرِّقُ بَیۡنَ اَحَدٍ مِّنۡ رُّسُلِهٖ ۟ وَ قَالُوۡا سَمِعۡنَا وَ اَطَعۡنَا ٭۫ غُفۡرَانَکَ رَبَّنَا وَ اِلَیۡکَ الۡمَصِیۡرُ

২৮৬) لَا یُکَلِّفُ اللّٰهُ نَفۡسًا اِلَّا وُسۡعَهَا ؕ لَهَا مَا کَسَبَتۡ وَ عَلَیۡهَا مَا اکۡتَسَبَتۡ ؕ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَاۤ اِنۡ نَّسِیۡنَاۤ اَوۡ اَخۡطَاۡنَا ۚ رَبَّنَا وَ لَا تَحۡمِلۡ عَلَیۡنَاۤ اِصۡرًا کَمَا حَمَلۡتَهٗ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِنَا ۚ رَبَّنَا وَ لَا تُحَمِّلۡنَا مَا لَا طَاقَۃَ لَنَا بِهٖ ۚ وَ اعۡفُ عَنَّا ٝ وَ اغۡفِرۡ لَنَا ٝ وَ ارۡحَمۡنَا ٝ اَنۡتَ مَوۡلٰىنَا فَانۡصُرۡنَا عَلَی الۡقَوۡمِ الۡکٰفِرِیۡنَ

উচ্চারণঃ 

২৮৫. আমানুর-রাসুলু বিমা উংজিলা ইলাইহি মির রাব্বিহি ওয়াল মু’মিনুন। কুল্লুন আমানা বিল্লাহি ওয়া মালা-ইকাতিহি ওয়া কুতুবিহি ওয়া রুসুলিহি, লা নুফার-রিকু বাইনা আহা’দিম-মির রুসুলিহি। ওয়া ক্বালু সামি’না, ওয়া আত্বা’না, গুফরা নাকা, রাব্বানা ওয়া ইলাইকাল মাসির।

২৮৬. লা ইউ কাল্লিফুল্লাহু নাফসান ইল্লা উস-আ’হা। লাহা মা কাসাবাত ওয়া আ’লাইহা মাক তাসাবাত। রব্বানা লা-তু আখজিনা-ইন্না সিনা- আও আখত্বা’না। রাব্বানা ওয়ালা তাহ’মিল আ’লাইনা ইসরান কামা হা’মালতাহু আ’লাল্লাজিনা মিন ক্বাবলিনা। রব্বানা ওয়ালা তুহা’ম্মিলনা মা-লা ত্বাকাতালানা বিহ। ওয়াআ’ফু আ’ন্না, ওয়াগ ফিরলানা, ওয়ার হা’মনা। আংতা মাওলানা, ফানছুরনা আ’লাল ক্বাওমিল কাফিরিন।

অনুবাদ

২৮৫) রাসুল তার কাছে যা আল্লাহ নাজিল করেছেন, তার উপর ঈমান এনেছেন এবং মুমিনগণও। প্রত্যেকেই ঈমান এনেছে আল্লাহর ওপর, তার ফেরেশতাগণ, তার কিতাবসমূহ এবং তার রাসূলগণের উপর। আমরা তাঁর রাসূলগণের কারো মধ্যে তারতম্য করি না। আর তারা বলে—আমরা শুনেছি ও মেনে নিয়েছি। হে আমাদের রব! আপনার ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল।

২৮৬) আল্লাহ কারো উপর এমন কোনো দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না, যা তার সাধ্যাতীত। সে ভালো যা উপার্জন করে, তার প্রতিফল তারই, আর মন্দ যা কামাই করে, তার প্রতিফল তার উপরই বার্তায়। হে আমাদের রব! যদি আমরা বিস্মৃত হই অথবা ভুল করি তবে আপনি আমাদেরকে পাকড়াও করবেন না। হে আমাদের রব! আমাদের পূর্ববর্তীগণের ওপর যেমন বোঝা চাপিয়ে দিয়েছিলেন, আমাদের ওপর তেমন বোঝা চাপিয়ে দেবেন না। হে আমাদের রব! আপনি আমাদেরকে এমন কিছু বহন করাবেন না, যার সামর্থ আমাদের নেই। আর আপনি আমাদের পাপ মোচন করুন, আমাদের ক্ষমা করুন, আমাদের প্রতি দয়া করুন, আপনিই আমাদের অভিভাবক। অতএব কাফের সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সূরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো নিয়মিত পাঠ ও এর মহান ফজিলত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত—

একদিন জিবরাইল (আ.) নবীজির (স.) কাছে বসা ছিলেন। হঠাৎ প্রচণ্ড একটি শব্দ শোনা গেলো। জিবরাইল (আ.) নিজের মাথা উঁচু করে বললেন, এটা আকাশের সেই দরজা খোলার শব্দ, যা আজকের আগে খোলা হয়নি। অতঃপর ওই দরজা দিয়ে একজন ফেরেশতা পৃথিবীতে নেমে আসলেন, যিনি আগে কখনও পৃথিবীতে আসেননি। তিনি নবীজির কাছে এসে সালাম দিয়ে বললেন, ‘দুটি নুর বা আলোর সুসংবাদ গ্রহণ করুন, যা আপনার আগে অন্য কোনো নবীকে প্রদান করা হয়নি। ১. সুরা ফাতিহা ও ২. সুরা বাকারার শেষাংশ। এর একটি অক্ষরও যদি পড়েন, তবে তার মধ্যকার প্রার্থিত বিষয় আপনাকে প্রদান করা হবে।’ (সহিহ মুসলিম: ৮০৬)

আলী (রা.) বলেছেন, ‘এটা আমার জানা নেই—উপযুক্ত বয়সের এবং জ্ঞান-বিবেক বুদ্ধিসম্পন্ন কোনো মুসলমানদের মধ্যে এমন কেউ রয়েছে কিনা, যে রাতে ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি ও সুরা বাকারার শেষ দুটো আয়াত তিলাওয়াত করে না।’ (তাফসির ইবনু কাসির, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা-৭৩৫)

হজরত আবু মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সুরা বাকারার শেষে এমন দুটি আয়াত রয়েছে, যে ব্যক্তি রাতের বেলা তিলাওয়াত করবে, তার জন্যে এ আয়াত দুটোই যথেষ্ট। অর্থাৎ রাতে কোরআন মজিদ তিলাওয়াত করার যে হক রয়েছে, কমপক্ষে সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত তিলাওয়াত করলে তার জন্য তা যথেষ্ট।’ (সহিহ বুখারি: ৪০০৮, ৫০০৯)

Leave a Reply