৯৯৯ টাকার প্যাকেজে পদ্মা সেতু দেখে এসে যা বললেন পর্যটকেরা

Share on Facebook

 

সাত থেকে আট বছর বয়সে একবার ফেরিতে পদ্মা নদী পার হয়ে গোপালগঞ্জে আত্মীয়ের বাড়িতে গিয়েছিলেন লুৎফুর কবির। তারপর আর পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে কোথাও যাওয়া হয়নি। সম্প্রতি দুই ছেলে ও স্ত্রীকে নিয়ে পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ট্যুরিস্ট বাসে পদ্মা সেতু ভ্রমণ করেন তিনি।
প্রথম আলোকে লুৎফুর কবির বলেন, ‘পরিবারের সবাই মিলে এই প্রথম একসঙ্গে পদ্মা সেতু ভ্রমণ করলাম। আমরা খুবই উপভোগ করেছি। বাচ্চারা বেশি একসাইটেড ছিল। কারণ, বাচ্চারা এর আগে ওইভাবে এত বড় নদী দেখেনি। এত বড় নদীর ওপর সেতু, তার ওপর দিয়ে গাড়ি যাচ্ছে। সেটা তাদের খুব আনন্দ দিয়েছে।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ট্যুরিস্ট কোস্টারে পদ্মা সেতু ভ্রমণের উদ্যোগ নিয়েছে। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পর্যটন ভবন থেকে পদ্মা সেতু পার হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত যায় এ কোস্টার, তারপর আবার ফিরে আসে। ২২ জুলাই (শুক্রবার) ভ্রমণ প্যাকেজের উদ্বোধন করেন পর্যটনমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী।
উদ্বোধনের দিন বিকেল চারটার পর প্রথমবারের মতো পর্যটক নিয়ে পর্যটন ভবন থেকে দুটি ট্যুরিস্ট কোস্টার পদ্মা সেতুর উদ্দেশে রওনা দেয়। প্রথম দিন কোস্টার ২টিতে মোট ৫৬ জন পদ্মা সেতু ভ্রমণ করেন। সরকারি ব্যবস্থাপনায় পদ্মা সেতু ভ্রমণে কেমন অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা জানতে তাঁদের মধ্যে চারজনের সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো।

তাঁদের একজন লুৎফুর কবির। তাঁর গ্রামের বাড়ি গাজীপুর চৌরাস্তা এলাকায়। বেসরকারি চাকরির সুবাদে তিনি ঢাকার বনশ্রী এলাকায় থাকেন। লুৎফুর কবির বলেন, পদ্মা সেতু দিয়ে ভ্রমণের দিনটি প্রত্যাশার চেয়ে ভালো ছিল তাঁর পরিবারের কাছে। কারণ, সেদিন পর্যটনমন্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। প্রথম দিনের পর্যটক হিসেবে পর্যটন ভবন থেকে ট্যুরিস্ট কোস্টার ছাড়ার সময় তাঁদের ফুল দিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। কোস্টার ছাড়ার সময় তাঁদের হালকা নাশতাও দেওয়া হয়। সন্ধ্যা পৌনে ছয়টার দিকে মাওয়া প্রান্ত দিয়ে তাঁদের বহনকারী কোস্টারটি পদ্মা সেতুর ওপর ওঠে। মাওয়া থেকে জাজিরা প্রান্তে যেতে তাঁদের ১২ মিনিটের মতো সময় লেগেছে। বাস একটু ধীরে গেছে, যেন সবাই নদী ও সেতু ভালো করে দেখতে পারে। পদ্মা সেতু পেরিয়ে বাস প্রথমে থামে ফরিদপুরের ভাঙা ইন্টারসেকশনে। সেখানে অন্যদের মতো তাঁরাও বাস থেকে নামেন ও সৌন্দর্য উপভোগ করেন। কেউ কেউ সেলফিও তোলেন।

 

১৫ মিনিটের মতো সেখানে অবস্থানের পর ঘাসবন নামের একটি রেস্তোরাঁয় যান সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা থেকে পৌনে সাতটার দিকে। রেস্তোরাঁর পক্ষ থেকে আবার তাঁদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। সেখানে সবাই বিশ্রাম নেন। সবাইকে প্যাকেজের আওতায় নুডলস, চিকেন ফ্রাই ও পানীয় নাশতা হিসেবে দেওয়া হয়। প্রায় এক ঘণ্টা অবস্থানের পর তাঁরা আবার রওনা দেন। এ দিন ঢাকায় ফিরতে রাত প্রায় ১১টা বেজে যায়।

‘পর্যটন করপোরেশনের গাড়ি ২টি ৬০ থেকে ৭০ কিলোমিটার গতিতে চলেছে। বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হলে দেখা যায় জোরে গাড়ি চালায়। যেহেতু পরিবার নিয়ে গেছি, সেই জায়গায় থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেছে এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে, এটা আমার কাছে ভালো লেগেছে’ যোগ করেন লুৎফুর কবির।

পর্যটন করপোরেশনের ট্যুরিস্ট কোস্টার দুটি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত (এসি)। গাড়ির ভেতরে ফ্রি ওয়াইফাইয়ের ব্যবস্থাও রয়েছে, তবে প্রথম দিন কারিগরি ত্রুটির কারণে তা ব্যবহার করতে পারেননি পর্যটকেরা। যাত্রীদের নিরাপত্তা বিবেচনায় গাড়িতে সিসি ক্যামেরা রয়েছে, যা পর্যটন করপোরেশন থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সেই সঙ্গে পাঁচ বছরের কম বয়সীদের কোনো খরচ দিতে হয় না।

পাঁচ বছরের কম বয়সী কন্যা ও স্ত্রীকে নিয়ে ওই কোস্টারে পদ্মা সেতু ভ্রমণ করেন ঢাকার তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়া এলাকার আরিফুর রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘গাড়ির পরিবেশ চমৎকার ছিল। পর্যটকদের সবাই বন্ধুসুলভ ছিলেন। খুব মজা করতে করতে গিয়েছি ও এসেছি। সার্বিকভাবে খুব ভালো অনুভব করেছি।’
দুই বাসের সঙ্গে পর্যটন করপোরেশনের দুজন কর্মকর্তা ও এই প্রতিষ্ঠানের অধীন ন্যাশনাল হোটেল অ্যান্ড ট্যুরিজম ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের দুজন শিক্ষার্থী ছিলেন। আরিফুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে যাওয়া কর্মকর্তাদের ব্যবহার খুবই বন্ধুসুলভ ছিল।’

পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে গেলেও নদী পাড়ে দাঁড়িয়ে মূল সেতুর অবকাঠামো দেখার ব্যবস্থা ছিল না। সেতুর জাজিরা প্রান্তে পর্যটন করপোরেশনের নিজস্ব হোটেল-মোটেল নেই। এই দুটি ব্যবস্থা থাকলে আরও ভালো হতো বলে মনে করেন আরিফুর।

সরকারিভাবে যে এমন একটি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, এই বিষয়ই সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে রাজধানীর শ্যামলী এলাকার এলিয়স ম্যাকাওলি গোমেজের। তিনি তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে পদ্মা সেতু ভ্রমণে যান। এলিয়স ম্যাকাওলি গোমেজ বলেন, এই উদ্যোগের মাধ্যমে নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হচ্ছে। তারপর খাওয়াদাওয়া থেকে শুরু করে তাদের যে সার্বিক ব্যবস্থাপনা, সবকিছুই মোটামুটি ভালোই ছিল। যেহেতু অনেকেই পরিবার নিয়ে যাবে, তাই পদ্মা সেতুর আশপাশের দু-একটি জায়গা দেখানো গেলে ভালো হতো বলেও মনে করেন এলিয়স ম্যাকাওলি গোমেজ।
পর্যটন করপোরেশনের তিনটি ট্যুরিস্ট কোস্টার রয়েছে। সব কটি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত। ভ্রমণের প্রথম দিন উদ্বোধন অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিকতা থাকায় বাস ছাড়তে ও ফিরতে কিছুটা দেরি হয়েছিল। তবে তার পরের দিন গত শনিবার বেলা সাড়ে ৩টার দিকে বাস ছাড়ে এবং রাত ১০টার আগেই ফিরে আসে বলে জানান শেখ মেহদি হাসান।

শুক্র ও শনিবার বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ট্যুরিস্ট কোস্টারে করে পদ্মা সেতু ভ্রমণ প্যাকেজটির খরচ ছিল জনপ্রতি ৯৯৯ টাকা। আগামী সপ্তাহ থেকে তা জনপ্রতি ১ হাজার ২০০ টাকা করা হচ্ছে।

Leave a Reply