কক্সবাজার সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগে কিটকট যেনো বিষফোঁড়া
Tweet
বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্রসৈকতের সৌন্দর্য উপভোগ করতেই প্রতিদিন কক্সবাজারে ছুটে আসেন হাজারো পর্যটক। এই বর্ষায় সাগরের উত্তাল রূপ–গর্জন কিংবা শীতের শান্ত জলের ঢেউয়ের ছোঁয়া মানুষের মনকে আন্দোলিত করে। কিন্তু সৈকতে সারিবদ্ধ ছাতাযুক্ত চেয়ারের (কিটকট) আধিক্য পর্যটকদের জন্য সরাসরি সমুদ্রের সৌন্দর্য উপভোগে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সৈকতে কিটকট বসানোর অনুমতি দেয় সৈকত রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা ‘বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি’। প্রতিবছর কিটকটের বিপরীতে আয় হয় লাখ লাখ টাকা। কিটকটে বসলে পর্যটককে প্রতি ঘণ্টায় গুনতে হয় ৩০ টাকা। গড়ে প্রতিটি কিটকট থেকে দৈনিক আয় হয় ৫০০ টাকার বেশি। তবে পর্যটকের অভিযোগ, সৈকতে যেখানে জনসমাগম বেশি, সেখানে সারিবদ্ধভাবে অসংখ্য কিটকট বসানো থাকে। ছাতাগুলো একটার সঙ্গে আরেকটা এমনভাবে লাগানো থাকে যে পর্যটকেরা সরাসরি সমুদ্রে নামতে পারেন না। নামতে হলে ছাতার নিচে দিয়ে মাথা নিচু করে পানির দিকে যেতে হয়। এতে অন্য পর্যটক বিরক্তবোধ করলেও করার কিছু থাকে না।
সৈকতের কলাতলী থেকে উত্তর দিকে ডায়াবেটিকস হাসপাতাল পয়েন্ট পর্যন্ত এই পাঁচ কিলোমিটার অংশে দেড় হাজারের বেশি কিটকট বসানো হয়েছে। এদিকে সুগন্ধা পয়েন্টের এক কিলোমিটার সৈকতে অন্তত ৪০০ কিটকট রয়েছে। প্রতিটি চেয়ারে দুই থেকে চারজন মানুষ বসে আছেন। চেয়ারগুলো পরিচালনা করছে শিশু–কিশোরেরা।
সেখানে একটি কিটকটে বসে ছিলেন ঢাকার উত্তরা থেকে আসা শাহজাহান খান। তিনি বলেন, ‘গরম সহ্য হচ্ছে না বলে ছাতার নিচে চেয়ারে বসেছি। কিন্তু শান্তি নাই। ছাতাগুলো একটার সঙ্গে আরেকটা লাগানো, চেয়ারের সঙ্গে চেয়ার লাগানো। কোনো প্রাইভেসি নেই। দূর থেকে চেয়ারের সারি দেখলে সুন্দর লাগে। কিন্তু এটার জন্য সমুদ্র দেখা যায় না।’
সুগন্ধা পয়েন্টে ১০টি কিটকটের মালিক ওমর ফারুক। কিটকটগুলো দেখভাল করে দুজন শিশু–কিশোর। তাদের একজন সাইফুল (১৫) বলে, কিটকটে বসলে ঘণ্টায় ৩০ টাকা দিতে হয়। সকাল ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত মানুষ বসে। গড়ে দৈনিক ৫০০ টাকার বেশি আয় হয়।
কক্সবাজার সৈকত কিটকট মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি মাহবুবুর রহমান বলেন, কিটকটের বিপরীতে কোটি টাকা বিনিয়োগ করা হলেও ব্যবসা চলে মাত্র পাঁচ মাস (নভেম্বর থেকে মার্চ)। অন্যান্য সময় পর্যটক বাড়লে কিটকটের ব্যবসা চাঙা হয়। তখন চাহিদা পূরণে অতিরিক্ত কিটকট বসানো হয়। এখন পর্যটকের সমাগম আছে। এ ছাড়া প্রচণ্ড গরমের কারণে পর্যটকেরা কিটকটে বসতে আগ্রহী হচ্ছেন। রোদ থেকে বাঁচতে ছাতাগুলো একটার সঙ্গে আরেকটা লাগানো হচ্ছে।
কিটকট নিয়ে পর্যটকদের অভিযোগের বিষয়ে মাহবুবুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে তাঁরা অবগত আছেন। পর্যটকদের নিরাপত্তা ও বিরক্তি দূর করতে কিটকটমালিকদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকে সৈকত থেকে অতিরিক্ত কিটকট সরিয়ে ফেলা এবং সরাসরি সমুদ্র দেখার মতো পরিবেশ সৃষ্টির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
পর্যটকদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সদস্য মো. রেজাউল করিম বলেন, বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির শর্ত আছে একটা ছাতার সঙ্গে আরেকটা ছাতার দূরত্ব থাকবে অন্তত পাঁচ ফুট, যাতে মানুষ হেঁটে বিনা বাধায় সৈকতে নামতে পারেন, দূর থেকেও সমুদ্রের পানি দেখতে পান। কিন্তু এই শর্ত মানা হচ্ছে না। এতে পর্যটকেরা বিরক্তবোধ করছেন। আবার গাদাগাদি করে কিটকট বসানোর সুযোগ নিয়ে পর্যটকের মুঠোফোন, মানিব্যাগসহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করা হচ্ছে।
আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে সব কিটকট পাঁচ ফুট অন্তর দূরত্বে সরানোর নির্দেশনা মালিকদের দেওয়া হয়েছে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ১০ আগস্ট থেকে ট্যুরিস্ট পুলিশ মাঠে নামবে। পর্যটকদের নিরাপত্তা ও ভ্রমণ নির্বিঘ্ন করতে সৈকতে কিটকটের আধিক্য দূর করবে তারা।