বিদেশ যাওয়া আটকে গেল ৩০০ সরকারি কর্মকর্তার
Tweet
ব্যয় সংকোচনে সরকারের একগুচ্ছ পদক্ষেপের মধ্যে আছে কর্মকর্তাদের বিদেশ সফরে নিষেধাজ্ঞা। কয়েক দফায় জারি করা হয় পরিপত্র। এরপরও ঠেকানো যায়নি কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিদেশ ভ্রমণ। তবে অন্তত তিনশ কর্মকর্তার সম্ভাব্য বিদেশ সফর বাতিল হয়ে গেছে। এসব কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি দিয়ে সরকারি আদেশ (জিও) জারি করেছিলো কর্তৃপক্ষ।
এদিকে সরকারি কর্মকর্তাদের অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণবিলাসের লাগাম টেনে ধরার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বিশ^জুড়ে চলমান অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে বাংলাদেশে সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশভ্রমণ নিয়ন্ত্রণ জরুরি।
গতকাল এ ধরণের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে হাইকোর্ট বলেন, ‘অপ্রয়োজনে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশভ্রমণ নয়।’ একইসঙ্গে এ ধরণের বিদেশযাত্রা ঠেকাতে সরকারের জারি করা পরিপত্র যথাযথভাবে পালন করার নির্দেশও দিয়েছেন হাইকোর্ট।
সরকারি কর্মচারীদের বিদেশ ভ্রমণের বিষয়ে সরকার যে পরিপত্র জারি করেছে তা প্রতিপালিত হচ্ছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনা মন্ত্রী এম এ মান্নান ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি। তবে খবরের কাগজের রিপোর্ট থেকে দেখছি যে সর্বক্ষেত্রে হচ্ছে না। কিছু কিছু ফাঁকফোকর আছে। তবে শতভাগ প্রতিপালিত হতে একটু সময় লাগে তো।’
উচ্চ আদালতের নির্দেশনার বিষয়টি তার দৃষ্টিতে এনে এই পরিপত্র শতভাগ প্রতিপালন সম্পর্কিত পদক্ষেপের বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রী ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘আমরা নজরদারি বাড়াচ্ছি। একনেকের প্রকল্পগুলো যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে যথেষ্ঠ বিবেচনার সাথে। এসব প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণের বিষয় দৃষ্টিতে আসলে তা ছেটে ফেলা হচ্ছে।’ পরিকল্পনা মন্ত্রী বলেন, ‘পরিপত্র প্রতিপালিত হবে- তবে একটু সময় লাগবে। আমাদের কর্মকর্তারা এখন এসব বিষয়ে বেশ এলার্ট (সতর্ক)। তাদের মধ্যে সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ উভয়ই বেড়েছে।’
এদিকে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে সরকারি কর্মচারীদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ অনুচিত মন্তব্য করে অর্থনীতিবিদ ড. নাজনীন আহমেদ ঢাকা টাইমসকে বলেন, ‘এই সময়ে অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বিদেশ ভ্রমণ স্থগিত রাখা উচিত। আমি বলবো বিশ^ পরিস্থিতি অনুযায়ী আমরা অর্থনৈতিক দিক থেকে এখনও স্বস্তিতে আছি। আমরা এই স্বস্তি থেকে বাইরে যেতে চাচ্ছি না। সে কারণেই এসব অপ্রয়োজনীয় ব্যয় স্থগিত রাখা জরুরি। সরকারি কর্মচারীদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ বন্ধে সরকারের পরিপত্র বা আদালতের যে নির্দেশনা তা সময়োপযোগী।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের এই অর্থনৈতিক স্বস্তি টিকিয়ে রাখতে ব্যয়রে লাগাম টেনে ধরারই একটি অংশ হচ্ছে সরকারি কর্মচারীদের বিনা প্রয়োজনে বা সাধারণ খিচুরি রান্নার ট্রেনিং নিতে বিদেশ যাওয়ার মতো বিষয়কে ঘটতে না দেয়া।’
গত ১২ মে ‘বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে’ বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের বিদেশ সফর বন্ধের বিষয়ে পরিপত্র জারি করে সরকার। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি এ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে একজন মন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারি বিদেশ ভ্রমণ করেন। এর আগে গত ৮ মে সরকারি চাকরিজীবীদের বিদেশ ভ্রমণ সীমিত করে প্রথম দফায় পরিপত্র জারি করে অর্থ মন্ত্রণালয়। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, এই নিষেধাজ্ঞা জারির ফলে অন্তত ৩শ কর্মকর্তার সম্ভাব্য বিদেশ সফর বাতিল হয়ে গেছে- যাদের বিদেশ ভ্রমণের অনুমতি দিয়ে জিও জারি করেছিলো কর্তৃপক্ষ।
এছাড়া গত ৩১ জুলাই সরকারি কর্মকর্তাদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে এ এস এম আল সনেট নামের এক ব্যক্তির পক্ষে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। তিনি বলেন, সরকারি প্রজ্ঞাপন অমান্য করে একজন মন্ত্রীর পিএস বিদেশে গেছেন। তার মতো অনেক কর্মকর্তাই সরকারি প্রজ্ঞাপন অমান্য করে বিদেশ যাচ্ছেন। রিট আবেদনে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইনসচিব, অর্থসচিব ও দুদকের চেয়ারম্যানকে বিবাদী করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও সরকারি কর্মকর্তাদের অপ্রয়োজনীয় বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ করতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তাকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারির আবেদন জানানো হয় রিটে।
পরিপত্রে যা আছে:
১২ মে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের বিদেশ ভ্রমণ বন্ধের নির্দেশনা দিয়ে জারি করে অর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা-৬ অধিশাখা। ওই পরিপত্রে বলা হয়, ‘কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার এবং বর্তমান বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে পুনরায় আদেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব প্রকার এক্সপোজার ভিজিট, স্টাডি ট্যুর ও ইনোভেশনের আওতাভুক্ত ভ্রমণ এবং ওয়ার্কশপ, সেমিনারে অংশগ্রহণসহ সব প্রকার বিদেশ ভ্রমণ বন্ধ থাকবে। এ আদেশ উন্নয়ন বাজেট ও পরিচালন বাজেট উভয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং কার্যকর হবে বলেও জানানো হয়।’