সৌদিতে দুই সন্তানের মাকে ৩৪ বছরের কারাদণ্ড
Tweet
টুইটার ব্যবহার করায় সৌদি আরবে এক নারীকে ৩৪ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। সোমবার (১৫ আগস্ট) তার বিরুদ্ধে কঠোর এ দণ্ডের ঘোষণা করেন দেশটির এক বিশেষ আদালত।
ওই নারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, টুইটার ব্যবহারের মাধ্যমে তিনি ‘জন-অসন্তোষ ও দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি’র চেষ্টা করেছেন। বুধবার (১৭ আগস্ট) দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ খবর দেয়া হয়েছে।
দণ্ডপ্রাপ্ত ওই নারীর নাম সালমা আল শিহাব। যুক্তরাজ্যের লিড ইউনিভার্সিটির ছাত্রী তিনি। পড়াশোনার সুবাদে যুক্তরাজ্যেই থাকতেন। সেখানে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করতেন। সম্প্রতি ছুটিতে নিজ দেশ সৌদিতে ফেরেন সালমা। দেশে ফিরেই ফেঁসে যান আইনের জালে।
দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনমতে, ৩৪ বছর বয়সী সালমা আল শিহাব ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ও দুই সন্তানের জননী। তার বিরুদ্ধে টুইটারে অ্যাকাউন্ট খোলা, ভিন্নমতাবলম্বী ও সরকারবিরোধী অধিকারকর্মীদের অনুসরণ ও তাদের টুইটার বার্তা রিটুইট করে সৌদি আরবের নাগরিক ও জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলার অভিযোগ আনা হয়।
টুইটার ব্যবহার করে ‘জন-অসন্তোষ সৃষ্টি এবং নাগরিক ও জাতীয় নিরাপত্তা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার অভিযোগে প্রাথমিকভাবে সালমাকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।
তবে সোমবার (১৫ আগস্ট) সন্ত্রাসবিষয়ক বিশেষ আদালত দণ্ড বাড়িয়ে ৩৪ বছর করেন। শুধু তাই নয়, দণ্ডভোগের পর তাকে আরও ৩৪ বছর বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে।
সরকারপক্ষের আইনজীবীরা সালমার বিরুদ্ধে আদালতে নতুন অভিযোগ উত্থাপন করার পরই দণ্ড পরিবর্তন করা হয়। তবে এ মামলায় সালমা এখনও আপিলের সুযোগ পাবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সালমা আল শিহাব নিজে সৌদি আরবের ভেতরে বা বাইরে সোচ্চার কোনো অধিকারকর্মী নন। তবে নিয়মিত বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহার করতেন।
ইনস্টাগ্রামে সালমার অনুসারীর মাত্র সংখ্যা ১৫৯। সেখানে নিজের সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, তিনি ‘একজন দাঁতের ডাক্তার (ডেন্টাল হাইজিনিস্ট), চিকিৎসাবিষয়ক শিক্ষক (মেডিকেল এডুকেটর), লিডস ইউনিভার্সিটির পিএইচডি শিক্ষার্থী ও দুই সন্তানে জননী।’
এ ছাড়া টুইটারে অনুসারীর সংখ্যা মাত্র ২ হাজার ৫৯৭। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে টুইটারে তিনি নিজের সন্তানদের ছবি প্রকাশ করেছেন। তবে মাঝে মাঝে সৌদিতে রাজবন্দিদের মুক্তি চেয়ে নির্বাসিত সৌদি অধিকারকর্মীদের টুইট শেয়ার করেছেন তিনি।
স্থানীয় মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো সালমার এ কারাদণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে। অধিকারকর্মীরা বলছেন, সালমার এ দণ্ডের পর ভিন্নমতাবলম্বী ও গণতন্ত্রপন্থিদের ওপর সৌদির রাজতান্ত্রিক সরকারের দমনপীড়ন ও ধরপাকড় আরও বাড়তে পারে।
নির্বাসনে থাকা সৌদি অধিকারকর্মী খালিদ আলজাবরি বলেন, সালমা আল শিহাবের মামলায় প্রমাণ হয়, ভিন্নমতাবলম্বীদের সন্ত্রাসবাদী বলে বিবেচনা করে সৌদি আরব।
যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ টুইটের জন্য সন্ত্রাসবাদের আদালতে সালমার কঠোর সাজা যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের নির্মম দমনপীড়নের সর্বশেষ দৃষ্টান্ত।’