হাই প্রেসার রোগীদের যা খেতে মানা

Share on Facebook

মানুষের স্বাভাবিক রক্তচাপের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার প্রবণতাটাকে উচ্চ রক্তচাপ বা হাই ব্লাড প্রেসার বলা হয়। আজকাল যে কোনো বয়সী মানুষের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা দেখা যায়। সাধারণত অতিরিক্ত ওজন, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাসের অভাবে অনেকেই খুব কম বয়সে উচ্চ রক্তচাপজনিত রোগে আক্রান্ত হন। উচ্চ রক্তচাপ হলে খাবারের নিয়ন্ত্রণ খুবই জরুরি। কেননা উচ্চ রক্তচাপ থেকেই ডায়াবেটিস, কিডনি রোগ এবং হৃদরোগের মতো মারাত্মক রোগও হতে পারে।

গবেষণায় দেখা গেছে যে, যাদের ব্লাড প্রেসারের সমস্যা রয়েছে, তারা অনায়াসেই সেই সমস্যা দূর করতে পারেন শুধুমাত্র স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে। তাই উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত প্রত্যেক রোগীর উচিত রক্তচাপ বাড়ায় এমন খাবার পরিহার করে সঠিক খাবার খাওয়ার মাধ্যমে তার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা। তাহলে আসুন এবার জেনে নেয়া যাক এমন ৮ টি খাবারের তালিকা যেগুলো উচ্চ রক্তচাপে ভুলেও খাওয়া উচিত নয়।

লবণ
উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় প্রথমেই যে খাবারটি খেতে মানা করব তা হলো লবণ। হাই ব্লাড প্রেসারের অন্যতম কারণ হল শরীরে মাত্রাতিরিক্ত সোডিয়াম জমা হওয়া। তাই যাদের উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে তাদের জন্য লবণ খুবই ক্ষতিকর। তাই খুবই সীমিত পরিমাণ লবন দিয়ে খাবার তৈরি করে খাবেন। খাবারের সাথে বাড়তি লবণ নিয়ে খাওয়া এবং বেশি লবণযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। এসেই সাথে বিট লবণ এবং অন্যান্য মুখরোচক লবণ গ্রহণ করা থেকেও বিরত থাকতে হবে।

ফাস্ট ফুড এবং বেকারি খাবার
বর্তমান যুগে ফাস্ট ফুড খাওয়া অনেকের দৈনন্দিন রুটিনে পরিণত হয়েছে। প্যাকেটজাত এবং প্রসেসড ফুডগুলির মধ্যেই সবথেকে বেশী উচ্চ রক্তচাপ সৃষ্টিকারক উপাদান থাকে। অনেকেই জানেন না যে এই ফাস্ট ফুড এবং বেকারি খাবারে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম, প্রিজারবেটিভ, বিষাক্ত রঙ, এবং ক্ষতিকারক চর্বি ডালডা ব্যাবহার করা হয়। এইসব গুলি উপাদানই উচ্চ রক্তচাপের রোগীর জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। তাছাড়া তেলে ভাঁজা অধিক চর্বি যুক্ত মুখ রোচক খাবার থেকেও বিরত থাকতে হবে।

কফি
যারা কফি খেতে পছন্দ করেন তাদের জন্য দুঃসংবাদ হলো কফি খেলে সাময়িক সময়ের জন্য রক্তচাপ বেড়ে যায়। তাই যাদের উচ্চরক্তচাপের সমস্যা আছে তাদের জন্য কফি খাওয়া বেশ ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ ক্যাফেইন রক্তনালীকে সরু করে দেয়, ফলে হঠাৎ করে বেড়ে যাওয়া রক্তচাপের ফলে স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই উচ্চ রক্তচাপ থাকলে কফি ও অতিরিক্ত চা পানের অভ্যাস বাদ দিয়ে প্রতিদিন এক কাপ করে গ্রিন টি পান করবেন।

রেড মিট বা লাল মাংস
উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় রেড মিট অর্থাৎ গরুর মাংস, খাসির মাংস এবং মহিষের মাংস একেবারেই বর্জন করা একান্তভাবে জরুরি। কারণ এই সব লাল মাংসে খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি থাকে যা হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বহু গুনে বাড়িয়ে দেয়।

মুরগীর চামড়া এবং ডিমের কুসম
হাই প্রেসারের রোগীরা মুরগীর চামড়া এবং ডিমের কুসম খেলে রক্তচাপ বৃদ্ধি পায় সেই সাথে বেড়ে যায় হৃদরোগের ঝুঁকিও। তাছাড়া মুরগির চামড়ায় উচ্চ মাত্রার চর্বি থাকে যা মানুষের শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে এবং স্ট্রোকের ঝুকি বাড়ায়।

চিনি যুক্ত খাবার
অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার আমাদের শরীরের জন্য খুবই ক্ষতিকর। কারণ এই খাবার গুলি আমাদের শরীরে জন্য খুবই ক্ষতিকর। কারণ এই খাবার গুলি আমাদের শরীরে মেদ জমতে সাহায্য করে এবং এর ফলে ওজন বৃদ্ধি পেয়ে শরীর মোটা হয়ে যায়। এমন অনেকে আছেন যারা অতিরিক্ত ওজনের কারণে উচ্চ রক্তচাপের মতো রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। তাছাড়া অতিরিক্ত চিনিযুক্ত খাবার খেলে রক্তচাপ বেড়ে যায়। তাই মিষ্টি কিছু যদি খেতে ইচ্ছে করে তাহলে চিনির বদলে সামান্য মধু খেতে পারেন।

আচার এবং সস জাতীয় খাবার
যারা হাই প্রেসারের সমস্যায় যারা ভুগছেন, তাদের আচার এবং সস জাতীয় খাবার খাওয়া একেবারেই উচিত নয়। কারণ আচার এবং সসে লবন এবং চিনির পরিমাণ খুব বেশি থাকে, যা প্রেসারের রোগীদের শরীরের পক্ষে একেবারেই ভাল নয়।

অ্যালকোহল এবং কোমল পানীয়
অ্যালকোহল জাতীয় পানীয় খেলে দ্রুত রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়। তাছাড়া এটাও মনে রাখা উচিত যে অ্যালকোহল ও কোমল পানীয়গুলোতে প্রচুর ক্যালোরি আছে যা ওজন বৃদ্ধি করে। তাই অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় কিংবা কোমল পানীয় না খেয়ে তাজা ফলের রস কিংবা লেবুর শরবত খাবেন।

এছাড়াও কখনও ননিসহ বা ফ্যাট যুক্ত দুধ খাবেন না। দুধ ও দুগ্ধজাত সামগ্রীর মধ্যে ননিবিহীন দুধ, টকদই খাবেন।

যেসব খাবার হাই প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ

আঙুর: পটাশিয়াম প্রাকৃতিক মূত্রবর্ধক উপাদান, যা কিডনি থেকে সোডিয়াম নিঃসরণ করে ও রক্তনালী শিথিল করে দেয়। পটাশিয়াম ও ফসফরাসে পরিপূর্ণ আঙুর হাই ব্লাড প্রেসার কমিয়ে দিতে পারে।
 
কলা : আগেই বলা হয়েছে, হাই ব্লাড প্রেসার কমিয়ে দিতে পারে। একটি কলায় ৪৫০ মিলিগ্লাম পটাশিয়াম থাকে। তাই প্রতিদিন কলা খেলে হাই ব্লাড প্রেসারের সমস্যা ধীরে ধীরে কমে যেতে পারে।

পেঁয়াজ : পেঁয়াজ রয়েছে অ্যাডেনোসিন। এটি পেশি শিথিল করে। যা হাইপারটেনশনের রোগীদের চিকিৎসায় ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে পেঁয়াজ। কাঁচা পেঁয়াজ রস বানিয়েও খেতে পারেন। রসের স্বাদ ভালো না লাগলে তাতে সামান্য মধু মেশাতে পারেন।

রসুন : ধমনী ও শিরায় জমে থাকা কোলেস্টেরল গলিয়ে দিতে সাহায্য করে রসুন। এটি রক্তের প্রবাহ বাড়ানো ও ব্লাড প্রেসার কমানোর ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে।

ডাবের পানি : ডাবের জলে রয়েছে পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ক্যালশিয়াম, ভিটামিন সি ও অন্যান্য নিউট্রিয়েন্টস্। এই উপাদানগুলি উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে ফেলতে সাহায্য করে।

তরমুজ: তরমুজে আছে আরজিনাইন। এটি একটি অ্যামিনো অ্যাসিড যা উচ্চ রক্তচাপ কমিয়ে ফেলতে পারে।

ধনেপাতা : প্রচুর পরিমাণে বায়োঅ্যাকটিভ রয়েছে ধনে পাতাতে। যেমন – অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট, অ্যান্টিইনফ্লেমেটারি ও হতাশা কমানোর উপাদান। তাই ধনেপাতা খেলে কমে যেতে পারে ডায়াবিটিজ়, কোলেস্টেরলের সমস্যাও।

পাতিলেবু : ভিটামিন সি’তে ভরপুর পাতিলেবু হৃদযন্ত্রের সূক্ষ্ম নলগুলির শক্তি বাড়ায়। এতে হাইপারটেনশনও নিয়ন্ত্রণে থাকে। 

Leave a Reply