কাতার বিশ্বকাপ : ক্রীড়া পর্যটনে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিবে মধ্যপ্রাচ্য
Tweet
প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা এবং পর্যটনের প্রতি মানুষের আগ্রহ নতুন নয়। উভয়ের প্রতি মানুষের উদ্দীপনা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে ক্রীড়া এবং পর্যটনের প্রতি মানুষের আকর্ষণের তীব্রতা বৈশ্বিক প্রবণতায় পরিণত হয়েছে। ফলে বর্তমান শতাব্দীতে ক্রীড়া ও পর্যটন নিজস্বতা অক্ষুণ্ণ রেখেই একে অপরের পরিপূরক হয়ে উঠছে।
বর্তমান বিশ্বে ক্রীড়া শুধুমাত্র বিনোদন নয়। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্রীড়ার অবদান বহুমুখী। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের সংস্কৃতির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। নিজ স্বার্থ এবং স্বার্থসংশ্লিষ্টতার কারণে রাষ্ট্রগুলোর পারস্পরিক সম্পর্কের মধ্যে নানাবিধ সীমাবদ্ধতাও বিদ্যমান। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ক্রীড়ার আসরগুলো খুব সহজেই বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের, বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষদের মধ্যে নৈকট্য সৃষ্টি করে। বহু আগেই চিত্তবিনোদনের লক্ষ্যে ঘুরে বেড়ানোর সীমা অতিক্রম করেছে পর্যটন। বর্তমান বিশ্বে পর্যটন বহুমুখী ভূমিকা পালন করে।
পর্যটন এবং ক্রীড়া- দুই উল্লেখযোগ্য ঘটনা মিলে, বলা ভালো একে অপরের উপর নির্ভর করে গড়ে উঠছে পর্যটনের শক্তিশালী ধারা – ‘স্পোর্টস ট্যুরিজম’ বা ক্রীড়া পর্যটন। এই ধারাটি পর্যটন শিল্পের সবচে দ্রুত সম্প্রসারণশীল ধারা। বাজার গবেষণা সংস্থা এলাইড মার্কেট রিসার্চের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী ক্রীড়া পর্যটন বাজারের আকার ছিল ৩২৩.৪২ বিলিয়ন। এই বাজারের আকার বার্ষিক ১৬.১ হারে বৃদ্ধি পেয়ে ২০৩০ সাল নাগদ ১৮০৩.৭ বিলিয়নে পৌছবে।
ক্রীড়া পর্যটনের দ্রুত সম্প্রসারণশীল বাজারে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে কৌশলগত লড়াই চলছে। এই লড়াইয়ের অংশ হিসেবেই কাতার ফুটবলের সবচে বড় আসর বিশ্বকাপ ২০২২ আয়োজন করছে। এই আয়োজনে কাতার বিনিয়োগ করেছে ২০০বিলিয়ন ডলার। বিশ্বকাপ হতে কাতারের ২০বিলিয়ন ডলার আয়ের লক্ষ্য থাকলেও, সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী ১৭ বিলিয়ন ডলার আয়ের আশা করছে। ২০ বা ১৭ বিলিয়ন ডলার আয় বা দেশের মর্যাদা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কাতার ২শ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করে নাই। বর্তমানে কাতার ভিশন ২০৩০ বাস্তবায়ন করছে, ভিশন ২০৩০’র অংশ হিসেবে এই বিনিয়োগ।
ভিশন ২০৩০ নির্ধারণে কাতার জ্ঞানভিত্তিক (নলেজ বেসড) অর্থনীতি রূপায়ণে পর্যটন খাতকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করেছে। এই ভিশনের আলোকে ২০৩০ সালের মধ্যে কাতার নিজেকে বিশ্বমানের পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত করার লক্ষ্যে এগিয়ে যাচ্ছে। ২০৩০সালের মধ্যে বার্ষিক ৭০লক্ষ বিদেশী পর্যটকের গন্তব্যস্থল হতে চায় কাতার। অর্থনীতিকে বহুমুখী করার লক্ষ্যে টেকসই খাত হিসেবে পর্যটনকে গুরুত্ব দিয়ে চলতি দশকেই দেশব্যাপী অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং পরিবেশগত সুবিধা সুপ্রতিষ্ঠিত ও নিশ্চিত করার লক্ষ্য বাস্তবায়িত হচ্ছে।
ক্রীড়া পর্যটনের বাজারে আধিপত্য সুপ্রতিষ্ঠিত করতে বহুদিন ধরেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তৎপর রয়েছে। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কৌশলগতভাবে বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগ করছে। কাতারে বিশ্বকাপের আয়োজন ওই বিশাল পরিকল্পনার অংশ। আগামী দিনে, হয় তো আগামী দশকের শেষভাগ হতেই ক্রীড়া পর্যটনে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিবে মধ্যপ্রাচ্য। ক্রীড়া পর্যটনের পাশপাশি আকর্ষণীয় ও প্রধানতম পর্যটন গন্তব্য হিসেবে মধ্যপ্রাচ্যকে গড়ে তোলার বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে।
কাতার বিশ্বকাপ শুধু বিশ্বের সবচে বড় ফুটবল প্রতিযোগিতা নয়, কাতার বিশ্বকাপ ঘিরে পর্যটনের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনৈতিক ও সামাজিক রূপ পরিবর্তনের আলাপে আগ্রহী হলে পর্যটনিয়ার সাথে থাকুন, পর্যটনিয়াকে সাথে রাখুন।