বাংলাদেশ : হালাল ট্যুরিজম তুমি কি মাকরুহ হইয়াছ!
Tweet
ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা ওআইসির পর্যটনমন্ত্রীদের দশম সম্মেলন অনুষ্ঠিয় হয়েছিলো ঢাকায়। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি ৫ হতে ৭ তারিখ পর্যন্ত তিন দিনব্যাপী সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ছিলো ‘পর্যটনের মাধ্যমে আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি।’
সম্মেলন শুরুর প্রাক্কালে এক সংবাদ সম্মেলনে তৎকালীন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল জানিয়েছিলেন, বাংলাদেশ ওআইসিভুক্ত দেশগুলোকে নিয়ে ‘হালাল ট্যুরিজম’কে উৎসাহিত করার উদ্যোগ গ্রহন করেছে। ইসলামি সহাযোগিতা সংস্থার পর্যটনমন্ত্রীদের দশম সম্মেলন সদস্য দেশগুলোতে পর্যটন শিল্পের বিকাশ ও প্রসারে একটি অভিন্ন প্লাটফর্ম তৈরিতে ভূমিকা পালন করবে। পারস্পরিক তথ্য বিনিময়, অভিজ্ঞতা শেয়ারিং ও সহযোগিতার মাধ্যমে পর্যটনের ক্ষেত্রে নতুন ভাবনা ও পদক্ষেপের সুযোগ সৃষ্টি হবে। পর্যটনমন্ত্রী আরও নিশ্চিত করেছিলেন, মুসলিম বিশ্বে নেতৃবৃন্দের সামনে আমাদের ইসলামিক ঐতিহ্য তুলে ধরতে আমরা প্রস্তুত।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওআইসি পর্যটনমন্ত্রীদের গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলনটি উদ্বোধন করেছিলেন। প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রসঙ্গ ও লক্ষ্যের অবতারণা করেন। ‘বিশ্বব্যাপী পর্যটন একটি দ্রুত বিকাশমান খাত, যা বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এখানে একসঙ্গে কাজ করার বড় সুযোগ ও সম্ভাবনা রয়েছে’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিকাশমান ইসলামিক অর্থনীতি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। সারা বিশ্বের মুসলমানরা ইসলামী অর্থনীতির নেতৃত্ব দিবে। ইসলামিক পণ্য ও সেবার বিশ্বব্যাপী বিশাল ভোক্তা থাকার কারণে হালাল পর্যটন, হালাল খাদ্য, হালাল ওষুধ এবং প্রসাধনী, হালাল পর্যটন ও হালাল বিনিয়োগসহ ইসলামিক অর্থনীতির বর্ধিঞ্চু খাতগুলোর উন্নয়নে ওআইসিভুক্ত দেশগুলোকে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সহযোগিতা ও অংশীদারত্ব আরও জোরদার করতে হবে।
প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের পর্যটন গন্তব্য ও সম্ভাবনার উল্লেখ করে বলেন, পর্যটনশিল্পকে এগিয়ে নিতে আমাদের দেশে সম্পদের অভাব নেই। সুদীর্ঘ মেরিন ড্রাইভসহ বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ ও নিরবচ্ছিন্ন সমুদ্রসৈকত কক্সবাজার, বিশ্বের সর্ববৃহৎ ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল এবং বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল সুন্দরবন, সাগরকন্যা কুয়াকাটা, দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে শত শত সবুজ চা-বাগানসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি আমাদের রয়েছে হাজার বছরের প্রাচীন ইতিহাস ও প্রত্নসমৃদ্ধ স্থানসমূহ এবং বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি যা হআন্তর্জাতিক পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় পর্যটন গন্তব্য হতে পারে।
ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা ওআইসির পর্যটনমন্ত্রীদের দশম সম্মেলন শেষে ঢাকা ঘোষণায় বলা হয়, ওআইসি আন্তঃসাংস্কৃতিক বিনিময়, সংরক্ষণ, সংরক্ষণ এবং ইসলামী পর্যটন এবং ইসলামী ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের জনপ্রিয়করণ, ভিন্ন সভ্যতার মধ্যে উন্নত জ্ঞান ও পারস্পরিক বোঝাপড়ার প্রচারের পাশাপাশি ইসলামের ভাবমূর্তিকে সামগ্রিকভাবে উন্নত করতে পর্যটনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে স্বীকৃতি প্রদান করে। ঢাকা ঘোষণায় বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি ছিলো, ওআইসিভুক্ত বিভিন্ন দেশের আবেদনের মধ্য হতে বাছাই ও বিবেচনা করে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাকে ২০১৯-২০২০ সালের জন্য ‘ওআইসি সিটি অব ট্যুরিজম’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।
ঢাকা ঘোষণা দুই বছর পর ২০১৯-এর ১১জুলাই বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় ‘ওআইসি সিটি অব ট্যুরিজম-২০১৯’ উদযাপন। হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে দুই দিনের অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, এ সময় ওআইসির অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মুসা কুলাকলিকায়াসহ ৩০টি ওআইসি সদস্য দেশের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। উদ্বোধনী বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইসলামী পর্যটনকে ‘বিশ্ব বাণিজ্য ব্র্যান্ড’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার আহ্বান জানান।
উদ্বোধনী অধিবেশনের পর বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড (বিটিবি) বিকেলে ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের জন্য ঢাকা শহরের ট্যুরের ব্যবস্থা করে। ওআইসি প্রতিনিধিদল পরদিন নারায়ণগঞ্জের প্রায় ৫০০ বছর পুরনো পানাম নগরী পরিদর্শন করে। দুই দিনব্যাপী উদযাপন অনুষ্ঠানের রাতে বিদেশি অতিথির জন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের পাশাপাশি স্বাগত ও বিদায়ি ভোজের আয়োজন করা হয়। এছাড়া বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীনে শুক্রবার রাতে হাতিরঝিলে কনসার্ট, লেজার শো এবং ফায়ারওয়ার্ক প্রদর্শন করা হয়।
ওআইসি সিটি অব ট্যুরিজম-২০১৯’ উদযাপন অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এম মাহবুব আলী জানান, ‘ওআইসি সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধিদের সামনে তাদের নিজ নিজ দেশে আমাদের পর্যটনকে তুলে ধরতে উৎসাহী করার জন্য আমরা ঢাকার সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ও মুসলিম ঐতিহ্য, বিশেষ করে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহ প্রদর্শন করব।’
ঢাকা’কে ওআইসি সিটি অব ট্যুরিজম হিসেবে ঘোষণার পর ওআইসিভূক্ত ৫৭টা দেশে ঢাকা কেন্দ্র করে সমগ্র বাংলাদেশকে ব্রান্ডিং করা যেত। প্রধানমন্ত্রী গুরুত্বের সাথে হালাল পর্যটনের কথা উল্লেখ করেছিলেন, বিশ্বের পর্যটন পিয়াসী মুসলিমদের কাছে হালাল পর্যটন গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশকে ব্রান্ডিংয়ের শুভ সূচনা করাও অসম্ভব ছিলো না। কিন্তু কিছুই হয়নি।
২০১৯ সালে বিশাল উদযাপন অনুষ্ঠান (এমন উদযাপন কতটা ফলপ্রসূ বা সাধারণ পর্যটকদের কতটা আকৃষ্ট করে ওই প্রশ্ন উহ্য রাখা হলো) ছাড়া সরকারের তরফ হতে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ ছিলো না। ২০২০সাল হতে করোনা ভাইরাসের কারণে সারা বিশ্বই স্তব্দ হয়েছিল। কিন্তু ২০২১সাল হতেই পর্যটন শিল্প ঘুরে দাঁড়াচ্ছে।
গত মাসে আজারবাইজানের বাকুতে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থা ওআইসির পর্যটনমন্ত্রীদের একাদশ সম্মেলন অনুষ্ঠিয় হয়েছে। টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে দারিদ্র বিমোচন কৌশল ও নীতিতে পর্যটন খাতের ভূমিকা উল্লেখ করে বাকু ঘোষণাতেও পর্যটন ও ইসলামিক পর্যটনকে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে পর্যটনসংশ্লিষ্ট ও দায়িত্বশীলদের কাছে হতে ইসলামিক পর্যটন আর হালাল পর্যটন প্রসঙ্গে কোনো আলোচনা নেই, উদ্যোগ নেই। অথচ এখনও ওআইসি সিটি অব ট্যুরিজম হিসেবে ঘোষিত ঢাকাকে কেন্দ্র করে দেশের পর্যটন শিল্পের নবযুগ ও নবধারার সূচনা করা সম্ভব।