বাষ্পীয় ইঞ্জিনে ভাপা পিঠা নির্মাণ কৌশল
Tweet
জেমস ওয়াট বাষ্পের শক্তি কাজে লাগিয়ে ইঞ্জিন আবিষ্কার করেছিলেন। জেমস ওয়াটের বহুকাল আগে বাঙালি বাষ্পের শক্তিকে পোষ মানিয়েছিল। সেই প্রাচীন কাল থেকে, যখন টোনা আর টুনি বাঘের সাথে কথা বলতে পারতো ওই সময় থেকেই বাঙালি শীতকালে বাষ্পের শক্তি কাজে লাগিয়ে ভাপা পিঠা বানায়। বাঙালির বর্ষা খিচুড়ি ছাড়া, শীত ভাপা পিঠা ছাড়া, বসন্ত প্রেম ছাড়া আর জাতীয় নির্বাচন কারচুপির বিতর্ক ছাড়া অপূর্ণ থেকে যায়।
ভাপা পিঠা বানাতে কোন কোন উপকরণ প্রয়োজন হয় তা আমরা টোনা-টুনির পিঠা বানানোর গল্পেই শিখেছি। তবু একটু মিলিয়ে নেই- চালের গুঁড়ো, খেজুরের পাটালি গুড়, কোরানো নারিকেল, সামান্য লবন, পিঠা বানানোর উপযুক্ত হাড়ি, বাটি, সুতি কাপড় আর আগুন মানে চুলা।
ভাপা পিঠা বানানো শেখার সময় প্রথমবার অল্প পরিমাণে পিঠা বানানো যাক। অল্প পরিমাণে পিঠা বানাতে যা যা লাগবে-
১. চালের গুঁড়ো – ৪ কাপ। (এখন বাজারে/সুপারশপে পিঠার জন্য চালের গুড়ো কিনতে পাওয়া যায়। টোনা-টুনির গল্পের আমলে দীর্ঘ সময় চাল ভিজিয়ে রাখা হত, চাল ভিজে সামান্য নরম হয়ে এলে বেটে গুঁড়ো করে নেওয়া হতো।)
২. নুন – পরিমানমতো। (প্রতি কাপের জন্য দুই চিমটি)
৩. খেজুর গুড় – ছোটো ১ বাটি। (ছোট ছোট টুকরো করে নিতে হবে, পুরো পিঠায় ছড়িয়ে দিতে আর ভাপে গলে যেতে সুবিধা হবে)
৪. কোরানো নারিকেল – ১ বাটি। (কোরানো নারিকেল বিক্রি এখনও শুরু হয়নি, তাই শীতের দিনে মৌসুমী ব্যবসা হিসেবে যে কেউ উদ্যোগ নিতে পারেন, কপিরাইট ফ্রি পরামর্শ।)
৫. পিঠা বানানোর জন্য একটা ছোট বাটি।
৬. পিঠা বানানোর পর রাখার জন্য একটা পাত্র।
৭. এক টুকরো সুতি কাপড় পানিতে ভিজিয়ে, ডুবিয়ে তারপর ভালো করে চিপড়ে পানি ফেলে দিয়ে প্রস্তুত রাখতে হবে। অবশ্য এ কাজটা পিঠা বানানোর ঠিক আগেও করা যায়।
উপকরণ প্রস্তুত, এবার পিঠা বানানো শুরু করা যাক। প্রথমে একটা বোলে (মিক্সিং বোল বললে ভালো শোনায়, প্লাস্টিকের বোলেও সমস্যা নেই) চালের গুড়ো ঢেলে নিয়ে তাতে আলতো ভাবে নেড়ে-চেড়ে লবন মিশিয়ে নিতে হবে। চালের গুঁড়ো অতিরিক্ত শুষ্ক থাকলে তাতে সামান্য পরিমাণ পানির ছিটা দিয়ে ভিজিয়ে নিতে হবে, শরীরে যেমন ময়েশ্চারাইজিং ক্রিম মাখা হয় সেভাবে। খেয়াল রাখতে হবে বেশী পরিমাণে পানি মিশালে চালের গুঁড়ো দলা পাকিয়ে যাবে, তখন ভাপা পিঠা বানানো যাবে না। অবশ্য ময়দার খামিরের মত বানিয়ে চালের রুটি বানানো যেতে পারে, সাথে মাংসের ঝোল। ওই রেসিপি আগামীতে দেওয়া হবে।
চালের গুঁড়োয় লবণ মিশিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করা যাক। অপেক্ষার সময়টুকু কাটাতে ফেসবুক বা ওয়েব সিরিয়ালে ব্যস্ত হলে পিঠা বানানোর কথা মনেই থাকবে না। এর চে ভালো একটা হাড়ি পানিতে ভর্তি করে চুলায় বসিয়ে দেওয়া যাক। হাড়ি বসানোর আগে চুলা জ্বালানোর কথা ভুলে গেলে চলবে না। একটা মাটির ঢাকনার গোল মাথাটা ভেঙে ঢাকনাটা উপর করে হাড়ির মুখে বসিয়ে দিতে হবে। পিঠা বানানোর ঢাকনা এখন বাজারে পাওয়া যায়। ঢাকনার চারপাশ (গোল ঢাকনার চারপাশ হয় কি করে! বলা উচিত দশদিক) ভালো করে দেখে নিতে হবে যাতে বাষ্প বের হওয়ার মত ফাঁক না থাকে। ফাঁক থাকলে ময়দা/আটা গুলে প্রলেপ দিতে হবে। এদিক সেদিক দিয়ে বাষ্প বের হওয়া চলবে না।
হাড়িতে পানি টগবগিয়ে ফুটে উঠলে যুদ্ধের জন্য মানে পিঠা বানানোর জন্য ‘রেডি… সেট.. গো’ বা ‘লাইট.. ক্যামেরা… একশন’ বলে আত্মবিশ্বাসের সাথে এগিয়ে যেতে হবে। পিঠা বানানোর বাটির অর্ধেকটা চালের গুঁড়ো দিয়ে ভরতে হবে। এর উপর গুড়ের টুকরো ছড়িয়ে দিতে হবে। গুড়োর টুকরো ছড়ানোর পর সামান্য চালের গুঁড়ো ছড়িয়ে দিয়ে কোরানো নারকেল ছড়িয়ে দিতে হবে। নারকেলের উপর চালের গুঁড়ো দিয়ে বাটির অবশিষ্ট অংশ ভরে দিতে হবে। এরপর ভিজা কাপড় দিয়ে কায়দা বাটির মুখটাকে ঢেকে মুড়িয়ে দিয়ে মাটির ঢাকনায় উপুর করে দিতে হবে। এরপর যা করার তা করবে জেমস ওয়াটের ভুত মানে বাষ্প। তিন থেকে চার মিনিটের মধ্যেই তৈরী হয়ে যাবে ভাপা পিঠা (সময়টা বাটির সাইজ আর বাষ্পের ক্ষমতার উপর নির্ভর করে। প্রথম পিঠা বাসানোর তিন থেকে চারমিনিট পর মুড়ানো কাপড় খুলে চেক করে নিতে হবে শক্ত হয়েছে কি না)।
একই নিয়মে পরবর্তী ভাপা পিঠাগুলো বানাতে হবে। পিঠা রাখার পাত্রে গুছিয়ে পিঠা পরিবেশন করা যেতে পারে। তবে শীতের রাতে বা ভোরে চুলার পাশে বসে গরম গরম ভাপা পিঠা খাওয়ার স্বাদই আলাদা। চুলোর পাশে বসে কিভাবে গরম গরম ভাপা পিঠা খেতে হয় তা শিখবার জন্য পর্যটনিয়ার ই-মেইলে দাওয়াত দেওয়া যেতে পারে। পর্যটনিয়ার লাইফস্টাইল বিভাগের কর্মীরা অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে দাওয়াত গ্রহন করে এবং যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ উদ্দীপনার সাথে দাওয়াতে উপস্থিত হয়।
টিপস:
ক. অতিরিক্ত স্বাদের জন্য ভাপা পিঠার চালের গুঁড়োর সাথে সামান্য পাউডার দুধ, মাওয়া, পেস্তা মেশানো যেতে পারে। তবে প্রথমে ভাপা পিঠা বানানো শিখতে হবে, তার পর নিজের টাকায় নিজের ভাপা পিঠায় ইচ্ছে মত মালমশলা যোগ করা যাবে।
খ. ঝামেলাহীনভাবে ভাপা পিঠা খেতে চাইলে পথের পাশের দোকান থেকে কিনতে পারেন। তাতে ভাপা পিঠার সাথে ভাপা পিঠায় বিভিন্ন জনের হাতের মায়াবী স্পর্শ, খাঁটি ধুলোবালি, তাজা সর্দি-ঠাণ্ডার কাশির ছিটা ফ্রি পাবেন। পিঠার ভিতর যদি কোনো পোকা সিদ্ধ অবস্থায় পেয়ে যান তবে অতিরিক্ত দাম দিতে হবে না।