আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পথে জম্মু ও কাশ্মীর
Tweet
জম্মু ও কাশ্মীরের (জে এবং কে) সাথে পুরো দেশের সম্পূর্ণ সংহতি নিশ্চিত করতে, ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করার এক বছর হয়ে গেছে। সেই থেকে জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণ অন্য যে কোনও ভারতীয় নাগরিকের মতো সমান অধিকার ভোগ করতে শুরু করছে। একক নাগরিকত্ব, শিশুদের জন্য শিক্ষার অধিকার, জম্মু ও কাশ্মীর তথ্য অধিকারের সম্প্রসারণ ইত্যাদি হলো এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের কয়েকটি মূল বিষয়। লক্ষ্যণীয় যে, জম্মু ও কাশ্মীর নির্মাণের ক্ষেত্রে এটি একটি নতুন বাস্তবতা, যা অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক অগ্রগতি এবং লিঙ্গভিত্তিক ন্যায়বিচার দ্বারা পরিচালিত। সন্ত্রাসীদের ভয় ও আতঙ্ক থেকে মুক্তির উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে এর ভবিষ্যত। সুতরাং এটি বলা ঠিক যে ৫ আগস্ট, একটি ঐতিহাসিক দিন, যেদিন আমরা জম্মু ও কাশ্মীরের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাধা দূর হতে দেখেছি।
গত এক বছরে, জম্মু ও কাশ্মীরে একটি ব্যাপক বিস্তৃত উন্নয়ন কর্মসূচি গৃহীত হয়েছে এবং তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জ্বালানি থেকে শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে উদ্যানতত্ত্ব, তথ্যপ্রযুক্তি অবকাঠামো, খেলাধুলা থেকে পর্যটন– জম্মু ও কাশ্মীর সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের সাক্ষী হয়েছে। রাজধানীর সাথে দ্রুতগামী রেল যোগাযোগসহ বিশাল অবকাঠামোগত প্রকল্প জম্মু ও কাশ্মীরে বাস্তবায়িত হয়েছে। ভারতীয় রেলওয়ে প্রত্যাশিত উধমপুর-শ্রীনগর-বারমুল্লা রেল লিঙ্ক (ইউএসবিআরএল) প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়ন করছে এবং এই প্রকল্পটি সমাপ্ত হলে তা জম্মু ও কাশ্মীরের জন্য একটি বিরাট পরিবর্তন আনতে পারে। জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাণবন্ত ফুলের চাষের সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বিশেষ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এই সময়ে দেশের তিন চতুর্থাংশ আপেলের উৎপাদন জম্মু ও কাশ্মীরে হয়েছে। তাঁত এবং হস্তশিল্প শিল্পের গুরুত্ব বিবেচনা করে, রাজ্যের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী কুটির শিল্প, হস্তশিল্পের প্রচারের উপর দৃষ্টি দেয়া হয়, জম্মু ও কাশ্মীর থেকে ৩৮ জন শীর্ষস্থানীয় কারুশিল্প রফতানিকারী ৪৯তম ভারতীয় হস্তশিল্প ও উপহার মেলার ভার্চুয়াল সংস্করণে অংশ নেন।
২০২০ সালের ১৪ জুলাই থেকে, জম্মু ও কাশ্মীর সরকার পর্যায়ক্রমে পর্যটন চালু করেছে। জম্মু ও কাশ্মীর ব্যাংক ডিজিটাল পেমেন্ট লেনদেনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ভারতের সমস্ত ব্যাংকের মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে। ১৩ হাজার ৬০০ কোটি রুপি (১৮০০ মিলিয়ন ডলার) মূল্যের ১৬৮টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। গত এক বছরে জামু ও কাশ্মীর প্রশাসন যুবকদের শিক্ষা, প্রশিক্ষণ ও চাকরির সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ মনোযোগ দিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ও ভূমি সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় অগ্রগতি করেছে। বিভিন্ন স্তরে তরুণদের জন্য ১০ হাজারটি নতুন কাজের সুযোগ; ৫০টি নতুন ডিগ্রি কলেজে মোট ২৫,০০০ আসন; ১ হাজার ৪০০ অতিরিক্ত মেডিকেল/প্যারামেডিকেল আসনসহ সাতটি নতুন মেডিকেল কলেজ পরিচালনা, পাঁচটি নতুন নার্সিং কলেজ এবং একটি রাষ্ট্রীয় ক্যান্সার ইনস্টিটিউটের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। এছাড়াও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখকে ভারতের একটি বড় পর্যটনে এলাকা হিসেবে প্রদর্শনের পরিকল্পনা নিয়ে রাস্তাঘাট ও সেতু সংস্কারসহ সামগ্রিক উন্নয়ন কার্যক্রম চলছে। লাদাখের লেহ বিমানবন্দরের সম্প্রসারণও কর্মসূচিতে রয়েছে এবং লাদাখকে কার্বন নিরপেক্ষ ইউনিয়ন অঞ্চল হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে।
জম্মু ও কাশ্মীরের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণে ভারত সরকার এই উপত্যকার উন্নয়নমূলক প্রক্রিয়া বেগবান করার দিকে মনোনিবেশ করার পরেও ভারতের বিরুদ্ধে সীমান্ত সন্ত্রাস উপত্যকার উন্নয়নকে প্রভাবিত করে চলেছে। জম্মু ও কাশ্মীরে জঙ্গিবাদ বিরোধী অভিযান আরও তীব্র করা হয়েছে এবং কেবল এ বছরই উপত্যকা জুড়ে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের শীর্ষ কমান্ডারসহ ১৩০ জনেরও বেশি সন্ত্রাসীকে নিষ্ক্রিয় করতে সক্ষম হয়েছে। জঙ্গিবাদ এখন পিছু হটেছে। বাহিনীগুলোর সুচারু ও সহজ চলাফেরার লক্ষ্যে সীমান্ত অঞ্চলের অবকাঠামোগত উন্নতির দিকে দ্রুত নজর দেওয়ার জন্যও উৎসাহ দেয়া হয়।
৩৭০ ধারাটি বাতিল করার ফলে জম্মু ও কাশ্মীর শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে চলমান রয়েছে। এ কথা বললে পুনরাবৃত্তি করা হয় যে, জম্মু ও কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল এবং তা অব্যাহত থাকবে। জাম্মু এবং কাশ্মীর সম্পর্কিত ইস্যুগুলো ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় এবং এই ক্ষেত্রে ভারতের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্মান দেখাতে হবে।