হোটেল রেস্তরার নিবন্ধন ও লাইসেন্স বাধ্যতামূলক
Tweet
পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন এবং পর্যটকের স্বার্থ রক্ষায় হোটেল, রিসোর্ট ও রেস্তরার নিবন্ধন এবং লাইসেন্স গ্রহণ প্রচলিত আইনে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
সকল হোটেল, রেস্তোরাঁ বা রিসোর্টের নিবন্ধনের দায়িত্বে রয়েছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ব্যবসা বাণিজ্য শাখা। ১-২ তারকামানের হোটেল ও রেস্তরার লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ জেলা প্রশাসন। ৩ বা তদূর্ধ্ব তারকামানের হোটেল ও রেস্তরার লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
হোটেল ও রেস্তরা আইন ২০১৪ অনুসারে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের অধীন তারকামানের হোটেল ও রিসোর্ট এবং জেলা প্রশাসনের অধীনে সাধারণ মানের হোটেলসমূহকে তিন বছরের জন্য লাইসেন্স নবায়নের দায়িত্ব পালন করছে।
পর্যটন মন্ত্রণালয়ের হোটেল ও রেস্তরা সেলের সহকারী নিয়ন্ত্রক আয়েশা হক বলেন, পর্যটক এবং হোটেল ও রিসোর্ট ব্যবসায়ীদের মধ্যকার দূরত্ব অবসান, সেবার মান নিশ্চিতকরণ এবং সর্বোপরি দ্রুত সম্প্রসারণশীল পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে সরকার আন্তরিকভাবে বিভিন্ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে। বাংলাদেশের জিডিপি’তে পর্যটন শিল্পের অবদানের লক্ষ্যমাত্রা ৬ভাগে উন্নীত করার লক্ষ্যে চলমান বিভিন্ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবেই হোটেল রিসোর্ট ও রেস্তোরাঁর শতভাগ (বাধ্যতামূলক) নিবন্ধন ও লাইসেন্সিং এর জন্য কাজ করছে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।
নিবন্ধন না করে হোটেল বা রিসোর্ট ব্যবসা করার ফলে একদিকে পর্যটকদের স্বার্থ ক্ষুন্নসহ বৈধ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে অন্যদিকে সরকার বিপুল রাজস্ব হারাচ্ছে উল্লেখ করে আয়েশা হক বলেন, নিবন্ধন ও লাইসেন্স গ্রহণ না করে হোটেল, রিসোর্ট, রেস্তরা বা সমমানের ব্যবসা পরিচালনা করা অবৈধ এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ২০১৪ এর ৭ ধারা অনুযায়ী হোটেল, মোটেল, রেস্তরা, রেস্ট হাউস, গেস্ট হাউস বা রিসোর্ট যে নামেই অবহিত হোক না কেন ব্যবসা পরিচালনার জন্য অবশ্যই বৈধ লাইসেন্স লাগবে।
তিনি আরও বলেন, নিবন্ধন ও লাইসেন্স প্রাপ্তির প্রচলিত বিধিমালা অনুযায়ী রেস্তরা বলতে ৩০ আসন বিশিষ্ট এবং হোটেল বলতে ১০টি শয়নকক্ষ বিশিষ্ট বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত প্রতিষ্ঠানকে বুঝাবে। বাংলাদেশ হোটেল ও রেস্তরা আইন ২০১৪ অনুযায়ী তিন বা তদূর্ধ্ব মানের হোটেল বা রিসোর্ট নির্মাণের আগে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় হতে হোটেল/রিসোর্ট নির্মাণের ছাড়পত্র এবং ব্যবসা পরিচালনার জন্য লাইসেন্স নিতে হবে।
তৌহিদুর রহমান বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যটন গন্তব্যে নিয়মিত ভ্রমণ করেন। ভ্রমণের দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় তিনি বলেন, বাংলাদেশের হোটেল ও রিসোর্ট ব্যবসায়ীদের একটা অংশের কাছে পর্যটকরা রীতিমত জিম্মি। এই ব্যবসায়ীরা নিজেদের ইচ্ছামত ভাড়া নির্ধারণ করলেও সেবার মান নিশ্চিত করেন না। ফলে পর্যটকরা প্রতারিত হয়। পর্যটন মৌসুমে আগে বুকিং করা রুম তারা অন্যের কাছে বেশী দামে বিক্রি করে দিয়েছে এমন অভিজ্ঞতা আমার মত অনেকেরই আছে। রেস্তরায় খাদ্যের মান ও দামের মধ্যে বিস্তর ফারাক। এসব অরাজকতা দূর হওয়া প্রয়োজন।
ভিশন ট্যুরস বিডির প্রধান নির্বাহী এবং পর্যটন বিষয়ক অনলাইন পর্যটনিয়া ডট কমের সম্পাদক আবু রায়হান সরকার বলেন, জেলা প্রশাসন আর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি হোটেল ও রিসোর্ট মালিকগণ এগিয়ে এলে শতভাগ লাইসেন্সিং এবং সেবার মানোন্নয়ন সম্ভব হবে।
আশা করা যায়, পর্যটন সংশ্লিষ্ট হোটেল-রিসোর্ট-রেস্তরার ক্ষেত্রে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ হোটেল ও রেস্তোরাঁ বিধিমালা ২০১৬ এবং সংশোধিত বিধিমালা ২০১৯ এর বিধিবিধান ও তফসিলসমূহের নির্দেশনাসমূহ সকলে মেনে চললে নিবন্ধন ও লাইসেন্স গ্রহণ প্রক্রিয়া আরও গতিশীল হবে। এছাড়া, হোটেল ও রিসোর্টের মান অনুযায়ী ভাড়া নির্ধারণ করে দিলে পর্যটকদের উপকার হবে।
অভিজ্ঞ ট্যুর অপারেটর ও হলিডেজ শিপিং লাইন্স এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফয়সাল সায়েম বলেন, নিবন্ধিত হোটেল ও রিসোর্টের হালনাগাদ তালিকা অনলাইনে সহজলভ্য করতে হবে। একই সাথে যেসব হোটেল, রিসোর্ট, পরিবহন সংস্থা ট্যুর অপারেটর হিসেবে নিবন্ধিত না হয়েও ট্যুর অপারেটর খাতে ব্যবসা করছে তাদের ক্ষেত্রেও সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
নিবন্ধন প্রক্রিয়া সহজ করতে হোটেল, রিসোর্ট ও রেস্তরার নিবন্ধন সংক্রান্ত ফরম অনলাইনে (নিবন্ধন ফরম) লিঙ্কে পাওয়া যাচ্ছে। নিবন্ধন সংক্রান্ত যে কোনো তথ্যের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের হোটেল ও রেস্তোরাঁ সেল, উপজেলা নির্বাহী অফিসার বা জেলা প্রশাসক এর কার্যালয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক)-এর সাথে যোগাযোগ করতে হবে।