পরিচিত হই পৃথিবীর সবচেয়ে ধীরগতির স্তন্যপায়ী প্রাণীর সাথে, স্লথ!
Tweet
জীবনের প্রায় ৯০ শতাংশ সময় এরা গাছের ডালে উল্টো হয়ে ঝুলে থেকে কাটিয়ে দেয়, আর এভাবে তারা চলতে পারে মিনিটে সর্বোচ্চ প্রায় ৪.৫ ফুট পর্যন্ত। স্লথ (Sloth) এর কথা বলছি, যাদের নামের অর্থই হলো আলস্য। এদের ওজনের মাত্র ২৫-৩০ শতাংশ হলো এদের পেশী, যা মানুষের ক্ষেত্রে ৪০-৪৫ শতাংশ।
স্লথের রয়েছে বিশেষ ধরণের হাত ও দীর্ঘ পা এবং বাঁকানো নখর, যা তাদের সহজে গাছের ডালে উল্টো ঝুলে থাকতে সাহায্য করে, কিন্তু একই সাথে, মাটিতে তারা হাঁটতে পারে না, যখন তারা মাটিতে থাকে অনেকটা হামাগুড়ি দিয়ে তারা নিজেদের টেনে নিয়ে চলে। তবে তারা খুব কমই মাটিতে নেমে আসে, আর এসময় তাদের গতি মিনিটে ১ ফুটের বেশি নয়।
তবে, সাঁতারের ক্ষেত্রে এরা বেশ দক্ষ। সাঁতারে তাদের গতি মিনিটে ১৩.৫ ফুট পর্যন্ত হতে পারে, যা গাছের ডালে কিংবা মাটিতে চলাচল থেকে অনেক বেশি। আর সাঁতারের ক্ষেত্রে তারা শ্বাস ধরে রাখতে পারে প্রায় ৪০ মিনিট পর্যন্ত, যেটা আশ্চর্যজনক।
হ্যাঁ, এরাই স্লথ, পৃথিবীর সবচেয়ে ধীরগতির স্তন্যপায়ী, মধ্য আর দক্ষিণ আমেরিকায় যাদে পাওয়া যায়। ২ ধরণের স্লথ রয়েছে। একটিকে বলা হয় দুই পদাঙ্গুলি স্লথ (Two Toed Sloth), অন্যটি তিন পদাঙ্গুলি স্লথ (Three Toed Sloth)। তবে, এদের পায়ের আঙ্গুলের দিকে তাকালে আপনি পার্থক্য করতে পারবেন না, কারণ উভয়েরই পায়ে আছে তিনটি করে আঙ্গুল, আপনাকে দেখতে হবে হাতের আঙ্গুলের দিকে।
স্লথদের বিপাকীয় হার একদমই কম। একারণে তারা শক্তি সঞ্চয় করতে বেশিরভাগ সময় স্থির থাকে। দিনে ১৫ ঘন্টা তারা স্থির থেকে কাটিয়ে দেয় এবং ঘুমিয়ে কাটায় ৮-৯ ঘন্টা, আমাদের কাছাকাছি। সারাদিনে তারা গড়ে ৪১ গজের বেশি নড়াচড়া করে না, যেটা একটা ফুটবল মাঠের অর্ধেকেরও কম।
স্বভাবে স্লথ তৃণভোজী। গাছের পাতা, পল্লব, কুঁড়ি খেয়ে বেঁচে থাকে। বিপাকীয় হার খুব কম হওয়ায় এরা অল্প খেয়েই টিকে থাকতে পারে। অন্য প্রাণীরা যে খাবার কয়েক ঘন্টার মধ্যে হজম করতে পারে, তা হজম করতে এদের কয়েকদিন লেগে যাবে।
জীবনের বেশিরভাগ সময় এরা গাছে সবুজের শামিয়ানায় কাটিয়ে দেয়। নিজেদের একটু মুক্ত করতে সপ্তাহে মাত্র একবার মাটিতে নেমে আসে। গাছে থাকাটা তাদের জন্য নিরাপদ, কেননা, জাগুয়ার বা ঈগল এরকম শিকারীদের থেকে গাছে তাদের সুরক্ষা হিসেবে কাজ করে। এছাড়া, কখনো আরো খাবার বা সঙ্গীর খোঁজে তারা মাটিতে নেমে আসে।
স্লথ এতটাই ধীর যে, এদের গায়ে শৈবাল জন্ম নিতে পারে। অবশ্য শৈবালের সাথে এদের মিথোজীবী সম্পর্ক আছে। স্লথের পশম আদ্র হওয়ায় শৈবাল এখানে পানি ও আবাস লাভ করে। অন্যদিকে, শৈবালের সবুজ বর্ণ স্লথকে প্রকাৃতিক ছদ্মবেশ দেয়। ফলে, তারা শিকারীদের চোখ এড়াতে পারে।
আমরা আমাদের মাথা উভয়দিক মিলিয়ে প্রায় ১৮০ ডিগ্রির মত ঘোরাতে পারি। কিন্তু স্লথ তাদের মাথা ২৭০ ডিগ্রি পর্যন্ত ঘোরাতে সক্ষম। তাই তারা চতুর্দিকে নজর রাখতে পারে।
স্লথ মায়েরা তাদের বাচ্চার প্রতি যত্নবান। জন্মের পর ৬ মাস তারা মায়ের সাথে লেগে থাকে। গাছের মধ্যে চলাচলের সময় তারা মায়ের পেট আঁকরে ধরে রাখে।
প্রশ্ন আসতে পারে, এরাই কি পৃথিবীর সবচেয়ে ধীরগতির প্রাণী? উত্তর হলো, না! এরা একটা কচ্ছপের চেয়ে ধীরগতির, কিন্তু শামুক এবং ক্ষুদ্র বিশেষ করে আণুবীক্ষণিক কিছু জীব এদের চেয়ে ধীর। তবে, যদি এদের আকারের সাথে তুলনা করেন, এরা আসলেই খুবই ধীরগতির প্রাণী এবং স্তন্যপায়ীদের মধ্যে আমরা এখন পর্যন্ত এর চেয়ে ধীর কোন প্রাণীর কথা জানি না।