সবার দৃষ্টি সর্বোচ্চ আদালতে
Tweet
বাংলাদেশের দৈনিক পত্রিকাগুলোর প্রথম পাতায় কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চলমান বিক্ষোভের নানা খবর উঠে এসেছে।
ইত্তেফাকের প্রথম পাতার খবর, ‘সবার দৃষ্টি সর্বোচ্চ আদালতে’। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ বিদ্যমান কোট পদ্ধতি পুনর্বহালের রায়ের বিরুদ্ধে সরকারের লিভ টু আপিলের ওপর রোববার শুনানি হবে।
খবরে বলা হয়েছে, শুনানিতে হাইকোর্টের রায় বাতিল চাওয়া হবে। প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির বেঞ্চে এই শুনানি হবে।
স্বাভাবিক সময়ে আপিল বিভাগের কাজ শুরু হয় সকাল সোয়া নয়টায়। কিন্তু কারফিউ জারি থাকায় আজ সকাল ১০টায় বসবে সুপ্রিম কোর্ট। চলবে বেলা একটা পর্যন্ত।
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লিভ টু আপিলের ওপর শুনানির দিন এগিয়ে আনা হয়েছে।
সরকারের আবেদনের প্রেক্ষিতে আপিল বিভাগের চেম্বার আদালত বৃহস্পতিবার এই দিন ধার্য করে।
কোটা মামলার শুনানিক কেন্দ্র করে দেশের মানুষের দৃষ্টি এখন সর্বোচ্চ আদালতের দিকে। এজন্য আদালত প্রাঙ্গনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
আজকের পত্রিকার প্রথম পাতার খবর, ‘কারফিউর মধ্যেও সংঘর্ষ’। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, প্রথম দিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ এরপর ছাত্রলীগের সঙ্গে যোগ দেয় পুলিশ।
ভাঙচুর-সংঘর্ষে টালমাটাল পরিস্থিতি সামলাতে পুলিশের সঙ্গে মাঠে নামে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-বিজিবি।
তাতেও পরিস্থিতি দিন দিন বেসামাল হয়ে পড়ছিল। সেই অবস্থায় জারি করা হয় কারফিউ। রাতারাতি মাঠে নামে সেনাবাহিনী। তারপরও বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীদের দমানো যাচ্ছে না।
পথে পথে সেনাসদস্যদের টহলের পরও শনিবার ঢাকার বিভিন্ন স্থানে এবং ঢাকার বাইরে কয়েক জায়গায় ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে।
ঢাকার বড় নগর ও জেলায় সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, গার্মেন্টস কারখানায় ভাঙচুরের পর আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা।
পিটিয়ে হত্যা করে ঘন্টার পর ঘন্টা আটকে রাখা হয় পুলিশের লাশ। এ অবস্থায় সরকারের উচ্চমহল নিরাপত্তার স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কঠোর হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
প্রয়োজনে যৌথ অভিযান চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বলা হয়।
প্রথম আলোর প্রথম পাতার খবর, ‘সংঘর্ষে শনিবারে নিহত ২৬ জন, চার দিনে ১৪৮’। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, শনিবার ঢাকা, ময়মনসিংহ, গাজীপুর, সাভার ও নরসিংদীতে বিক্ষোভ ও সংঘর্ষে ২৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।
এরমধ্যে ঢাকায় নিহত হয়েছেন ১৫ জন এবং ঢাকার বাইরে আরো ১১ জন।
ঢাকায় হতাহতের তথ্য পাওয়া গিয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে।
অন্যদিকে ঢাকার বাইরে ময়মনসিংহ ও সাভারে চার জন করে, গাজীপুরে দুই, নরসিংদীতে একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে।
শনিবার নিহতদের মধ্যে দুজন পুলিশ সদস্য ও কিশোর রয়েছে। সব মিলিয়ে গত মঙ্গলবার থেকে শনিবার পর্যন্ত চার দিনে ১৪৮ জন নিহতের তথ্য জানা গিয়েছে। নিহতের বেশিরভাগের শরীরে গুলির ক্ষতচিহ্ন ছিল।
দ্য ডেইলি স্টারের প্রথম পাতার খবর, ‘Curfew to stay in force until further notice’ অর্থাৎ, ‘পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত কারফিউ
চলবে’
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, সরকার চলমান কারফিউ এর সময়সীমা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কারফিউ রোববার সকাল ১০টায় শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখন তা পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত চলবে।
তবে কারফিউ বেলা তিনটা থেকে পাঁচটা পর্যন্ত দুই ঘণ্টার জন্য শিথিল থাকবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দেন। ধানমন্ডির বাসভবনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে বৈঠক শেষে তিনি এই সিদ্ধান্ত নেন।
বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে সরকার দেশব্যাপী কারফিউ জারি করে এবং বেসামরিক বাহিনীকে সহায়তার জন্য, জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং সাধারণ মানুষের জানমাল রক্ষায় সেনাবাহিনীকে নিয়োজিত করে।
জানা গিয়েছে, হাইকোর্টের এই রায় বাতিল চাইবে রাষ্ট্রপক্ষ।
কালের কণ্ঠের প্রথম পাতার খবর, ‘আজ ও কাল সরকারি ছুটি’। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, রোববার ও সোমবার সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় শনিবার এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, নির্বাহী আদেশে এই ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
সরকারের এই ঘোষণার আগে শুক্রবার মধ্যরাত থেকে সারা দেশে কারফিউ ও সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।
শনিবার বেলা ১২টা থেকে দুই ঘণ্টার জন্য কারফিউ শিথিল করা হয়। এরপর দ্বিতীয় দফায় শনিবার দুপুর ২টা থেকে কারফিউ শুরু হয়।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, স্বায়ত্বশাসিত, বেসরকারি পোশাক কারখানাসহ সব কলকারখানা বন্ধ থাকবে।
জরুরি পরিষেবা যেমন বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস ও অন্যান্য জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস ও বন্দরের কার্যক্রম, পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, ডাক সেবা এবং এ কাজে সংশ্লিষ্টনিয়োজিত যানবাহন ও কর্মীরা এই ছুটির আওতার বাইরে থাকবে।
রোববার ও সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। রোববার সারা দেশে পোশাক কারখানাও বন্ধ থাকবে।
নয়া দিগন্তের প্রথম পাতার খবর, ‘নজরুল ইসলাম খান, নিপুণ রায় ও নুর গ্রেফতার’।
প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায় ও গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক নুরুল হক নুরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার রাত ১টা ২৫ মিনিটে নজরুল ইসলাম খানকে তার বনানীর ডিওএইচএস এর বাসা থেকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ।
এরপর রাত ৩টার দিকে নুরুল হক নুরকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। তাকে মহানগর প্রজেক্টের নিজ বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী।
এদিকে, শনিবার বিকেল চারটার দিকে রায়েরবাড় বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় ঢাকা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নিপুণ রায়কে।
নজরুল ইসলাম খান, নিপুণ রায়, নুরুল হক নুর এবং এর আগে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে গ্রেফতাকের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিএনপি নেতারা।
বণিক বার্তার প্রধান শিরোনাম, ‘আন্তর্জাতিক বাণিজ্য থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন বাংলাদেশ’। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, ইন্টারনেট বন্ধের প্রভাবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ব্যবস্থা থেকে কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে বাংলাদেশ।
আমদানি রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি রুদ্ধ হয়ে পড়েছে দেশের রেমিটেন্স আসার পথও। বন্ধ রয়েছে সরকারের বন্দরকেন্দ্রীক রাজস্ব ও শুল্ক আহরণ কার্যক্রম।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের পাশাপাশি ভেঙে পড়তে শুরু করেছে দেশের অভ্যন্তরিণ অর্থ লেনদেন ব্যবস্থাও। ব্যাংক সূত্রমতে, দেশের ব্যাংকগুলোর আন্তর্জাতিক বাণিজ্য পুরোপুরি ইন্টারনেট নির্ভর। আমদানি ও রফতানির ঋণপত্র (এলসি) খোলার জন্য বিদেশি ব্যাংকগুলোর সাথে ই-মেইলসহ অন্যান্য মাধ্যমে যোগাযোগ করতে হয়।
কিন্তু ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় বিদেশি ব্যাংক ও ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। এ কারণে নতুন এলসি খোলা সম্ভব হচ্ছে না।
সমকালের প্রথম পাতার খবর, ‘নিত্যপণ্যের বাজারে আন্দোলনের উত্তাপ’। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের বড় প্রভাব পড়েছে নিত্যপণ্যের বাজারে।
চাল, ডাল, পেঁয়াজ, আলু, মুরগির ডিম, কাঁচা মরিচ, সবজিসহ বেশিরভাগ পণ্যের দরে আন্দোলনের আঁচ লেগেছে।
বাজারে খুব একটা ক্রেতা না থাকলেও নিত্যপণ্যের এমন বাড়তি দামে বিপদে পড়েছেন মানুষ। ব্যবসায়ীরা বলছেনম ছাত্র আন্দোলনের কারণে বিভিন্ন মহাসড়কে যান চলাচল প্রায় বন্ধ।
এ কারণে পণ্যবাহী কোন ট্রাক ঢুকতে পারছ নাঢাকায়। সরবরাহ প্রক্রিয়া একরকম বন্ধ থাকায় নিজেদের হাতে থাকা পণ্যের দর বাড়িয়েছেন অনেক বিক্রেতা।
বড় বাজারের চেয়ে পাড়া-মহল্লার দোকানে তুলনামূলক বেশি দাম দেখা গিয়েছে। দুই একদিনের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে পণ্য সংকটে পড়তে পারে বাজার।
যুগান্তরের প্রথম পাতার খবর, ‘অরক্ষিত নরসিংদী কারাগার এখন দর্শনীয় স্থান!’। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে, দুর্বৃত্তদের হামলার পর নরসিংদী জেলা কারাগার এখন অরক্ষিত।
শনিবার দিনভর এ কারগার ছিল স্থানীয় মানুষের দর্শনীয় স্থান। যে যেভাবে পেরেছে ভেতরে ঢুকে সেলফি তুলছে। কেউ আবার ঘুরে বেড়িয়েছে।
কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পরও জেলা বা পুলিশ প্রশাসনের কোন কর্মকর্তা সেখানে যাননি। এখন একজন কারারক্ষীও সেখানে নেই।
শনিবার বিপুল সংখ্যক মানুষ যে যেভাবে কারা অভ্যন্তরে ঢুকে লুটপাট করেছে।
এদিকে দুর্বৃত্তদের হামলার সময় বন্দিরা কারাগার থেকে হাসতে হাসতে বেরিয়ে গিয়েছেন। কোনরকম বাধা ছাড়াই বন্দিরা বিভিন্ন রোড ব্যবহার করে নির্বিঘ্নে নিজ নিজ গন্তব্যে চলে গিয়েছেন।
এ সময় সাজা প্রাপ্তদের পরনে ছিল জেলাখানার পোশাক। তাদের কেউ বাধা দেয়নি, পুলিশও কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। পুরো কারাগার এখন নরসিংদীবাসীর জন্য দর্শনীয় স্থান।
সুত্র : বিবিসি বাংলা