সুন্দরবনের সাতকাহনের প্রথম পর্ব
Tweet
বনের গল্প শোনার বা বলার মধ্যে আলাদা একটা রোমাঞ্চকর অনুভুতি আছে। বনের গল্প শুনতে কার না ভালো লাগে! কিন্তু পৃথিবীর তাবৎ বন নিয়ে গল্প বলা কী আর একদিনে সম্ভব? তারচেয়ে বরং আমরা আমাদের সবচেয়ে প্রিয় বনেরই গল্প শুনে আসি, কেমন? নিশ্চয়ই ধরে ফেলেছেন, কোন বনের গল্প বলব? হ্যাঁ, সুন্দরবনের গল্প। সুন্দরবন পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল।
বনের নাম কেন সুন্দরবন?
সুন্দরবনের নাম ‘সুন্দরবন’ হল কেন? তার আগে বলো, সুন্দর বনে সবচেয়ে বেশি কোন গাছ পাওয়া যায়? সুন্দরী গাছ। আর তার থেকেই মনে হয় বনটির নাম হয়েছে সুন্দরবন। তবে ভিন্নমতও আছে। অনেকে বলেন, আগে এই বনের নাম ছিল ‘সমুদ্রবন’। আর সেই নামটিই পরে হয়ে গেছে ‘সুন্দরবন’। আবার অনেকে বলেন, স্থানীয় আদিবাসীরা বনটিকে ডাকত ‘চন্দ্র-বান্ধে’ নামে। আর সেই নামটিই বিকৃত হতে হতে হয়ে গেছে ‘সুন্দরবন’। আপনাদের কি মনে হয়, কোন গল্পটা সত্যি? বেশিরভাগ মানুষ কিন্তু সুন্দরী গাছের গল্পকেই সত্যি বলে মানে।
সুন্দরবনে মানুষের ইতিহাস
মানুষের ইতিহাস বলতে আমরা যা বুঝি, সুন্দরবনের সেই ইতিহাসের শুরু হয়েছে মুঘল আমলে। সেই সময়েই, সম্ভবত ১২০৩ সালে প্রথম এক রাজা পুরো সুন্দরবনের ইজারা নেন। তখন থেকেই বনটি মুঘল রাজাদের অধীনে ছিল।
১৭৫৭ সালে বাংলার ইতিহাসে এক বড় পালাবদল ঘটে। হ্যাঁ, পলাশীর যুদ্ধে হেরে যান নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা। আর দুর্বল মুঘল সম্রাটের কাছ থেকে বাংলার ইজারা নিয়ে নেয় বৃটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। বাংলার সঙ্গে সঙ্গে তারা সুন্দরবনেরও ইজারা নেয়। আর ওরাই প্রথম সুন্দরবনের একটা মানচিত্র তৈরি করে।
বাংলা বৃটিশ সরকারের অধীনে চলে যায় কোন সালে বলেন তো? ১৮৫৬ সালে, সিপাহী বিদ্রোহের পরপর। ওদিকে সুন্দরবন কিন্তু আরও আগেই চলে গিয়েছিল বৃটিশ সরকারের অধীনে, ১৮২৮ সালে। আর তার পরের বছরই এল টি হজেস নামের এক বৃটিশ ভদ্রলোক বনটিতে প্রথম জরিপ চালান।
১৮৬০ সালে বাংলায় বন বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকেই বনটিকে বন বিভাগের দায়িত্বে দেয়া হয়। কিন্তু সুন্দরবনে বন বিভাগের পুরো কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হতে ১৮৬৯ সাল পর্যন্ত লেগে যায়। তখনও অবশ্য সুন্দরবনকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়নি। তাই বন বিভাগও ঠিকমতো দেখাশুনা করতে পারছিল না। পরে ১৮৭৮ সালে বনটিকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা দিলে পরের বছর থেকেই সুন্দরবন শুধুই বন বিভাগের অধীনে চলে যায়।
তবে সুন্দরবনে জরিপ করা সবসময়ই ছিল খুবই কঠিন। কেন জানেন তো? আরে, এই বনটা যে ভয়ানক সব জীবজন্তুতে পরিপূর্ণ। ওখানে বাঘ আছে, কুমির আছে, অজগর সাপ আছে। তারপরও আগে যে জরিপগুলো হয়েছিল, তাতে এই বনের সীমানা হিসেবে বলা হয়েছিল পশ্চিমে হুগলী নদী থেকে পুবে মেঘনা নদী পর্যন্ত। আর মোট আয়তন হিসেব করা হয়েছিল ১৬ হাজার ৯০২ বর্গকিমি। শুধু আমাদের দেশেরই না; এই ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ বছর ১৯৪৭ সাল। কারণ, সেই বছরে যে উপমহাদেশটিকেই ভাগ করা হলো; তা-ও কিনা ধর্মের ভিত্তিতে! সে যাই হোক, তখন বাংলা প্রদেশের হিন্দুপ্রধান অংশটা গেল ভারতের ভাগে। আর মুসলিমপ্রধান আমাদের অংশটা গেল পাকিস্তানের ভাগে। তাই সুন্দর এই বনটাও কাটা পড়লো। বড় অংশটা অবশ্য আমাদের ভাগেই এল; আমাদের ভাগে পড়লো ৬০%, ভারতের ভাগে পড়লো ৪০%।
One thought on “সুন্দরবনের সাতকাহনের প্রথম পর্ব”
-
Pingback: সুন্দরবনের সাতকাহন দ্বিতীয় পর্ব | পর্যটনিয়া
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.