শিশুর জন্য দুধ…
Tweet
জন্মের পর শিশুর প্রথম ও প্রধান খাবার হলো মায়ের বুকের দুধ। জন্মের পর থেকে ছয় মাস পর্যন্ত শিশু শুধু মায়ের বুকের দুধ থেকেই তার শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি পেয়ে থাকে। জন্মের পর শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে মায়ের দুধের কোনো বিকল্প নেই।
বয়স ছয় মাস হওয়ার পর শিশু মায়ের বুকের দুধের পাশাপাশি ঘরে তৈরি অন্য খাবার খেতে শুরু করে। শিশুর উপযুক্ত ঘরোয়া এসব খাবারের পাশাপাশি দুই বছর বয়স পর্যন্ত শিশুকে তার মায়ের বুকের দুধ চালিয়ে যেতে হয়। দুই বছর পর্যন্ত দুধের প্রয়োজনীয় পুষ্টি একটি শিশু তার মায়ের বুকের দুধ থেকে পেয়ে থাকে। শিশুর সঠিক বৃদ্ধির জন্য দুধ খুবই প্রয়োজনীয় একটি তরল খাবার।
শুধু দুধ তো খাওয়াই যায়, তবে শিশুরা অনেক সময় সরাসরি দুধ খেতে চায় না। তবে দুধের নানা রকম মজার খাবার তৈরি করা যায়। মজার স্বাদের পানীয়ও বানানো যায় দুধ দিয়ে। এসব খাবার শিশু আগ্রহ নিয়েই খেতে চায়। দুই বছর বয়সের পর স্বাভাবিক বাড়ির খাবারের পাশাপাশি শিশুকে তার দৈহিক চাহিদার ওপর ভিত্তি করে দুধ বা দুধের খাবার অবশ্যই গ্রহণ করতে হয়। দুধ আমিষ–জাতীয় একটি তরল। ক্যালসিয়ামের অনেক বড় একটি উৎস। শরীরের প্রয়োজনে সুষম খাবারের তালিকায় অবশ্যই দুধ বা দুধের খাবার শিশুদের জন্য জরুরি।
শিশুর জন্য দুধ অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ—
রোগ প্রতিরোধে: দুধ থেকে পর্যাপ্ত ভিটামিন ও খনিজ (মিনারেলস) পাওয়া যায়, যা শিশুদের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। নিয়মিত দুধ খেলে ভবিষ্যতে স্ট্রোক ও হৃদ্রোগ হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়।
সবল হাড় ও দাঁত: দুধ ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের ভালো উৎস। নিয়মিত দুধ খেলে হাড় তার প্রয়োজনীয় ক্যালসিয়াম পায়, যা শিশুর লম্বা হওয়ার জন্য সহায়ক। এ ছাড়া দুধ থেকে ফসফরাসও আসে। এই ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস মিলে দাঁত মজবুত করে। তবে দুধের ক্যালসিয়ামকে কাজে লাগাতে শিশুদের রোজ কিছু সময়ের জন্য রোদে যাওয়া জরুরি। সূর্য থেকে পাওয়া ভিটামিন ডি, শরীরে ক্যালসিয়ামকে কাজে লাগাতে সাহায্য করে। নিয়মিত শিশুরা দুধ খেলে ভবিষ্যতে অস্থিওপরেসিস হওয়ার ঝুঁকি অনেক কমে যায়।
উজ্জ্বল ত্বক: শিশুদের সুন্দর ও উজ্জ্বল ত্বকের জন্য দুধ অনেক দরকারি। নিয়মিত দুধ খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ে। ভাজাপোড়া খাবারের চেয়ে এক গ্লাস দুধ খেলে তা ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াবে। দুধের ল্যাকটিক অ্যাসিড ও ভিটামিন ত্বকের স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে।
মাংসপেশির সুরক্ষা: দুধের প্রোটিন মাংসপেশির সুরক্ষায় অবদান রাখে। প্রোটিনের পাশাপাশি দুধের মিনারেলস মাংসপেশির স্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে। শিশুরা খেলাধুলা করলে তাদের মাংসপেশির ক্ষয়রোধে দুধ বেশ কার্যকর উপাদান।
চাপ কমাতে: এক গ্লাস দুধ থেকে অনেক ভিটামিন, মিনারেল পাওয়া যায়, যা শক্তি জোগায় শিশুদের। এ ছাড়া ভালো ঘুম ও স্নায়ুর সুস্থতার জন্য দুধপান জরুরি।
মায়েদের জন্য
● শিশুরা অনেক সময় শুধু গ্লাসে দুধ খেতে চায় না। সেসব ক্ষেত্রে মায়েরা শিশুদের দুধের তৈরি খাবার খাওয়াতে পারেন। যেমন দুধ–ওটস বা দুধ সিরিয়ালের সঙ্গে একটু কলা বা খেজুর দিলে নাশতা হিসেবে তা খুবই ভালো হবে শিশুদের জন্য।
● দুধের তৈরি দইও শিশুদের জন্য অনেক ভালো। দইয়ের সঙ্গে কলা, চিড়া দিয়ে খেলে প্রোটিনের পাশাপাশি ভিটামিন ও কার্বহাইড্রেট পাওয়া যায়।
● কাস্টার্ড বা পুডিং অনেক শিশুই ভালোবাসে। কাস্টার্ডের সঙ্গে ফল থাকে। তাই দুধের কাস্টার্ড খেলে তা থেকে ফলের পুষ্টিও পাওয়া যায়। পুডিং তৈরিতে দুধের সঙ্গে ডিমও থাকে, ফলে যেসব শিশু ডিম–দুধ কিছুই খেতে চায় না, তাদের জন্য পুডিং খুবই পুষ্টিকর।
● দুধ–আম বা দুধ–কলার স্মুদি শিশুদের জন্য খুবই স্বাস্থ্যকর, বিশেষ করে যেসব শিশু খেলাধুলা করে। আর যারা লম্বা হতে চায়, তাদের জন্যও উপকারী।
● বাদাম–দুধ শিশুদের লম্বা হওয়ার ও মাংসপেশি বাড়াতে সাহায্য করে। দুধের সঙ্গে বাদাম ব্লেন্ড করে খেলে ভালো। মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষায় এটি সহায়ক।
● শিশুদের খাবার তৈরিতে মায়েরা যদি দুধ ব্যবহার করেন, তাতে খাবারের পুষ্টিমান উন্নত হয়। যেমন রুটি বানাতে পানির পরিবর্তে দুধ দেওয়া, মাংস রান্নায় দই ব্যবহার করা ইত্যাদি।
● দুধের স্বাদ বাড়াতে গোলাপজল, দারুচিনির গুঁড়া, সামান্য ১-২ চামচ আইসক্রিম মেশানো যেতে পারে।
দুধেই পুষ্টি—তাই দুধ বাদ দেওয়া যাবে না খাবার তালিকা থেকে। প্রতিদিন তাই আপনার শিশুর পুষ্টির প্রয়োজনে দুধ বা দুধের খাবার রাখুন মেন্যুেত