গরুর মাংসের হরেক পদ
Tweet
ঘরে যখন মাংসের পরিমাণ বেশি তখন না হয় রান্না হোক নানান রকমের পদ। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত রেসিপির মিশ্রণ নিয়েই এই আয়োজন।
গরুর মাংসের শুঁটকি ভুনা
মাংস, শুটকি এবং ভুনা- এক ব্যঞ্জনে তিন পদের স্বাদ। তৈরি করুন রন্ধনশিল্পী ডা. ফারহানা ইফতেখারের রেসিপিতে।
শুটকি বানানোর পদ্ধতি
হাড় ছাড়া মাংস মাঝারি করে টুকরা করে নিন। ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে হলুদ আর লবণ দিয়ে ভালো করে মেখে নিন। এরপর লম্বা তার অথবা সুতাতে বড় সুই দিয়ে মাংসের টুকরাগুলো গেঁথে খুব কড়া রোদে দুই থেতে তিনদিন শুকাতে হবে। শুকিয়ে গেলে পলিথিনে ঢুকিয়ে ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন।
* হলুদ আর লবণ প্রিজারভেটিভ হিসেবে কাজ করে। তাই আলাদাভাবে সিদ্ধ করার প্রয়োজন নেই।
উপকরণ: গরুর মাংসের শুঁটকি ২ কাপ। পেঁয়াজ কুচি আধা কাপ। এলাচ ৪টি। দারুচিনি ৪ টুকরা। তেজপাতা ২টি। হলুদ-গুঁড়া ১ চা-চামচ। মরিচগুঁড়া ২ চা-চামচ। জিরা ও ধনে গুঁড়া ১ চা-চামচ করে। আদা-বাটা ১ চা-চামচ। রসুন-বাটা ১ চা-চামচ। তেল পরিমাণ মতো। লবণ পরিমাণ মতো।
মাংস ভাজার জন্যে লাগবে: পেঁয়াজ চৌকো বা পাতলা করে কাটা ৫,৬টি। কাঁচামরিচ ৫,৬টি। ১টি আস্ত রসুনের কোঁয়া। গরম মসলাগুঁড়া ১ চা-চামচ। তেল প্রয়োজন মতো।
পদ্ধতি: শুটকি গরম পানিতে ধুয়ে প্রেসার কুকারে সামান্য পানি দিয়ে চুলায় বসিয়ে দিন। ১০,১২টি সিঁটি দিলে নামিয়ে চালনিতে পানি ঝরিয়ে নিন।
চাইলে পানির স্টকটা ব্যবহার করতে পারেন নতুবা ফেলে দিন।
একটা প্যানে তেল গরম করে গরম মসলাগুলো দিয়ে গন্ধ ছড়ানো পর্যন্ত ভেজে নিন। পেঁয়াজ কুচি দিয়ে আরও কিছুক্ষণ ভেজে সব মসলা দিয়ে কষিয়ে নিন।
শুটকি দিয়ে ভালো করে কষিয়ে ১ কাপ পানি দিতে পারেন অথবা স্টক দিয়ে ঢেকে দিন।
পানি শুকিয়ে তেল উপরে ভেসে উঠলে নামিয়ে নিন।
ভাজা: অন্য একটি প্যানে তেল গরম করে কিছুক্ষণ পেঁয়াজ ও রসুনের কোঁয়া এবং কাঁচামরিচ দিয়ে একটু ভেজে তারপর মাংস এবং গরম মসলার গুঁড়া দিয়ে একটু ভেজে নিন।
পেঁয়াজ রসুন নরম হয়ে আসলে লবণ চেখে আর একটু নেড়েচেড়ে নামিয়ে ফেলতে হবে।
ব্যাস তৈরি হয়ে গেল দারুণ মজাদার গরুর মাংসের শুটকি ভুনা।
কাঁচাকাঠাল দিয়ে গরুর মাংস
মৌসুমি ফল দিয়ে মজার তরকারি তৈরি করুন রন্ধনশিল্পী ফারহিন রহমানের রেসিপিতে।
উপকরণ: গরুর মাংস আধা কেজি। কাঁচাকাঠাল ৭৫০ গ্রাম (টুকরা করে কেটে নেওয়া)। পেঁয়াজকুচি আধা কাপ কাপ। পেঁয়াজবাটা আধা কাপ। আদাবাটা আড়াই টেবিল-চামচ। রসুনবাটা ২ টেবিল-চামচ। মরিচগুঁড়া ২ চা-চামচ বা স্বাদ মতো। হলুদগুঁড়া ১ চা-চামচ। ধনে ও জিরার গুঁড়া ১ চা-চামচ। ভাজাজিরার গুঁড়া ১ চা-চামচ। সাদা এলাচ ৩,৪টি। কালোএলাচ ১টি। দারুচিনি ২টি। গোলমরিচ ৫,৬টি। তেজপাতা ১,২টি। লবঙ্গ ৩,৪টি। গরম মসলার গুঁড়া আধা চা-চামচ। লবণ স্বাদ মতো। তেল পরিমাণ মতো। আস্ত কাঁচামরিচ ৭,৮টি।
পদ্ধতি: প্যানে তেল গরম করে পেঁয়াজকুচি দিয়ে ভেজে কাঁচামরিচ ও ভাজাজিরার গুঁড়া বাদে একে একে আস্ত মসলা, বাটামসলা, গুঁড়া মসলা ও লবণ দিয়ে একটু কষিয়ে মাংস দিয়ে দিন।
ভালো মতো কষিয়ে পরিমাণ মতো পানি দিয়ে রান্না করতে হবে। মাংস সিদ্ধ হয়ে এলে কাঁচাকাঠাল ও আধা চা-চামচ ভাজাজিরার গুঁড়া দিয়ে নেড়েচেড়ে কাঁঠাল সিদ্ধ হওয়া পর্যন্ত ঢেকে দিয়ে রান্না করুন।
রান্না শেষে কাঁচামরিচ ও বাকি ভাজাজিরার গুঁড়া দিয়ে নামিয়ে নিন।
মাংস ঝুরি
রান্না করা মাংস খাওয়ার পর বেঁচে গিয়েছে! তাহলে রন্ধনশিল্পী আনার সোহেলের রেসিপিতে তৈরি করে নিন এই মজাদার পদ।
উপকরণ: মসলা ছাড়া ভুনা মাংস ১ কাপ (থেতলে নেওয়া)। শুকনা মরিচ ৪ টি (সরিষার তেলে ভেজে নিতে হবে)। পেঁয়াজকুচি বড় ১টি। লবণ স্বাদ মতো। ধনেপাতা-কুচি ১ মুঠো। সরিষার তেল ১ টেবিল-চামচ।
পদ্ধতি: কাবাব দিয়েও করা যায় এটা।
প্রথমে মাংস হাত দিয়ে ঝুরি করে নিন। এবার একটি বাটিতে পেঁয়াজ কুচি, শুকনা টালা বা ভাজা মরিচ ভেঙে নিন এবং ধনেপাতা, লবণ দিয়ে ভালো করে মাখান।
সঙ্গে মাংসের ঝুরি মিশিয়ে সরিষার তেল দিয়ে মাখান। ব্যস হয়ে গেল মজাদার মাংসের ভর্তা।
গরম ভাত কিংবা পরোটার সঙ্গে পরিবেশন করুন।
গরুর মাংস
নানী বা দাদীর কাছ থেকে রান্না শেখার সৌভাগ্য সবার হয় না। আগের দিনে নানী-দাদীরা খুব সহজে মজাদার সব রান্না করতেন। সেরকমই একটি রান্নার রেসিপি দিয়েছেন রন্ধন শিল্পি শাহনাজ শিমুল। যা তার নানীর কাছ থেকে পাওয়া।
উপকরণ: বড় টুকরা করা গরুর মাংস ১ কেজি। পেঁয়াজ মোটাকুচি ১ কাপ। টমেটো ২টি। তেজপাতা ১টি। দারুচিনি ২টি। এলাচ ৬/৭টি। কালোএলাচ ১টি। আদাবাটা ২ চা-চামচ। রসুনবাটা ৩ চা-চামচ। ধনেগুঁড়া ২ চা-চামচ। জিরাগুঁড়া ২ চা-চামচ। গরমমসলার-গুঁড়া ৩ চা-চামচ। মরিচগুঁড়া ২ চা-চামচ। হলুদগুঁড়া আধা চা-চামচ। লবণ পরিমাণ মতো। বড় আলু দুই টুকরা করা ৫টি। আস্ত রসুন ১টি। গরম পানি ৪/৫ কাপ। জলপাইতেল আধা কাপ।
পদ্ধতি: বড় পাতিলে তেল দিয়ে দারুচিনি, এলাচ, কালোএলাচ দিয়ে দুই মিনিট ভাজুন। পেঁয়াজকুচি দিন। আরও তিন থেকে চার মিনিট ভাজুন।
এবার মাংসের টুকরাগুলো দিয়ে ভালোভাবে নাড়তে থাকুন। একে একে সব মসলা আর টমেটো দিয়ে দিন। সবকিছু তিন থেকে চার মিনিটের মতো ভাজুন। এবার গরম পানি দিন যাতে মাংস ডুবে থাকে।
আস্ত রসুন দিয়ে অল্প আঁচে এক ঘণ্টা রান্না করুন।
তারপর আলু দিয়ে মাঝারি আঁচে আরও ১৫ মিনিট রান্না করুন। পুরোটা সময় ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখবেন। লবণ চেখে দেখুন। রান্না হয়ে গেলে নামিয়ে ফেলুন।
খিচুরি বা গরম ভাতের সঙ্গে জমবে বেশ। তাছাড়া আস্ত রসুনটি ভাতের সঙ্গে মাখিয়ে খেতে দারুণ লাগে।
গরুর মাংসের খিচুড়ি
পেট ও মন দুটোই ভরবে। রেসিপি দিয়েছেন সাইমা সৈয়দ।
উপকরণ: গরুর মাংস ১ কেজি। আদাবাটা ১ টেবিল-চামচ। পোলাওয়ের চাল ৪ কাপ। রসুনবাটা ২ চা-চামচ। মুগ ডাল ১ কাপ। মসুর ডাল ১ কাপ। পেঁয়াজবাটা ৪ টেবিল-চামচ। গরমমসলার গুঁড়া ২ চা-চামচ। ধনেবাটা ১ চা-চামচ। এলাচ ৪টি। পানি ১০ কাপ। দারুচিনি ৪-৫টি। কাঁচামরিচ ৬-৭টি। লবণ স্বাদমতো। তেল পরিমাণ মতো।
পদ্ধতি: চাল ও ডাল ধুয়ে আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। মাংসে তেল ছাড়া বাকি সব উপকরণ দিয়ে মাখাতে হবে।
হাঁড়িতে তেল গরম করে মসলা মাখানো মাংস দিয়ে দিন। ভালোমতো কষিয়ে ৩ কাপ পানি দিয়ে সিদ্ধ হতে দিন।
মসলা থেকে মাংস তুলে অন্য পাত্রে রাখুন। মসলায় পানি ঝরানো চাল ও ডাল কষিয়ে ১০ কাপ পানি দিয়ে ঢেকে দিন। পানি শুকিয়ে আসলে কাঁচামরিচ ও মাংস দিয়ে নেড়ে দমে রাখুন।
হয়ে গেলে সালাদ বা আচার দিয়ে পরিবেশন করুন।
বেগুন দিয়ে গরুর মাংস
খুব মজার একটা পদ। ফারাহ তানজীন সুবর্ণার রেসিপি দেখে রান্না করে খেয়ে দেখুন একবার।
উপকরণ: গরুর মাংস ১ কেজি (ছোট করে টুকরা করা)। বেগুন ২৫০ গ্রাম (কিউব করে কাটা)। পেঁয়াজ ১টি (বড় কুচি করে কাটা)। মরিচগুঁড়া ১ চা-চামচ (ঝাল কম-বেশি স্বাদমতো। তবে এটা ঝালই ভালোলাগে)। হলুদগুঁড়া ২-৩ চা-চামচ। জিরাগুঁড়া ২ চা-চামচ। ধনেগুঁড়া ১ চা-চামচ। আদাবাটা দেড় টেবিল-চামচ। রসুনবাটা আধা চা-চামচ। লবণ স্বাদমতো। আস্ত গরম মসলা, এলাচ, দারুচিনি, লবঙ্গ প্রতিটি ৩টি করে। গরমমসলার-গুঁড়া ১/৩ চা-চামচ। তেজপাতা ৩-৪টি। কাঁচামরিচ ৬-৭টি (আস্ত)। তেল আধা কাপ।
পদ্ধতি: প্যানে তেল গরম করে তেজপাতা আর গরম মসলার ফোঁড়ন দিয়ে পেঁয়াজ ছেড়ে দিন। সোনালি করে ভেজে নিয়ে মরিচগুঁড়া, হলুদগুঁড়া দিয়ে দিন। কিছুক্ষণ নাড়ুন। তারপর আদা-রসুনবাটা দিয়ে একটু ভেজে নিয়ে জিরা আর ধনেগুঁড়া দিয়ে দিন।
চুলার আঁচ কমিয়ে কিছুক্ষণ ভাজুন। তারপর ছোট করে কেটে রাখা মাংস আর লবণ দিয়ে ভালো করে কষিয়ে নিন। মাংসের গায়ে পানি না শুকানো পর্যন্ত কষাতে থাকুন। তারপর অল্প করে গরম পানি দিয়ে ঢেকে দিন।
পানি কমে গেলে আরও একবার কষিয়ে নিন। তারপর মাংস সিদ্ধ হওয়ার জন্য প্রয়োজনমতো গরম পানি দিয়ে ঢেকে দিন।
মাংস সিদ্ধ হতে হতেই অন্য একটি প্যানে তেল গরম করে লবণ-হলুদ মাখা কিউব করে কাটা বেগুনগুলো ধাপে ধাপে দিয়ে হালকা করে ভেজে তুলে রাখুন। মাংস সিদ্ধ হয়ে পানি (ঝোল) প্রায় শুকিয়ে এলে ভেজে রাখা বেগুনগুলো মাংসের উপরে বিছিয়ে দিন। সঙ্গে আস্ত কাঁচামরিচ আর গরম মসলারগুঁড়া ছড়িয়ে দিয়ে ঢেকে দমে রাখুন।
চুলার আঁচ এ সময় অবশ্যই কমিয়ে দেবেন। কোনো অবস্থাতেই জোরে জোরে নেড়ে বেগুনের হাল বেহাল করবেন না। নাড়তে হলে খুব যত্নের সঙ্গে হালকা হাতে নাড়ুন।
মিনিট দশেক পর ঢাকনা সরিয়ে বেগুন সিদ্ধ হয়েছে কিনা দেখে নিন। তেল উপরে উঠে মাখামাখা হয়ে থাকলে নামিয়ে নিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
গরুর মগজভুনা
রেসিপি দিয়েছেন সামিয়া রহমান।
উপকরণ: গরুর মগজ আধা কেজি। পেঁয়াকুচি আধা কাপ। তেজপাতা ২টি। আদাপেস্ট ২ চা-চামচ। রসুনপেস্ট ১ চা-চামচ। মরিচ ২-৩টি। হলুদগুঁড়া আধা চা–চামচ। ধনেগুঁড়া আধা চা-চামচ। মসলাগুঁড়া আধা চা-চামচ। দারুচিনি ২টি। এলাচ ২টি। লবণ স্বাদমতো। তেল আধা কাপের একটু কম।
পদ্ধতি: সঠিকভাবে মগজ ধুয়ে নিন এবং হাত দিয়ে মাখিয়ে নিন। একটি কড়াইয়ের মধ্যে তেল গরম করে এলাচ, দারুচিনি, তেজপাতা এবং পেঁয়াজ দিন। পেঁয়াজ বাদামি হলে গরমমসলার গুঁড়া ছাড়া সব মসলা, লবণ দিয়ে আধা কাপ পানি দিয়ে ৫ মিনিট কষাণ। তারপর মগজ দিয়ে মসলার সঙ্গে মিশিয়ে ঘনঘন নাড়তে থাকুন। সামান্য পানি দিয়ে কম তাপে ১০ মিনিট রান্না করুন।
গরমমসলা দিয়ে আরও দুই মিনিট রান্না করুন। গরম গরম পরিবেশন করুন।
* ভালোভাবে গরুর মগজ পরিষ্কার করতে ভুলবেন না।