নির্বাচনের প্রভাবে পর্যটকশূন্য কক্সবাজার ও সিলেট
Tweet
থার্টিফার্স্ট নাইট ও খ্রিস্টীয় নববর্ষবরণ উদযাপন করতে প্রতি বছরই কক্সবাজার ও সিলেটে পর্যটকের ঢল নামে। কিন্তু এবার দুই পর্যটনগন্ত্যবই ছিল পর্যটক শূন্য। অধিকাংশ হোটেল-মোটেল ও রিসোর্টগুলো একদম ফাঁকা পড়ে ছিল।
পর্যটন বাণিজ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সংসদ নির্বাচনের কারণে এবার পর্যটক শূন্য। নির্বাচন ও নির্বাচনোত্তর সংহিসতার আশঙ্কায় কেউই দূরে কোথাও যেতে চাননি। ফলে এবার পর্যটন খাতের উদ্যোক্তারা ব্যাপক ব্যবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়ছেন। সেই সঙ্গে ২০১৫ সালের অবরোধকালীন পরিস্থিতির মতো এবারো জৌলুসহীন থাকছে ইংরেজি নববর্ষ।
কক্সবাজার শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে পেঁচারদ্বীপ ‘মারমেইড বিচ রিসোর্ট’ ইকোপল্লীতে অধিকাংশ অতিথি থাকে বিদেশী পর্যটক। কিন্তু সেই রিসোর্ট এখন একেবারে ফাঁকা। কক্সবাজারের অন্যান্য হোটেল-মোটেল-গেস্টহাউজগুলোতে একই অবস্থা চলছে। ডিসেম্বরে যেখানে পুরো মাসই সমুদ্রসৈকতে মানুষে ভরপুর থাকে, সেখানে এবার শূন্য খাঁ-খাঁ। সৈকত ও শহরতলির ২৫০ হোটেল-মোটেল ফাঁকা পড়ে আছে।
কক্সবাজার ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এসএম কিবরিয়াহ বলেন, নির্বাচনী সহিংসতার আশঙ্কায় কক্সবাজারে পর্যটক নেই বললেই চলে। হোটেল-মোটেলগুলোও ফাঁকা। অথচ গত বছরের ডিসেম্বরের এ সময়ে ২০-৩০ লাখ পর্যটক কক্সবাজার ভ্রমণ করেছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন বলেন, নির্বাচন ও নির্বাচন-পরবর্তী নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয়, সে কারণে থার্টিফার্স্ট নাইটে ইনডোর ও সমুদ্রসৈকতে যেকোনো ধররনের অনুষ্ঠান উদযাপন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে তারা আশা করছেন, জানুয়ারি থেকে বিপুল পরিমাণ পর্যটকের সমাগম হবে। এসব পর্যটকের নিরাপত্তা দিতে আগাম প্রস্তুতিও তারা নিচ্ছেন।
অন্যদিকে প্রতি বছর সিলেটের বড় বড় হোটেলে থার্টিফার্স্ট নাইট ও বর্ষবরণের বিভিন্ন আয়োজন করা হলেও এবার পর্যটক না থাকায় কোনো আয়োজন করা হয়নি। জাফলং, রাতারগুল ও বিছনাকান্দিসহ সিলেটের সব পর্যটন কেন্দ্র এখন ফাঁকা। পর্যটন খাতের সংশ্লিষ্টরা জানান, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই সিলেটে পর্যটক সমাগম কমতে থাকে। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে শূন্যের কোটায় নেমে যায়।
সিলেট নগরীতে তিন শতাধিক হোটেল, মোটেল ও রিসোর্ট রয়েছে। বিভিন্ন উপলক্ষ আর দীর্ঘ ছুটিতে এসব হোটেল-মোটেলে রুম পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। অথচ এবারের চিত্রটা পুরো উল্টো। সিলেট নগরীর জিন্দাবাজার এলাকার হোটেল গোল্ডেন সিটির ব্যবস্থাপক মিষ্ঠু দত্ত বলেন, খ্রিস্টীয় নতুন বছরের শুরুতে হোটেলে পর্যটকদের ভিড় লেগে থাকে। পর্যটকরা ডিসেম্বরের শুরু থেকেই বুকিং শুরু করেন। কিন্তু এবার হোটেল একেবারে ফাঁকা।
পর্যটন করপোরেশনের মালিকানাধীন সিলেট পর্যটন মোটেলের ব্যবস্থাপক কাজী ইশতিয়াক আহমদ মনে করেন, নির্বাচনের কারণেই মানুষ এবার ঘুরতে বের হননি।
সিলেট হোটেল অ্যান্ড গেস্টহাউজ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক তাহমিন আহমদ বলেন, পর্যটন খাতের ব্যবসা মূলত বিভিন্ন উপলক্ষকেন্দ্রিক। এর জন্য বছর ধরে অপেক্ষায় থাকেন ব্যবসায়ীরা। নানা পরিকল্পনা করেন। কিন্তু এবার সব ভেস্তে গেল। সব হোটেল-রিসোর্ট প্রায় ফাঁকা। তিনি মনে করেন, নির্বাচন উপলক্ষে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়াকড়ির কারণেই এ অবস্থা।
এছাড়াও সিলেটের মতো দেশের অন্যতম পর্যটন স্থান মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গলেরও একই অবস্থা। শ্রীমঙ্গলের গ্রীন লিফ গেস্টহাউজের স্বত্বাধিকারী এসকে দাশ সুমন জানান, প্রতি বছর থার্টিফার্স্ট নাইট উপলক্ষে এ সময়ে শহরের শতাধিক হোটেলে কোনো কক্ষ খালি পাওয়া যেত না। আর এখন কোনো কক্ষেই অতিথি নেই। গত ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত কিছু পর্যটক ছিল। এখন কোন পর্যটক নেই।