সংস্কারহীন ঐতিহাসিক নয়াবাদ মসজিদ
Tweet
নয়াবাদ মসজিদটি বাংলাদেশের দিনাজপুর শহর হতে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে কাহারোল উপজেলার নয়াবাদ গ্রামে অবস্থিত। মসজিদটির পাশ দিয়ে চলে গেছে ঢেপা নদী। এই মসজিদটি ১.১৫ বিঘা জমির উপর তৈরি করা হয়েছে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের যেসব ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন ও স্থাপনা বাঙালির ইতিহাস-ঐতিহ্য ও ধর্মীয় মূল্যবোধ সমুন্নত রেখেছে, এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার নয়াবাদ মসজিদ। প্রচীন এ মসজিদটির স্থাপত্যকলাও শিল্পসৌকর্য নিয়ে এ অঞ্চলে আজও আলো ছড়াচ্ছে।
এই মসজিদটির পূর্ব দেয়ালের প্রবেশদ্বারের ওপর ১২/৯ ইঞ্চি আয়তাকার একখণ্ড মসৃন প্রস্তরের শিলালিপি রয়েছে। সেখানে প্রাচীন ফার্সি অক্ষরে কিছু কথালেখা রয়েছে। কিন্তু কিছু কিছু জায়গায় অক্ষরগুলো অস্পষ্ট হওয়ায় মসজিদের নির্মাণকাল নিয়ে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়না।
কথিত আছে, দিনাজপুরের মহারাজা প্রাণনাথ ১৭০৪ খ্রিস্টাব্দ ঐতিহাসিক কান্তজির মন্দির নির্মাণের জন্য পারস্য থেকে কিছু স্থপতি ও নির্মাণশিল্পী নিয়ে এসেছিলেন। প্রায় দীর্ঘ ৪৮ বছর মন্দিরের নির্মাণ কাজ অব্যাহত থাকে। আর নির্মাণশিল্পী ও শ্রমিকরা ছিলো মুসলমান ধর্মের অনুসারী। তারা মহারাজার অনুমতি নিয়ে কান্তজীর মন্দিরের ১কিলোমিটার দূরে নয়াবাদ নামক স্থানে বর্তমানের মসজিদটি নির্মাণ করেন এবং তারা মসজিদের পাশেই বসবাস শুরু করেন। সেই থেকে এ গ্রাম পরিচিতি পায় নয়াবাদ মিস্ত্রী পাড়া নামে। নয়াবাদ মসজিদটির দৈর্ঘ্য ১২.৪৫ মিটার এবং প্রস্থ মাত্র ৫.৫ মিটার। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট আয়তাকার এই মসজিদের ৪ কোনায় রয়েছে অষ্টাকৃতির ৪টি টাওয়ার। প্রতিটি টাওয়ারের শীর্ষে রয়েছে পলেস্তারা দিয়ে তৈরী দৃষ্টিনন্দন ছোট গম্বুজ। মসজিদের দরজা ৩টি, জানালা ২টি। ভিতরে ৩টি মিহরাব রয়েছে, যা বহু খাঁজযুক্ত খিলানাকৃতির, মসজিদের ভেতরের দিকে ছাদের উত্তর-দক্ষিণ প্রান্তে ও মধ্যবর্তী স্থানে বড় রকমের ফাটল দেখা দিয়েছে। প্লাস্টারসহ নান্দনিক টেরাকোটা শিল্প সংস্কারের অভাবে খসে পড়ছে। ভিতরাংশের পশ্চিম দেয়াল জুড়ে সবুজ শ্যাওলা জমে আছে। ১টি বড় গম্বুজে ফাটল ধরেছে। সবমিলিয়ে ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে আছে মুসলিম ঐতিহ্যের ধারক এই নয়াবাদ মসজিদ।
এলাকাবাসীরা জানান, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা আর অবহেলায় মসজিদটির এ বেহাল দশা। অথচ ইতোমধ্যে প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে ১ একর জায়গা জুড়ে সীমান প্রাচীর, এবতেদায়ী মাদ্রাসা, দর্শনার্থীদের বসার জায়গা, ওযুখানা, গোসলখানা, টয়লেট ও বাহারী ছাউনী ইত্যাদি নির্মাণ করা হয়েছে। এবতেদায়ী মাদ্রাসায় চালু আছে মসজিদভিত্তিক গণশিক্ষা কর্মসূচি। গণশিক্ষা কর্মসূচির শিক্ষক মো: মোস্তাফিজুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে জানান ‘প্রতিদিন গড়ে ২০০-২৫০ জন দর্শনার্থী আসেন এই মসজিদ দেখতে। কিন্তু কোনোরূপ সংস্কার কাজ না হওয়ায় মসজিদটি দর্শনার্থীদের কাছে গুরুত্ব হারাতে বসেছে।’
হিন্দু প্রধান এলাকা হলেও মসজিদের আশে পাশে ৪০টি মুসলিম পরিবার রয়েছে। এছাড়াও মাঝাপাড়া, ডাক্তার পাড়া, আসাম পাড়া হতেও মানুষ এখানে আসে নামাজ পড়তে আসে। বৃষ্টির দিনে মুসল্লিদের নামাজ পড়তে কষ্ট হয়।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রত্নতত্ত্বঅধিদপ্তরের আঞ্চলিক কর্মকর্তা নাহিদ সুলতানা বলেন, ‘মসজিদের সংস্কার কাজ না করে বাউন্ডারি ওয়ালের কাজ করা ঠিক হয়নি। তবে আমরা খুব শিগগির মসজিদের সংস্কার কাজ শুরু করবো। যেহেতু সেই আমলে নির্মাণ কাজটিতে কোনো সিমেন্ট ব্যবহার করা হয়নি, শুধুমাত্র চুন সুড়কি দিয়েই স্থাপনার কাজটি করা হয়েছে। তারপরও যে এই স্থাপনাটি এতদিন টিকে আছে তা অনেক বড় ব্যাপার।’