মানুষের বিভিন্ন ফোবিয়া
Tweet
ফোবিয়া শব্দটির সাথে কম বেশী আমরা সবাই পরিচিত। আতঙ্ক, ভয় বা ফোবিয়া– এই তিনটি শব্দের অর্থ প্রায় একই। ভয় হলো মনের অবচেতন স্তরের একটি বিশেষ মানসিক অবস্থা, যার একটি নির্দিষ্ট সীমা বা সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু ভয় যখন নির্দিষ্ট সীমা অতিক্রম করে, তখন তাকে ফোবিয়া বা ভীতি রোগ বলে। গ্রীক শব্দ Phóbos থেকে Phobia শব্দের উৎপত্তি, যার অর্থ ভয় বা আতঙ্ক।
ফোবিয়ার ইতিহাস কিন্তু খানিকটা আভিজাত্যপূর্ণ। এগুলো জটিল কিন্তু এত বেশি যে সংখ্যায় গোনা যায় না।১৮৯৫ সালে ভিয়েনার নিউরোলজিস্ট সাইকো এনালাইসিসের জনক সিগমুন্ড ফ্রয়েড ( ১৮৫৬-১৯৯৩), লক্ষ্য করেন যে কিছু কিছু ব্যাপার আছে, যেগুলো সবাই সাধারণভাবে নিতে পারলেও অনেকেই তা পারেন না। তার বেশকিছু বছর পর ফ্রয়েড হান্স নামের এক ছেলের সম্পর্কে লিখেন, যে রাস্তায় ঘোড়া দেখে ভয় পেয়েছিল। আর সেই ভয় এতটাই তীব্র ছিল, যেটা ফোবিয়া হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সমসাময়িক বিশেষজ্ঞরাও বুঝতে পেরেছিলেন যে ফোবিয়া একধরণের মানসিক ব্যাধি। তারা একে ‘মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।
অনেক ফোবিয়ার কথা বিভিন্ন ওয়েবসাইটে দেয়া আছে। কিছু কিছু সাইক্রিয়াট্রিক সাইট আছে যেগুলোতে এগুলোকে ক্যাটাগরি অনুযায়ী সাজানো হয়েছে, কিছু কিছুতে বিশদ বর্ণনা করা আছে প্রত্যেকটির। এখানে বেশ মজাদার কিছু ফোবিয়া বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আকারে বর্ননা দেওয়া হয়েছে।
নিক্টোফোবিয়া
অনেক মানুষ আছেন যারা অন্ধকার খুব ভয় পান। সামান্য সময়ের জন্যও অন্ধকারে থাকতে পারেন না। তাদের এই অন্ধকার ভীতিই হলো নিক্টোফোবিয়া।
সাইনোফোবিয়া
কম বেশী এরকম অনেক মানুষ আমাদের আশেপাশে আছে যারা কুকুর খুব ভয় পায়। অথচ কুকুর এমন এক প্রানী যা কখনোই প্রথমে আক্রমণ করে না। তবুও যাদের মাঝে সাইনোফোবিয়া আছে তারা কুকুর দেখলেই পালায়। তাদের সব সময় মনে হয় এই বুঝি কুকুর তাকে আক্রমণ করল।
অর্নিথোফোবিয়া
ছোট পাখি বড় পাখি যেমনই হোক এ রোগে আক্রান্তরা পাখি খুব ভয় পায়। যেকোন পাখির সংস্পর্শে তারা আতংকবোধ করেন।
ট্রিপানোফোবিয়া
ট্রিপানোফোবিয়া আক্রান্ত মানুষের অভাব নেই। আমাদের আশেপাশে অসংখ্য এ জাতীয় মানুষ দেখতে পাই যারা সূচ বা ইনজেকশন ভয় পায় অর্থাৎ তাদের ট্রিপানোফোবিয়া আছে।
এগোরাফোবিয়া
এই ফোবিয়ায় আক্রান্তরা জনবহুল যায়গায় অস্বস্তিতে ভোগেন, এক সময় আতংকগ্রস্ত হয়ে পড়েন। তারা সব সময় অধিক মানুষের সমাগম থেকে নিজেকে বিরত রাখেন।
হেমোফোবিয়া
অনেক মানুষের মাঝে হেমোফোবিয়া আছে। তারা রক্ত ভয় পায়, তাই কখনো রক্তদান করেন না। এমনকি পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য অল্প রক্ত দিতেও তারা ভীষণ ভয় পান। অন্যের রক্ত ঝরছে এটা দেখলেও ভয় পান।
একুসটিকোফোবিয়া
অনেক মানুষ আছেন যারা শব্দ পছন্দ করেন না। যে কোন শব্দ তাদের মাঝে তীব্র বিরক্তি এবং ভয়ের সৃষ্টি করে। তারা সব শব্দহীন পরিবেশে থাকতে পছন্দ করেন । শব্দের প্রতি তাদের এই বিদ্বেষ বা ভীতিকেই একুসটিকোফোবিয়া বলে।
এক্রোফোবিয়া
এমন অনেক মানুষ আমাদের আশেপাশেই আছে যারা উচুতে উঠতে ভয় পায়। তাদের এই উচ্চতা ভীতিকে এক্রোফোবিয়া বলে ।
এনথ্রোপোফোবিয়া
এই ফোবিয়ায় আক্রান্তরা অন্য মানুষের সঙ্গী হওয়াতে ভয় পায়। কারও সান্নিধ্যের চেয়ে একা থাকতেই সে ভালবাসে। কাউকে সহজে বিশ্বাস করতে চায় না তারা ।
গ্লসোফোবিয়া
এই ফোবিয়া যাদের আছে তারা জনসম্মুখে কথা বলাতে ভয় পায়। কথা বলার সময় হাত কাপে ও ঘেমে যায় ।
ক্লাসট্রোফোবিয়া
এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত মানুষেরা বদ্ধ জায়গায় গেলে ভয় পায় যেখানে আবদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
জেনোফোবিয়া
জেনোফোবিয়া হলো বিদেশি, অচেনা কিছু বা লোকের ভয়। এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত মানুষেরা অপরিচিত যায়গা , অপরিচিত জিনিস কিংবা অপরিচিত লোকদের ভয় পায়।
ভিনাস্ট্রাফোবিয়া
ভিনাস্ট্রাফোবিয়া হলো সুন্দরী মেয়েদের ভয় পাওয়া। এই ফোবিয়ার নামকরণ করা হয়েছে রোমান দেবী ভেনাস থেকে। ভেনাসকে প্রেমের দেবী বলা হয়। এছাড়াও তাকে যৌনতা ও সৌন্দর্যের দেবী হিসেবেও দাবি করা হয়।
গাইনোফোবিয়া
গাইনোফোবিয়া বলতে সকল মেয়েদের ভয় পাওয়াকে বোঝায়।মেয়েদের সামনে দাঁড়ালে তারা নিজেদের শরীর ও মনের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে না। তারা সত্যিকার অর্থেই অসুস্থ বোধ করে। নিজেদের অনুভূতির উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারায় তাদের চোখে-মুখে অস্বস্তির চিহ্ন ফুটে ওঠে। দ্রুত নিঃশ্বাস নেওয়া, অনবরত ঘামতে থাকা ইত্যাদি তাদের মাঝে দেখা দেয়।