হিপনোটিজম কী? হিপনোটাইজ কীভাবে করে?
Tweet
সাধারনত যে বিদ্যা বলে কাউকে সম্মোহন বা বশিভুত করে তার দ্বারা কোনো প্রত্যাশিত কাজ করিয়ে নেওয়াকে হিপনোটিজম বলে। অন্যভাবে, কোনো ব্যক্তির ইচ্ছে বা অনিচছায় তাঁর মনের গভীরে গিয়ে তাঁকে যে আদেশ করা হয়, ঐ ব্যাক্তির এই আদেশকে নিরদ্বিধায় পালন করাকে হিপনোটিজম বলে।
হিপনটিজমের জনক হলেন স্কটল্যান্ডের অধিবাসী ড. জেমস ব্রেইড (১৭৯৫১৮৬০)। তিনি প্রথম হিপনোটিজম শব্দটি ব্যবহার করেন। মুলত হিপনোসিস শব্দের অর্থ ঘুম। তিনি প্রথম দেখতে পান যে প্রতিটি মানুষের মাঝে একটি বৈজ্ঞানিক উপায়ে মানুষকে বশিভুত করার ক্ষ্মতা আছে। সেই থেকে হিপনোটিজম মানসিক এবং অন্যান্ন রোগ সারানোর একটি বিজ্ঞান স্বীকৃত কার্যকরী পদ্ধতি। অমেরিকার অনেকে নামকরা মেডিকেল বিশেষজ্ঞরা গবেষণা করে দেখে হিপনোটাইজ কীভাবে করে, দেখা যায় এ পদ্ধতি শতভাগ ভকর্যকরী এবং বিজ্ঞান সম্মত।
হিপনোটিজম কীভাবে কাজ করে?
আমরা জানি যে আমাদের মনের ২ টি অংশ আছে। সচেতন মন এবং অবচেতন মন। আমরা যখন জেগে থাকি তখন আমাদের সচেতন মন সক্রিয় থাকে। আমরা দিনের বেলায় জেগে থাকা কালিন যে সব কাজ করে থাকি, তা সব সচেতন মনের নির্দেশে। বই পড়া, খাওয়া, হাটা- চলা,হিসাব করা, এ সবটাই সচেতন মনের ইচ্ছে বা আদেশ অনুযাই করে থাকন।
কিন্তু অবচেতন মনটা কী? আসলে একখানেই মূল বিষয়টি দাড়িয়ে আছে। আমরা যখন ঘুমিয়ে পড়ি আমদের সচেতন মনও আমাদের সাথে ঘুমিয়ে পড়ে। ঠিক তখন আমাদের অবচেতন মন জাগ্রত হয়ে ওঠে। মনে করুন যে আপনি ঘুমিয়ে আছেন, হটাৎ বড় একটি শব্দ শুনে আপনার ঘুমটি ভেঙ্গে গেল। আপনিতো ঘুমিয়ে ছিলেন তাহলে এই ঘুম ভাঙ্গার কাজটি কে করল। এ কাজটি করেছে অবচেতন মন। অবচেতন মন সর্বদা জাগ্রত থাকে। কিন্তু যখন সচেতন মন সক্রিয় হয়, তখন তার রাজত্ব চলে। মানে সচেতন মন জাগ্রত হলে অবচেতন মন আর নাক গলাতে আসে না।
তবে সচেতন মন সব রকম বিচার বিবেচনা করে কাজ করতে পারে। সব বুঝতে পারে, কেউ আমাদের ঠকাচ্ছে কিনা, সে আজ কেনো আসেনি, তার বিয়েতে কী উপহার নিয়ে যাওয়া যায়, এসব সচেতন মন ভালোভাবে বিশ্লেষণ করে পরবর্তী শিদ্ধান্ত নিতে পারে। কিন্তু অবচেতন মন কোনো কিছু বিচার বিশ্লেষণ করতে পারে না। অবচেতন মনকে যা বোঝানো হবে, সে তাই বুঝবে। যদি আপনার অবচেতন মনকে বোঝানো যায় যে মাটি খেতে খুব মিষ্টি। তাহলে আপনার কাছে সর্বদা মাটি খুব মিষ্টি লাগবে। আপনার অবচেতন মনকে যদি বলা হইয় যে কাল ১২ টার সময় আপনার বন্ধুকে ১ টা চড় মেরে আসতে হবে। আপনি নিশ্চিত আগামিলকাল ১২ টার সময় তাকে চড় মেরে আসবেন। কিন্তু মজার বিষয় হলো, ১২ টার সময় কী হয়েছিল আপনার কিছুই মনে থাকবে না।আর এটাই হচ্ছে হিপনোটিজম। আমাদের কাজ এটাই। অবচেতন মনকে বোঝানো।
হিপনোটিজমের মাধ্যমে কী কাজ করা যায়?
হিপ্নোটিজমের মাধ্যমে অনেক অনেক কাজ করা যায়। যে সব মানসিক এবং শারিরীক রোগ কোনো ডাক্তারে সারতে পারে না। সে সব রোগ অনায়াসে হিপনোটিজমের মাধ্যমে সারানো যায়। মনের বিষন্নতা দূর, আত্মহত্যার চিন্তা দূর, বাচ্ছারা কথা না শুনলে তাদের বশ করা, নিজের প্রিয়জনকে বশ করা, মনের যাবতীয় সমস্যা দূর করা, কানের রোগ, বাতের রোগ,তোতলানো, যে কনো বেদনা দূর করা, নিজের এবং অন্যের খারাপ অভ্যাস দূর করা। কারো অতীতে ঘটে যাওয়া ঘটনা জানা। এর মাধ্যমে হাজারো রকমের কাজ করা যায়।এর মাধ্যমে অন্যকে দিয়ে কারো খুনও করা যায়। আমরা এ মহৎ একটা বিষয়কে সিনেমাতে খা্রাপ কাজে ব্যবহার করতে দেখি যা সম্পূর্ণ অনুচিত।
একটি সময় আমেরিকার Civil War এর সময় হিপনোটিজম ব্যবহার করত। তাদের সেনারা যখন আহত হয়ে যেত, তাদের আহত স্থানে যাতে কোনো যন্ত্রনা অনুভব না হয় তার জন্য এ পদ্ধতি ব্যবহার করত। এরকম অনেক ঐতিহাসিক গল্প আছে। ইংল্যান্ডের একজন দাতের ডাক্তার নাম ডাঃ এস ডেল। তিনি তার রোগীদের দাতের স্থানে অপারেশন করার উদ্দেশ্যে ঐ স্থনে হিপনোটাইজ করে অবশ করে নিতেন। এরকম শুরুর দিকে ডাঃ স্টিভ আরা নামে এক জৈনিক ডাক্তার তার রোগীদের সার্জারির অপারেশনের জন্য তার রোগীদের হিপনোটাইজ করে নিতেন যাতে তারা যেন কোনো যন্ত্রনা অনুভব না করেন।
হিপনোটাইজ কীভাবে করে?
হিপনোটাইজ কীভাবে করে এটা জানতে হলে আগে আপনাকে জানতে হবে এটা কোন পদ্ধতিতে কাজ করে। আমি আগেই বলেছি হিপনোসিস কথাটির অর্থ হচ্ছে ঘুম। মানুষ যখন ঘুম পড়ে তখন আস্তে আস্তে সচেতন মন নিস্ক্রিয় হয়ে পড়ে। আর এ সময়টাতে যদি আপনি ঐ ঘুমাচ্ছন্ন লোকের কাছে গিয়ে আদেশ সূচক কথা বলেন। যতক্ষণ না পর্যন্ত তিনি ঐ ব্যাক্তি আপনার আদেশ সূচক কথা শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়েন। এভাবে যখন ঊনি ঘুমিয়ে পড়বেন তখন তার অবচেতন মন যাগ্রত হবে এবং আপনার আদেশের বশবর্তী হয়ে পড়বেন। তখন আপনি ঐ ব্যাক্তিকে যা বলবেন, ওই ব্যাক্তি ঘুম থেকে ওঠার পর ঠিক তাই তাই অক্ষরে অক্ষরে পালন করবেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো ঘুমানোর সময় আপনি কী বলেছেন ঐ ব্যাক্তির তা মনে থাকবে না। আপনি যে আদেশটা করবেন সে ওই আদেশ পালন করবেন। কিন্তু ঊনি মনে করবেন তিনি ঐ কাজটি নিজ ইচ্ছায় ই করেছেন। কেননা আমি আগেই বলেছি অবচেতন মনের কোনো বিচার করার ক্ষমতা নেই। অবচেতন মনকে যা শেক্ষানো হবে, অবচেতন মন ঠিক তাই ই মনে সেভ করে রাখবে।
হিপনোটাইজ শিখতে হলে কিছু বিষয় শিখতে হবে। হিপনোটিজম এর ৩ টি অংশ আছে।
এ বিষয়টি খুবই গুরুতপূর্ণ। আপনাকে প্রথমে এক নিরিখে ২০-২৫ মিনিট তাকিয়ে থাকার অভ্যাস করতে হবে কোনো চোখের পলক না ফেলে। এর জন্য আপনি প্রতিদিন আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আয়নাকে ১-২ ফিট দূরে রেখে আয়নার প্রতিবিম্বর দুই ভ্রু এর মাঝখানে তাকিয়ে থাকুন। যেদিন দেখবেন ২০-২৫ মিনিট থাকতে পারছেন, সেদিন থেকে আরো প্রখর ভাবে তাকিয়ে থাকুন। এটি এমন এক মায়া জাল, যেকোনো সময় যেকোনো মানুষের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকলে সে আপনার ওপর দূর্বল হয়ে পড়বে। পরীক্ষা করে দেখবেন সুফল পাবেন। এমনটা নিশ্চই হয়েছে ছোটবেলায় আপনার সাথে যে, কেউ আপনার কপালের দুই ভ্রুর মাঝের দিকে কলমের মুখ দূর থেকে ধরে রাখলে আপনার কপাল ঝিন ঝিন করা শুরু করে। এখন আরেকটা বিষয় পরোখ করে দেখতে পারেন, আপনার বান্ধবি অথবা অন্যকেউ আপনার দিকে অথবা অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। আপনি তার কপালের দিকে এক নিরিখে তীব্র ভাবে তাকিয়ে আছেন। দেখবেন কিছুক্ষণ পর ঊনি কপালে হাত দিবেন আর বলবেন যে তার মাথা ঝিন ঝিন অথবা ব্যাথা করছে।
২। পাস দেওয়াঃ
আপনি রোগীকে প্রথমে একটি আরামদায়ক স্থানে শোয়াবেন। তারপর আপনার ডান হাত এর আঙ্গুলি গুলা একটু ফাকা করে রাখবেন। তারপর সেই আঙ্গুলি গুলা দিয়ে রোগীর মাথা থেকে পা পর্যন্ত তার দেহের ৬ ইঞ্চি ওপর দিয়ে নিয়ে যাবেন। এটাই হলো পাস দেওয়া। তবে মনে রাখতে হবে যখন রোগীকে ঘুম পাড়াবেন তখন শুধু মাথা থেকে পায়ের দিকে পাস। কিন্তু যখন ঘুম ভাঙ্গানোর পালা তখন পা থেকে মাথা পর্যন্ত ওপরের দিকে পাস হবে। মানে উল্টোদিকে।
৩। কথা বলে আদেশ দেওয়া
রোগীকে পাস দিতে থাকবেন এবং সাথে তার দুই ভ্রুর মাঝখানে তীব্র দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবেন। সাথে মনে মনে ও মুখ দিয়ে আদেশ দিতে হবে। আদেশ দেওয়া মানে, জোরে, দৃড় কণ্ঠে আদেশ শুচক কথা বলা। যেমন- তোমাকে এখন ঘুম পড়তেই হবে, তোমাকে এখন এটা করতেই হবে, তোমাকে আমার কথা শুনতেই হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। এটা সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আপনি দোকানে কিছু কিনতে গিয়ে যদি বলেন আমাকে এটা এই দামে দিতেই হবে, দেখবেন যদি ওই দোকাদারের লোক্সান না যায় তাহলে আপনাকে মাল টা দিয়ে দিবে।