নীলাদ্রি নয় আসল নাম শহীদ সিরাজ লেক
Tweet
বাংলাদেশের পর্যটন সম্ভাবনাময় জেলাগুলোর মধ্যে সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ অন্যতম। পরিযায়ী পাখিদের অভয়াশ্রমখ্যাত টাংগুয়ার হাওরের পরিচিতি বিশ্বব্যাপী। কিন্তু দু:খজনক সত্য হলো যথাযথ বিপণন কৌশলের অভাবে অনিন্দ্য সুন্দর এই পর্যটনগন্তব্যকে আজও আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দুতে আনা সম্ভব হয়নি। দেশীয় পর্যটকদের মধ্যে কিছু ব্যাকপ্যাকার্স পর্যটকের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা ও ছবি ইন্টারনেটিভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ারের কারণেই গত বছর দুয়েক ধরে বর্ষাকালে থৈথৈ পানিতে টইটুম্বুর টাংগুয়ার হাওর মুখরিত হচ্ছে পর্যটকের পদচারনায়।
টাংগুয়ার হাওর বাংলাদেশের দ্বিতীয় রামসার সাইট (বাংলাদেশে রামসার সাইট মাত্র দুটি, প্রথমটি হলো সুন্দরবন)। ভারতের মেঘালয় পর্বত হতে ছোটবড় সব মিলিয়ে প্রায় ৩০টি ঝর্ণা এসে মিশেছে এই হাওরের পানিতে। হিজল-করচ শোভিত টাংগুয়ার হাওর শীতকালে পরিযায়ী পাখিদের কলকাকলিতে হয়ে ওঠে স্বর্গীয়।
বর্ষায় সমুদ্রসম টাংগুয়ার হাওরে যারা ছোট, বড় বা মাঝারি আকৃতির নৌকা নিয়ে ভ্রমণে যায় তারা প্রায় সবাই রাতে তাহিরপুরের টেকেরঘাটে অবস্থান করে। পানি থেকে নেমে টিলার ওপর কিছু হাঁটাহাঁটি করার সুযোগ মেলে মূলত এখানেই। এখান থেকেই শিমুলবাগান, বারিক্কাটিলা বা যাদুকাটা নদী দেখতে যায় সবাই। এই টেকের ঘাটের অনতিদূরেই নীল পানির একটি লেক আছে যা ব্যাপকভাবে পরিচিতি পেয়েছে নীলাদ্রি লেক নামে। নীলাদ্রি লেক নামটা মূলত পর্যটকদেরই দেয়া।
নীলাদ্রি লেক নামটি সুন্দর হলেও স্থানীয় জনসাধারণ ও ইতিহাস সচেতন পর্যটকদের তা আক্ষেপ হয়ে উঠেছে। কারণ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ চলাকালীন মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম এখানেই শহীদ হন। বীর বিক্রম খেতাবপ্রাপ্ত এই মুক্তিযোদ্ধার নামেই স্থানীয় জনগণ লেকটির নাম দিয়েছিলো শহীদ সিরাজ লেক। স্থানীয় জনসাধারণের দেয়া এই শহীদ সিরাজ লেকের কোনো নামফলক না থাকায় লেকটিকে বেনামী হিসেবে ধরা হতো। ফলে পর্যটকদের নতুন নামকরণ করতে হয় এ লেকের।
অন্যদিকে, ধীরেধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এই পর্যটন স্পটকে সংরক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসক লেক ও লেকসংলগ্ন এলাকার নাম দেন নীলাদ্রি ডিসি পার্ক। কিন্তু এবার আপত্তি তুলতে ভুল করেননি স্থানীয় জনসাধারণ। স্থানীয় জনসাধারণের আপত্তির মুখে লেকটির নাম নীলাদ্রির পরিবর্তে শহীদ সিরাজ লেক বহাল রাখা হয়, এবং লেকের আশেপাশের এলাকা নিয়ে গঠিত পার্কটির নামকরণ করা হয় স্বাধীনতা পার্ক।
অবশ্য, এখনও অনেকে নীলাদ্রি লেক নামে লেকটির পরিচয় দিচ্ছেন, তারা একটু সচেতন হলেই শুধু পর্যটনই রক্ষা পায় না, সংরক্ষিত হয় ইতিহাসও।