এই শতাব্দীর পরে হারিয়ে যেতে পারে মালদ্বীপ
Tweet
মনোরম পরিবেশ, আদিম সমুদ্রসৈকত ও ক্রান্তীয় প্রবাল প্রাচীর ও সাদা বালুর দেশ হিসাবে পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় এক ভ্রমণের জায়গা মালদ্বীপ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এক শতকের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে ১২০০ দ্বীপের এ দেশটি। এর ১৮৯ দ্বীপে প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ লোকের বসবাস। বিশ্বের সবচেয়ে নিচু এই দেশটি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকির প্রথম সারিতে অবস্থান করছে।
কপ২৬ সম্মেলনে বিশ্বনেতাদের বক্তব্যের প্রথম দিন গত সোমবার আবেগঘন কণ্ঠে সেই অসহায়ত্বই প্রকাশ করেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম মোহাম্মদ সলিহ। বলেন, ‘একটা একটা করে আমাদের সবগুলো দ্বীপ খেয়ে ফেলছে সমুদ্র। এখনই পদক্ষেপ না নিলে এই শতকের শেষ দিকেই হারিয়ে যাবে মালদ্বীপ।’ এর ঠিক দুদিন আগেই মালদ্বীপের পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রযুক্তিমন্ত্রী আমিনাথ শওনা বলেন, ‘আমাদের আশাবাদী হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। আমরা আশা করছি, বিশ্ব ঐক্যবদ্ধ হবে এবং পদক্ষেপ নেবে।’
মালদ্বীপের রাজধানী মালেতে অবস্থিত স্মল আইল্যান্ড রিসার্চ গ্রুপের একজন সামুদ্রিক বিজ্ঞানী আজিম মুস্তাগ দ্বীপপুঞ্জের প্রবাল প্রাচীর পর্যবেক্ষণ করছেন। তিনি রিপোর্ট করেছেন, তার ফলাফলগুলো উদ্বেগজনক। অধিকাংশ প্রবাল প্রচীর মারা যাচ্ছে-যা মালদ্বীপবাসীর জন্য খুবই খারাপ খবর। প্রবাল প্রাচীর শুধু সমগ্র সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রের একটি অপরিহার্য অংশই নয়, তারা দ্বীপের উপকূল রেখাও রক্ষা করে। তিনি বলেছেন, এই প্রবাল প্রাচীর মালদ্বীপের জীবনের ভিত্তি। চলতি বছরের শুরুর দিকে প্রকাশিত জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকারি প্যানেল বলছে-বিশ্ব যদি দ্রুত এবং মারাত্মকভাবে কার্বন নির্গমন কমাতে না পারে তবে আমরা বেঁচে থাকতে পারব না।
জলবায়ু সংকটের সবচেয়ে খারাপ প্রভাবগুলোর প্রশমন ঘটাতে প্রয়োজন বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা। এজন্য ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র এবং দুর্বল দেশগুলোর অভিযোজন চাহিদাকে সমর্থন করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজন জরুরি পদক্ষেপ। উল্লেখযোগ্য প্রযুক্তিগত এবং আর্থিক সহায়তার ওপর নির্ভর করে মালদ্বীপ ২০৩০ সালের মধ্যে কার্বনশূন্য নির্গমন অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মালদ্বীপই প্রথম উন্নয়নশীল যারা রেফ্রিজারেশন এবং এয়ার কন্ডিশনার তৈরিতে রাসায়নিক যৌগ এইচসিএফসি (হাইড্রোক্লোরোফ্লোরোকার্বন) ব্যবহার করে না। মালদ্বীপ সরকার চলতি বছর একক-ব্যবহারের প্লাস্টিক ফেজ-আউট পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছে। নিজেরা বাঁচতে মালদ্বীপ যত পদক্ষেপই নিক না কেন এগুলোর কোনোটিই তাদের সমুদ্রে বিলীন হওয়া ঠেকাতে পারবে না। এর জন্য প্রয়োজন বৈশ্বিক যৌথ পদক্ষেপ। কপ২৬-কে অবশ্যই গ্রহটিকে বাঁচাতে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে। পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশগুলোকে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় পদক্ষেপ নিতে ঘোষিত প্রণোদনা পরিশোধের মানসিকতা অর্জন করতে হবে। জলবায়ু-সম্পর্কিত উদ্বেগ সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে রয়েছে। মহামারির পাশাপাশি, বিশ্ব দাবানল, জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি, বন্যা এবং খরার রিপোর্টে প্লাবিত হয়েছে বিশ্ব গণমাধ্যম। এর অর্থ, জলবায়ু-সম্পর্কিত সংঘাত ও অভিবাসন বেড়েই চলেছে। আলোচনার জন্য হাতে আর সময় নেই। কপ২৬ সম্মেলন থেকে আসতে হবে সিদ্ধান্ত-ধরিত্রী বাঁচানোর উচ্চাভিলাষী বাজেট ও পরিকল্পনা।
২০০৪ সালে ভারত মহাসাগরে সৃষ্ট সুনামির আঘাতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রটি বিধ্বস্ত হয়। ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ৪৭০ মিলিয়ন ডলার। যার ফলে মোট জিডিপির ৬২ শতাংশ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে দেশটি। সুনামির আঘাতে মালদ্বীপের একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরসহ বহু স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গোটা বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আজ জনমত গড়ে উঠেছে। মালদ্বীপও এর ব্যতিক্রম নয়, বিশেষ করে দেশটি এই ইস্যুতে সবচেয়ে জোরালো কণ্ঠস্বর বলে পরিচিত।
জলবায়ু পরিবর্তন সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি করছে। মালদ্বীপের তথ্য অনুযায়ী, গত তিন বছরে তিন থেকে চার মিলিমিটার বেড়েছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। দেশটির পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী ডক্টর আবদুল্লহ নাসির উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এই দ্বীপের মানুষকে অন্য দ্বীপে যেতে হতে পারে। এমনকি মালদ্বীপের মানুষের প্রাকৃতিক মৃত্যুদণ্ড হতে পারে। কিন্তু দেশটির মানুষগুলোর বেঁচে থাকার অধিকার আছে।