ননস্টিকের বাসনে রান্না করেন? জানেন নিজের কী সর্বনাশ ডেকে আনছেন?
Tweet
খাচ্ছেন টাটকা সবজি। রাশ টানচ্ছেন ফাস্টফুড, অতিরিক্ত ভাজা, মশলাদার খাবারে। ভাবছেন, শরীরের ব্যাপারে খুব সচেতন আপনি। কিন্তু না। কোন ধরনের পাত্রে রান্না করছেন সুস্থ থাকতে এটিও নজরে রাখা খুব দরকার। হেঁশেলের তাকে মুখ্যচরিত্রে থাকা হাঁড়ি, কড়া ও ফ্রাইং প্যান মোটেও নিরাপদ নয়। ননস্টিকের এই বাসনগুলিতে রান্না করা কতটা ক্ষতিকর? জিনিয়া সরকারকে জানাচ্ছেন ফুড টেকনোলজি ও বায়োকেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অধ্যাপক ড. প্রশান্ত বিশ্বাস।
বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গবেষণার পরিধি। আর সেই সব তথ্যই বলছে, অ্যালুমিনিয়ামের হাঁড়ি, কড়া ও ননস্টিকের ফ্রাইং প্যান হলে তার ক্ষতিকর প্রভাব বর্তায় শরীরে। হয়তো ননস্টিকে কম তেলে ভাজবেন কিংবা অ্যালুমিনিয়ামের পাত্রে রান্না করলে পোড়া কালো দাগ সহজেই উঠে যাবে, সেই সুবিধায় এই পাত্রের ব্যবহার এত বেশি। অসুবিধা কমাতে অসুখ ডেকে আনা কী সঠিক সমাধান? একটু ভাবুন।
সাধারণত ননস্টিকের সমস্ত পাত্রই ‘টেফলন’ দিয়ে তৈরি করা হয়। এই টেফলন আসলে ‘পলিটেট্রা ফ্লোরো ইথিলিনে’-এর কোটিং। কোটিং এর খরচ কমাতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই টেফলনের সঙ্গে ‘পারফ্লোরোঅক্টানয়েট’ অ্যাসিড(PFOA)’- পলিমার দিয়ে প্রসেস করা হয়। ফলে উচ্চ তাপমাত্রায় ননস্টিকের পাত্রে রান্না করা হলে কিংবা পাত্রটি খুব তেতে গেলে ধোঁয়া উঠতে থাকে। এই ধোঁয়া খুবই মারাত্মক। যা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে রক্তের সঙ্গে মেশে। আর যা কার্সিনোজেনিক। এই পাত্রে বেশি তেল দিয়ে রান্না কিংবা কিছু ভাজলে, সেই তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে। প্রায় ২০০-২৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রা হয়ে যায়, ঘি দিয়ে কিছু ভাজলে তাপমাত্রা ৪০০ ডিগ্রির বেশি উঠে যায়। তাপমাত্রার বৃদ্ধি বেশিরভাগ সময়ই আমরা বুঝতে পারি না। ফলে এই পাত্রের কোটিং বাষ্পীভূত হয়ে বিষাক্ত গ্যাস তৈরি করে। রান্নার উপাদান বা খাবারে এই গ্যাস মিশে যায়।
কর্নাটক সরকারের মেডিক্যাল এডুকেশনের ডিরেক্টর ডা. এস. সচ্চিদানন্দ এই বিষয়ে সমীক্ষা করে জানান, যাঁদের খুব চুল ওঠে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় তাঁদের PFOA পজেটিভ, টেফলনের পাত্র ব্যবহার করেন যাঁরা, তার ৬৫ শতাংশই হাই কোলেস্টেরলের সমস্যায় ভোগেন, মহিলাদের ৭০ শতাংশ সম্ভাবনা থাকে পলিসিস্টিক ওভারিয়ান ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার।
ননস্টিকের পাত্রে তেল কমে বেশি ভাজা যায়- এই ভেবে বেশি ভাজাভুজি খাবার এই পাত্রে খেলে করলে সবচেয়ে বেশি বিপদ বাড়ে। প্রয়োজনে অল্প তেলে সাধারণ কড়ায় ভাজলে উপকার। খুব কড়া করে ভাজতে ও ননস্টিকের পাত্রে স্টিলের হাতা খুন্তি দিয়ে রান্না করলে বিপদ বাড়ে। এক্ষেত্রে এই PFOA প্রলেপ খুব সহজেই খাবারে মেশে। দীর্ঘদিন ধরে এই পাত্রের ধোঁয়া ইনহেল করলে, হঠাৎ করে জ্বরের প্রবণতা বেড়ে যায়। এটি ভয়ঙ্কর রোগের পূর্বাভাস। এই পলিমারের প্রলেপ এক ধরনের অর্গানিক অ্যাসিড। যা নার্ভের উপরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। হঠাৎ করে মনসংযোগের অভাব, স্মৃতিশক্তি কমে যায়। ননস্টিকের পাত্র চার-পাঁচ বছর টানা ব্যবহার করলে ক্ষতি বেশি।
বেশিরভাগই জানেন ননস্টিক মানেই টেফলন কোটিং। তা কিন্ত একেবারেই নয়। পলিটেট্রাফ্লোরো ইথিলিন বা টেফলনের কোটিং থাকলে অল্প তাপমাত্রায় রান্না করলে বিপদ কম। গ্যাস লো-তে দিয়ে, জল দিয়ে ঝোল জাতীয় রান্না করলে ক্ষতি হয় না। বেশিক্ষণ ধরে ভাজাভুজি নয়। সাদা তেলে ভাজলে ধোঁয়া ওঠার আগে অবধি রান্না করলে নিরাপদ। ননস্টিকের পাত্র ধুতে স্কচবাইট ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে এই টেফলনের প্রলেপ ক্ষয়ে যায় দ্রুত, রান্না করলে সহজেই খাবারের সঙ্গে মেশে, কেনার সময় ভাল করে বুঝে নিন টেফলন বা পলিটেট্রাফ্লোরো ইথিলিনের কোটিং। লোহার ফ্রাইং প্যান ব্যবহার করা স্বাস্থ্যকর।