পিৎজার ইতিহাস

Share on Facebook

মনে করা হয় যে, রাফায়েল এসপোসিটো নামক এক ব্যক্তি সর্বপ্রথম আধুনিক পিৎজার আবিষ্কার করেন। তিনি এই পিৎজা ১৮০০ শতকে রাজা আম্বেরটো ও রানী মারগারিটার জন্য চীজ, বেসিল, টোম্যাটো সহযোগে বানান, যা তাঁদের খুবই পছন্দ হয় এবং তখন থেকে এর নাম ‘পিৎজা মারগারিটা’ রাখা হয়।

ইতালিয়ান খাবার হিসেবে পরিচিত পিৎজার উৎপত্তির সাথে জড়িয়ে আছে নেপলসের নাম। ধারণা করা হয় যে, ফোকাসিয়া নামে একধরনের ফ্ল্যাট ব্রেড যা রোমান ভাষায় (panis focacius) নামেই বেশি পরিচিত সেখান থেকেই পিৎজার উৎপত্তি। নেপলসের জনসাধারণের খাবার হিসেবেই তখন পিৎজার প্রচলন ছিল।

প্রচলিত রয়েছে ১৮৮৯ সালে রাজা আম্বেরটো এবং রানী মার্গারিটা নেপলস ভ্রমণে এসে পিজ্জা চেখে দেখতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। ‘পিৎজারিয়া ব্র্যান্ডি’ যা তখন Da Pietro Pizzyeria নামে পরিচিত ছিল, সেখানেই রানীর জন্য পিৎজা তৈরি হয় যাতে ছিল টমেটো সস, চীজ, বেসিল ইত্যাদির টপিংস। পরবর্তীতে রানীর নামে সেই পিৎজার নামকরণ হয়েছিল ‘মার্গারিটা পিৎজা’।

মার্গারিটা পিৎজার আগে থেকে নেপলসে ‘ম্যারিনারা পিজ্জা’ নামে আরেকটি পিৎজা বেশ জনপ্রিয় ছিল।
ম্যারিনারা পিৎজায় টপিংস হিসেবে ব্যবহার করা হত টমেটো, পেঁয়াজ, অরিগ্যানো এবং জলপাই।

১৮০০ সালের দিকে ইতালিয়ানরা কাজের জন্য আমেরিকায় পাড়ি জমাতে শুরু করে। এদের হাত ধরেই আমেরিকাতে প্রথম পিজ্জার সূচনা হয়।

১৯০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যনহাটনে ‘জি লোম্বারডিস’ নামে প্রথম পিৎজার দোকানের যাত্রা শুরু হয়। পরবর্তীতে ১৯৩০ সালের দিকে পিৎজা জনপ্রিয় হবার পরে নিউ জার্সি এবং বোস্টনে আরো নতুন পিৎজার দোকান তৈরি হয়।

১৯৪৩ সালে শিকাগোতে শিকাগো স্টাইল পিৎজার দোকান তৈরি হয়। নেপলসের থেকে এই পিৎজার ডো বেশ গভীর ছিল এবং এতে টপিংসও তুলনামূলক বেশি থাকত। এর বাইরে এই পিৎজা প্যানে বেক করা হত। শিকাগো স্টাইল পিৎজার অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল ময়দা এবং পনির একত্রে প্রথমে বেক করা হত এরপরে এর ওপরে মাংস এবং অন্যান্য টপিংস যোগ করা হত। সবার শেষে টমেটো কিংবা জলপাই যোগ করা হত।

কিন্তু পিৎজার জনপ্রিয়তা হঠাত করে বেড়ে যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে পিৎজা তৈরিতে কাঠকয়লা চালিত চুলা ব্যবহৃত হলেও যুদ্ধের পরে গ্যাস চালিত ওভেন আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে পিৎজা তৈরি প্রক্রিয়া আরও সহজ হয়।

১৯৫৮ সালে ‘পিৎজা হাট’-এর যাত্রার মধ্য দিয়ে জনগনের মধ্যে পিজ্জার প্রসার দেখা যায়। পরবর্তীতে  ১৯৫৯ সালে ‘লিটল সিজারস’, ১৯৬০ সালে ‘ডমিনোস’এবং ১৯৮৯ সালে ‘পাপা জোনস’-এর পিৎজার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের জনসাধারনের মধ্যে পিৎজার  আরও জনপ্রিয়তা দেখা যায়। ১৯৫৭ সালের দিকে ‘সেলেন্টানো’ নামের এক হিমায়িত খাদ্যসামগ্রী প্রস্তুতকারক দোকান প্রথম হিমায়িত পিৎজা বাজারজাত করে। ১৯৬২ সালে উদ্ভাবিত ‘হাওয়াইয়ান পিৎজা’য় আনারস এবং মাংসের টুকরা ব্যবহৃত হত। এছাড়া পেপারনি, ক্যাপসিকাম, নানা রকমের চীজ বর্তমানে বিভিন্ন দেশের পিৎজার অন্যতম উপকরণ হিসেবে বিবেচিত।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশেও নানা বয়সের মানুষের কাছে পিজ্জা বেশ জনপ্রিয়। সেই ধারাবাহিকতায় দেশের প্রধান শহরগুলোতে তৈরি হয়েছে লা পিৎজারিয়া, পিৎজা হাট, ভূতের বাড়ি রেস্তোরাঁ, গ্র্যাডিয়েন্ট ইত্যাদি পিৎজা শপ। তবে স্থানীয় পিৎজা শপগুলোর মধ্যে জনপ্রিয়তায় শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে ডোমিনোস এবং পিৎজা হাট। ইতালিয়ান কিংবা আমেরিকান পিৎজার সংমিশ্রণে দেশী পিৎজায় মোজারেলা চিজ, ক্যাপসিকাম, পেপারনি ইত্যাদি ব্যবহার করা হলেও এতে আমাদের দেশীয় সবজির ব্যবহারও লক্ষ্য করা যায়।

Leave a Reply