ঈদের আগে গরম মসলা ‘ঠান্ডা’
Tweet
রোজার শুরুতে রাজধানীর বাজারগুলোতে বিভিন্ন মসলার দাম বাড়লেও ঈদের আগে তা অনেকটাই কমে এসেছে। প্রতিবছরই সাধারণত ঈদকে কেন্দ্র করে মসলার দাম বাড়ার তথ্য পাওয়া যায়। তবে এবছর ঈদের আগে দাম না বেড়ে বরং কিছুটা কমে আসায় ক্রেতারাও স্বস্তি প্রকাশ করেছেন।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রোজার শুরুতে জিরা, দারুচিনি, এলাচ, আদা, শুকনা মরিচের দাম বাড়ে। সে সময় কেজিতে জিরার দাম ৪০-৫০ টাকা, দারুচিনির ৪০-৫০ টাকা, এলাচের ১০০-১২০ টাকা, আদার ১০-২০ টাকা এবং শুকনা মরিচের ২০-৩০ টাকা বাড়ে।
এরপর ধীরে ধীরে ঈদের সময় ঘনিয়ে আসলেও নতুন করে আর মসলার দাম বাড়েনি। আগের মতো এখনো খুচরা ব্যবসায়ীরা দারুচিনির কেজি বিক্রি করছেন ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা। এলাচ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৯০০ থেকে দুই হাজার ৭০০ টাকা। জিরার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা।
একইভাবে দেশি আদার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা। আমদানি করা আদা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। শুকনা মরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪২০ টাকা। দেশি রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। আর আমদানি করা রসুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৩০ টাকা।
বিভিন্ন মসলার মতো স্বস্তি দিচ্ছে পেঁয়াজ। দেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। প্রায় এক মাস ধরে এই দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।
পেঁয়াজের দামের বিষয়ে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী মো. হাবিবুর রহমান বলেন, এবার পেঁয়াজের ফলন খুব ভালো হয়েছে। বাজারে ভালো মানের পেঁয়াজের প্রচুর সরবরাহ রয়েছে। এ কারণে এখন পেঁয়াজের দাম কম।
তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম কতদিন কম থাকবে সেটা বলা মুশকিল। এখন পেঁয়াজ ধীরে ধীরে কোল্ড স্টোরেজে চলে যাবে। এতে বাজারে পেঁয়াজের সরবরাহ কমবে। তখন দাম বাড়তে পারে। তবে ঈদের আগে পেঁয়াজের দাম বাড়ার সম্ভাবনা কম।
মসলার দামের বিষয়ে মালিবাগ হাজীপাড়ার ব্যবসায়ী মো. আফজাল বলেন, রোজার শুরুর দিকে বিভিন্ন মসলার দাম একটু বেড়েছিল। তবে ঈদকেন্দ্রিক আর দাম বাড়েনি। মসলার দাম এখন বেশ স্থিতিশীল।
তিনি বলেন, মসলার বেশি চাহিদা থাকে কোরবানির ঈদে। রোজার ঈদে মসলার চাহিদা অতটা বাড়ে না। তাই আমাদের ধারণা এবার ঈদের আগে মসলার দাম বাড়ার সম্ভাবনা কম। তবে ঈদের মাসখানেক পর দাম বাড়তে পারে।
মসলার দামের বিষয়ে পুরান ঢাকার পাইকারি বাজার মৌলভীবাজারের ব্যবসায়ী মো. রুবেল বলেন, ঈদের আগে এবার কোনো মসলার দাম বাড়েনি। বরং দারুচিনি, এলাচের দাম কিছুটা কমেছে। ঈদের আগে মসলার দাম আর বাড়বে না বলেই মনে করেন এ ব্যবসায়ী।
তিনি বলেন, আমাদের কাছে গরম মসলার মজুদ পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে। বাজারে মসলার ঘাটতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। সুতরাং ক্রেতারা অস্বাভাবিক আচরণ না করলে (অধিক পরিমাণে না কিনলে) মসলার দাম স্বাভাবিক থাকবে।
এদিকে মসলার দাম স্বাভাবিক থাকায় ক্রেতারাও স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। রামপুরা বাজারে পেঁয়াজসহ বিভিন্ন মসলা কিনতে আসা মো. মামুন বলেন, এবার রোজার মধ্যে পেঁয়াজের দাম বাড়েনি। এখনো ভালো মানের পেঁয়াজের কেজি ৩০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। অন্যান্য মসলার দামও বাড়েনি। এটা আমাদের জন্য ভালো খবর।
তিনি বলেন, মসলার দাম কম থাকলেও মাংসের দাম তো অনেক বেশি। মসলার দাম কম থাকায় যেটুকু স্বস্তি পাওয়া যাচ্ছে, মাংসের দাম সেই স্বস্তি কেড়ে নিচ্ছে। এখন গরুর মাংসের কেজি ৭০০ টাকার নিচে পাওয়া যাচ্ছে না। ঈদের আগের দিন হয়তো দেখবো গরুর মাংসের কেজি ৭৫০ টাকা হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা অস্বাভাবিকভাবে মাংসের দাম বাড়াচ্ছেন। এরপরও কেউ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। দেশটা যেন মগের মুল্লুক হয়ে গেছে। যার যা খুশি করে যাচ্ছে।
মসলার দামে স্বস্তি প্রকাশ করলেও মাংসের দাম নিয়ে অস্বস্তির কথা জানান কারওয়ান বাজারে বাজার করতে আসা মো. ফজর আলী। তিনি বলেন, পেঁয়াজ, আদা, জিরা, গরম মসলার দাম ঠিক আছে। ২০-২৫ দিন আগে যে দামে কিনেছিলাম, এখনও সেই দাম আছে। মসলার দাম কম থাকলে কী হবে- মুরগি, গরুর মাংসের দামতো অনেক বেশি। মাংস কিনতে না পরলে মসলা কিনে কী হবে?
তিনি বলেন, পরিবার নিয়ে এবার ঈদের সময় ঢাকাতেই থাকবো। এ জন্য ঈদকেন্দ্রিক কিছু কেনাকাটা করে রাখছি। তিন কেজি গরুর মাংস এবং ৮টি মুরগি কিনছি। ঈদের দিন বাসায় আত্মীয়-স্বজন আসবে। যেভাবে মাংসের দাম বাড়ছে, তাতে সামনে বাজার কোনদিকে যায় তার ঠিক নেই। এ জন্য আগেভাগেই ঈদের বাজার করে রাখছি।