আপনি কি অনেকগুলো ছিদ্রযুক্ত কিছু দেখলে ভয় পান? জেনে নিন ট্রাইপোফোবিয়া সম্পর্কে।
Tweet
ট্রাইপোফোবিয়া অর্থ বহুছিদ্র ভীতি। সাধারণত যেসব মানুষ বাস্তবে কিংবা স্থিরচিত্রতে অনেকগুলো কালো ছিদ্র (যেমনঃ মৌচাক) দেখা মাত্রই শরীর ঘিনঘিনে হয়ে অথর্ব হয়ে যায়, বা তাঁরা ভয় পেয়ে যায়, তারা এই ফোবিয়ায় আক্রান্ত বলো স্বীকৃত। তাঁরা সাধারণত ওইসব জিনিস এড়িয়ে চলেন, যেখানে মৌচাক জাতীয় কোনকিছু রয়েছে। তাঁরা বলতে গেলে মোটেও সে জাতীয় বস্তু বা কোনকিছু দেখতে পারেননা। একবার চোখ পরলেই শরীরের ঘিনঘিনে ভাবের জন্য তাঁদের জান বেরিয়ে যায়। তাঁদের মূলত একটাই ভয়, সেটা হচ্ছে পরপর ও পাশাপাশি অনেকগুলো ছিদ্র সম্বলিত কোন দ্রব্য, স্থান, ছবি, রোগ বা বস্তু। সবসময়ই তাঁদের মনে এই ভয়টাই কাজ করে যে, হয়তো এক্ষুণি আমার শরীরটা এরকম হয়ে যাবে! হয়তো এক্ষুণি ছিদ্রগুলোর মতো কিছু একটা তৈরি হয়ে যাবে! কি হবে আমার!
পৃথিবীতে কত বিচিত্র রকমের ভীতি বা ফোবিয়া যে আছে! কিন্তু সবচেয়ে অদ্ভূত ফোবিয়ার একটি হয়তো কোন গর্ত দেখে তীব্র ভয়ে আচ্ছন্ন হয়ে যাওয়া। নতুন এক গবেষণা এই ফোবিয়ার কারণ খুঁজে পেয়েছে। ফোবিয়াটির নাম ট্রাইপোফোবিয়া। যারা এই ফোবিয়াতে আক্রান্ত হয়, তারা সাবানের ফেনার বুদ বুদ, চকোলেট ড্রিঙ্কের উপর ভাসমান ফেনা কিংবা এমন কোন পদার্থ যাতে অনেক গর্ত রয়েছে, সেগুলো দেখামাত্রই মাইগ্রেন, শরীরে ঘাম চলে আসা কিংবা হার্ট বিট বেড়ে যাবার সমস্যায় আক্রান্ত হয়। কেন এরকম হয়? পরীক্ষা-নিরীক্ষা বলছে, এই ফোবিয়াত আক্রান্ত ব্যক্তিরা কোন গর্ত দেখলেই, তাদের অবচেতন মন সেটিকে কোন বিষাক্ত প্রাণীর মতো করে উপস্থাপন করে। যুক্তরাজ্যের এসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী জিওফ কোল বলেন” ট্রাইপোফোবিয়া অথবা গর্ত বা ছিদ্র-ভীতি খুব সাধারণ একটি ফোবিয়া। কিন্তু আমরা বেশিরভাগই এটি সম্পর্কে জানি না।“ কোল ও তার গবেষণা দল এই ফোবিয়া নিয়ে অনেক দিন ধরেই গবেষণা করে যাচ্ছেন। গবেষণাতে অংশগ্রহণকারী স্বেচ্ছাসেবকদের মাঝে শতকরা ১৬ ভাগের মাঝেই ‘গর্ত-ভীতির’ লক্ষণ প্রকাশিত হয়েছে। একজন তার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেন এভাবে, “ ছোট ছোট গর্ত বা ছিদ্র আমি একদমই সহ্য করতে পারি না। মনে হয় যেন গর্তগুলো আমার দিকে তাকিয়ে আছে। একটু পরই আমার দিকে ছুটে আসবে। তখন আমার ভীষণ কান্না পায়। আমার চারপাশ যেন ঘুরতে থাকে আমার সামনে…। “
আবার আরেকজন স্বেচ্ছাসেবী জানান, কোন ছিদ্র বা গর্ত দেখলেই সেটি তার কাছে ব্লু-রিং প্রজাতির অক্টোপাসের কথা মনে আসে। এই অক্টোপাস বিশ্বের সবচেয়ে বিষাক্ত প্রাণীগুলোর একটি। এছাড়া যারা এই ফোবিয়াতে আক্রান্ত হন তারা চোখের সামনে কোন গর্ত পড়লেই সেটিকে বিষাক্ত কোবরা সাপ, বিচ্ছু কিংবা মাকড়শা ভাবতে শুরু করেন। গবেষকদের ধারণা, অনেক প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের মাঝে বিষাক্ত ও বিপজ্জনক প্রাণীদের এড়িয়ে চলার প্রবণতা আছে। আর এই প্রাণীগুলোর বেশিরভাগই বিভিন্ন গর্তে বাস করে। ফলে মানুষ এসব গর্ত থেকে সতর্ক থাকতো। বিবর্তনের ধারায় এই গর্তভীতি এখনো অনেকেরই অবচেতন মনে রয়ে গিয়েছে বলে মনে করেন গবেষকরা। এই গবেষক দলের প্রধান জিওফ কোল নিজেও এই গর্ত-ভীতি রোগে আক্রান্ত ছিলেন। গর্ত দেখলেই তিনি বাকরুদ্ধ হয়ে যেতেন। ভয় থেকে বেরুবার জন্য তিনি জোর করে গর্ত বা ছিদ্রের বিভিন্ন ছবির দিকে তাকিয়ে থাকতেন। এক সময় তিনি সফল হন। তাদের গবেষণার ফলাফল সম্প্রতি সাইকোলজিক্যাল সায়েন্স জার্নালে প্রকাশ করা হয়েছে।