মাছ-শামুক সংরক্ষণের উদ্যোগ
Tweet
দেশে শামুকের ৪৫০টি প্রজাতি রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রাপ্য দুটি প্রজাতি হলো আপেল শামুক ও পন্ড স্নেইল। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চিংড়িঘেরগুলোয় হেক্টরপ্রতি দিনে গড়ে ৬৫ দশমিক ৫ কেজি শামুকের মাংস ব্যবহার হয়ে থাকে। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে শামুক বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
একইভাবে দেশি মাছও এখন বিলুপ্তির পথে। এ অবস্থায় দেশি মাছ, শামুক সংরক্ষণ ও উন্নয়নে প্রকল্প হাতে নিচ্ছে মৎস্য অধিদপ্তর। এর ফলে দেশের অভ্যন্তরীণ জলাশয়ে মাছ উৎপাদন ১৬ শতাংশ বাড়বে। প্রকল্পের মাধ্যমে উৎপাদন ৩ দশমিক ৮৩ টন থেকে বাড়িয়ে ৪ দশমিক ৪৬ লাখ টনে উন্নীত করা হবে।
আগামীকাল মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হচ্ছে। প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ২০২ কোটি ৪ লাখ টাকা। একনেকে অনুমোদনের পর চলতি বছর থেকে ২০২৪ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মৎস্য অধিদপ্তর।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, দেশে-বিদেশে শামুকের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দেশে খাদ্য হিসেবে শামুক গ্রহণে অভ্যস্ততা না থাকলেও অপ্রচলিত এ জলজ প্রাণীটি উপজাতীয় জনগোষ্ঠীর কাছে সুস্বাদু খাবার হিসেবেই বিবেচিত।
পাশাপাশি বিশে^র বিভিন্ন দেশে শামুকের মাংস খাদ্য হিসেবে প্রচলিত। এ ছাড়া দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গলদা চিংড়ির খাদ্য হিসেবে শামুকের মাংসের কদরও রয়েছে বেশ। হাঁস ও চিংড়ি মাছের খাদ্য হিসেবে শামুক ব্যবহার করা হয়। প্রকল্পের আওতায় দেশে শামুক চাষ বাড়ানো হবে মূলত প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য। পরে দেশে শামুকের বিস্তার বাড়লে চীন, ভারত, থাইল্যান্ড, নেপাল, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনে রপ্তানি করা হবে। এসব দেশে শামুকের স্যুপ খুব সুস্বাদু খাবার হিসেবে বিবেচিত। তবে দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বর্তমানে শামুক রপ্তানি হয় না বলা চলে।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দেশি মাছ ও শামুক সংরক্ষণ উন্নয়নের লক্ষ্যে ৩৯২ দেশীয় প্রজাতির মাছ চাষের প্রদর্শনী করা হবে। ১১০টি ধানক্ষেতে মাছ চাষ প্রদর্শনী ও ৩৯১টি পেনে মাছ চাষ প্রদর্শনী করা হবে। মৎস্য খাতসংশ্লিষ্ট প্রকল্প এলাকার ১ লাখ ৮ হাজার ৮৪৭ জন সুফলভোগীর দক্ষতা উন্নয়ন করা হবে।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ঢাকা বিভাগের গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুরের সব উপজেলা, ফরিদপুরের দুই উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। বরিশাল, ঝালকাঠি, পিরোজপুর ও বরগুনার সব উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। খুলনা বিভাগের নড়াইল ও বাগেরহাটের সব উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ১৬০ মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপন এবং ২৪০ মৎস্য অভয়াশ্রম পুনঃসংরক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হবে।
৩৯২টি দেশি মাছের প্রদর্শনী খামার, ৩৯২টি স্থানভেদে লাগসই প্রযুক্তির প্রদর্শনী স্থাপন করবে সরকার। ১৯৬টি বিল নার্সারি স্থাপন, ২টি বাঁওড়, ১১০টি বিলে দেশীয় প্রজাতি ও রুই মাছের পোনা অবমুক্ত করা হবে। ১১০টি পর্যায়ক্রমে ধানক্ষেতে পেনে মাছ চাষের প্রদর্শনী করা হবে। ১০০ ইউনিট খাঁচায় মাছ চাষ ও ১৫টি শামুকের প্রদর্শনী করবে সরকার।