ফলের এক টুকরো স্বর্গরাজ্য বিজয়নগর, বছরে উৎপাদন ৫০ কোটি টাকার ফল
Tweet
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্তবর্তী জেলা বিজয়নগর ফলের স্বর্গরাজ্য নামে পরিচিত। সদর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। বিজয়নগরের মাটি ফল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বর্তমানে দেশি ও বিদেশি অনেক ধরনের ফলের বাণিজ্যিক চাষ হচ্ছে এ উপজেলায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রতি বছর বিজয়নগরে প্রায় ৫০ কোটি টাকার ফল উৎপাদন হয়।
উৎপাদিত দেশি ফলের মধ্যে রয়েছে- লিচু, কাঁঠাল, আম, জাম, মালটা, কমলা ও লটকন। এছাড়া বিদেশি ফলের মধ্যে রয়েছে- আপেল, আঙ্গুর ও ড্রাগন।
এদিকে চলতি বছর এ উপজেলায় ৪১৪ হেক্টর জমিতে লিচু ও ৩১৫ হেক্টর জমিতে কাঁঠাল এবং ৬৫ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ হয়েছে।
এবার প্রায় ১৮ হেক্টর জমিতে লটকনের চাষ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এই লকটন বিক্রি শুরু হয়েছে। প্রতি কেজি লটকন পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। কৃষি সংশ্লিষ্টরা জানান, এ বছর বিজয়নগরে প্রায় কোটি টাকার লটকন বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে। ফলন ভালো হওয়ায় লটকনের চাষ নিয়ে চাষিদের মধ্যে আগ্রহ বাড়ছে।
জানা যায়, এ বছর প্রায় ১০ কোটি টাকার বেশি কাঁঠাল, প্রায় ১৫ কোটি টাকার লিচু ও ১৩ কোটি টাকার মালটা বিক্রি হয়েছে। এছাড়া চলতি বছর এক কোটি টাকার লটকন বিক্রি করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
উপজেলার ১৮ হেক্টর লটকন বাগানের মধ্যে প্রায় ১০ হেক্টর লটকনের বাগান রয়েছে উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নে। এ ইউনিয়নের বামুটিয়া গ্রামের চাষি তোফাজ্জল হোসেন জানান, তার বাগানে মালটা, লটকন, কমলা, কয়েক জাতের আম, লিচু, পেঁপে, কাঁঠাল, ড্রাগন ও সৌদি আরবের খেজুর গাছ রয়েছে। পৃথিবীর সবচেয়ে দামি আম “মিয়াজাকি” ধরে আছে তার বাগানে। মিয়াজাকি আমকে বাংলাদেশে সূর্যডিম আম হিসেবে পরিচিত।
চাষি তোফাজ্জল হোসেন জানান, ‘লটকন চাষ খুব সহজ। অযত্নতেও লটকন গাছ বেড়ে উঠে। তবে লটকনের চারা লাগানোর সময় জায়গা বাছাই করতে হয় নিয়ম মেনে। পানি আটকায় না ও ছায়াযুক্ত এলাকা লটকনের জন্য উপযুক্ত।’
উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘মাটির গুণের বিজয়নগরে সব ধরনের ফল ভালো ফলন হয়। গত কয়েক বছর ধরে চাষিরা সুমিষ্ট ফল লটকনের দিকে ঝুঁকছেন। এবারও লটকনের ভালো ফলন হয়েছে। পাহাড়পুর ইউনিয়নেই ১০ হেক্টর জমিতে লটকনের চাষ করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘প্রতি হেক্টরে কমপক্ষে ২০০ থেকে ২৫০ লটকনের চারা লাগানো যায়। একেকটি পূর্ণাঙ্গ গাছে ৮০ থেকে ১০০ কেজি লটকন পাওয়া যায়। কম যত্ন করেও ভালো ফলন হয় বিধায় আমরা চাষিদেরকে লটকন চাষে আগ্রহ বাড়াতে কাজ করছি। প্রত্যেকের বাড়ির অন্য গাছের ছায়ায় একটি করে হলেও লটকনের চারা লাগানোর পরামর্শ দিচ্ছি।’
উপজেলার সিঙ্গারবিল ইউনিয়নের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি অফিসার মো. হাদিউল ইসলাম সৃজন বলেন, ‘ফলের জন্য উর্বর ভূমি বিজয়নগর উপজেলা। দেশি, বিদেশি সব জাতের ফলই এখানে বাণিজ্যিভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। কৃষি অফিস থেকে সাধ্যমত সব ধরনের সহযোগিতা করা হয় চাষিদেরকে।’
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মুন্সী তোফায়েল হোসেন বলেন, ‘বিজয়নগর হচ্ছে ফলের স্বর্গরাজ্য। বিজয়নগরে নানা জাতের ফল বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয়। আমরা চাষিদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ ও সহযোগিতা করি।’
তিনি বলেন, ‘বিজয়নগরে প্রতি বছর প্রায় ৫০ কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের ফল বিক্রি করা হয়।’