ঘুরে আসতে পারেন ময়নামতি জাদুঘর
Tweet
শিক্ষা, শিল্প-সাহিত্য, সংস্কৃতির পীঠস্থান হিসেবে কুমিল্লার অতীত ইতিহাস অত্যন্ত সমৃদ্ধ। খাদি কাপড় এবং রসমালাইয়ের জন্য বিখ্যাত এই জেলাটি এক সময় ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অংশ ছিলো। অতীত কাল হতেই একে ঘিরে গড়ে ওঠে সমৃদ্ধ এক জনপদ। এই অঞ্চলের এই সমৃদ্ধির সাক্ষ্য পাওয়া যায় এখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানা প্রাচীন পুরাকীর্তির। এইসব পুরাকীর্তির খননকালে মাটির নিচ হতে উদ্ধার করা হয় মূল্যবান পুরাতত্ত্ব সামগ্রীর। এইসব পুরাকীর্তির সংরক্ষণ ও প্রদর্শনের জন্য এখানে গড়ে তোলা হয় ময়নামতি জাদুঘর।
১৯৬৫ সালে কুমিল্লা কোটবাড়ির শালবন বিহারের দক্ষিণ পাশে শালবনকে সামনে রেখে পশ্চিমমুখী এই জাদুঘর স্থাপন করা হয়। এই জাদুঘরে ভবদের মহাবিহার, কোটিলা মুড়া, চারপত্র মুড়া, রূপবানমুড়া, ইটাখোলা মুড়া, আনন্দ বিহার, রানীর বাংলা ও ভোজ রাজার বাড়ি বিহারের খননকালে প্রাপ্ত নানা মূল্যবান পুরাতত্ত্ব এখানে জায়গা করে নেয়।
পরবর্তীতে ১৯৭১ সালে জাদুঘরটিকে বর্ধিত করা হয় এবং এটি এখন ইংরেজি T আকৃতি ধারণ করে। এখানে মোট ৪২ টি আঁধার রয়েছে যেগুলোয় পুরাকীর্তি গুলো প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়। প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান খনন হতে প্রাপ্ত বিভিন্ন ধ্বংসাবশেষের ভূমি নকশা, ধাতু লিপি ফলক, প্রাচীন মুদ্রা, মৃন্ময় মুদ্রক-মুদ্রিকা, পোড়া মাটির ফলক, ব্রোঞ্জ মূর্তি, পাথরের মূর্তি, লোহার পেরেক, পাথরের গুটিকা, অলংকারের অংশ এবং ঘরে ব্যবহৃত মাটির হাড়ি পাতিল এখানে প্রদর্শিত রয়েছে। এছাড়া আছে কিছু পাথর ও ছোট বড় ব্রোঞ্জ মূর্তি। জাদুঘরে প্রদর্শনের উল্লেখযোগ্য পাথর ও ব্রোঞ্জ মূর্তি গুলোর মধ্যে রয়েছে- বিভিন্ন ধরনের পাথরের দণ্ডায়মান লোকোত্তর বুদ্ধ মূর্তি, ত্রি বিক্রম বিষ্ণুমূর্তি, তারা মূর্তি, মরীচি মূর্তি, মঞ্জুরের মূর্তি, পার্বতী মূর্তি, হরগৌরী মূর্তি, নন্দী মূর্তি, মহিষমর্দিনী মূর্তি, মনসা মূর্তি, গণেশ মূর্তি, সূর্য মূর্তি, হেরুক মূর্তি এবং ব্রোঞ্জের বজ্রসত্ত্ব মূর্তি।
এছাড়াও এই পুরাকীর্তির জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে বিভিন্ন স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা, পোড়ামাটির ফলক, কাঠের কাজের নিদর্শন, মৃৎপাত্র ও প্রাচীন হস্ত লিপির নানা পাণ্ডুলিপি। এতো সব মূল্যবান এবং ঐতিহাসিক পুরাকীর্তির পাশাপাশি এখানে সংরক্ষিত আছে প্রায় ৩৭০ কেজি ওজনের ব্রোঞ্জের তৈরি বিশাল এক ঘণ্টা।
ময়নামতি জাদুঘর পরিদর্শনের সময়সূচি
ময়নামতি প্রত্মতাত্ত্বিক জাদুঘর দর্শনার্থীদের জন্য প্রতি সপ্তাহে শনিবার ব্যতীত অপর ছয়দিন খোলা থাকে। এ ছাড়া সপ্তাহের প্রতি রোববার ও সোমবার অর্ধ দিবস সাপ্তাহিক বন্ধ থাকে। গ্রীষ্মকালে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত জাদুঘর খোলা থাকে। মধ্যাহ্ন বিরতি হলো দুপুর ১টা থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। শীতকালে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। দুপুর ১টা থেকে ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত বিরতি। শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকেল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকে। রমজানে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত প্রদর্শনের সময়। মধ্যহ্ন বিরতি ১টা থেকে দুপুর ১টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত। এ ছাড়া জাদুঘরটি সরকারের অন্যান্য নির্বাহী আদেশে ঘোষিত সব ছুটির দিনেও বন্ধ থাকে।
খরচ
জনপ্রতি টিকেট ২০ টাকা।
পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের জন্য ফ্রি প্রবেশ সুবিধা।
মাধ্যমিক পর্যায়ের ছাত্র ছাত্রীর জন্য প্রবেশ মূল্য ৫ টাকা।
সার্ক-ভুক্ত বিদেশি দর্শনার্থীর জন্যে টিকেট মূল্য একশত টাকা এবং অন্যান্য বিদেশী দর্শকদের জন্য টিকেটের মূল্য দুইশত টাকা করে।
যেভাবে যাবেন
ঢাকার সায়েদাবাদ ও কমলাপুর হতে বেশ কয়েকটি ভালোমানের বাস পাওয়া যায়। কুমিল্লা পৌঁছাতে সময় লাগে মাত্র দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা। এ ছাড়া কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে ট্রেনেও আসা সহজ। ঢাকা থেকে কুমিল্লার দূরত্ব ৯৫ কিলোমিটার।
ঢাকা থেকে বাসে আসতে হলে সায়েদাবাদ থেকে এশিয়া ট্রান্সপোর্ট, এশিয়া লাইন বা তিশা ট্রান্সপোর্ট (এসি, নন-এসি উভয়ই রয়েছে), কমলাপুর থেকে রয়েল কোচ এসিতে করে আসতে পারেন। বাসে আসলে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্ট অথবা কোটবাড়ি বিশ্বরোড নেমে যাবেন। ভাড়া নেবে ১৫০-৩০০ টাকা পর্যন্ত। ক্যান্টনমেন্ট থেকে ক্যান্টনমেন্টের ভিতর দিয়ে কোটবাড়ি যাওয়ার বাস (ভাড়া ১৬ টাকা) অথবা কোটবাড়ি বিশ্বরোডে থেকে কোটবাড়ি যেতে সিএনজিতে জনপ্রতি ভাড়া পড়বে ১০ টাকা।
চট্টগ্রাম থেকে বাসে করে কুমিল্লা আসতে সৌদিয়া ট্রান্সপোর্টে (এসি, নন-এসি) চড়ে আসবেন কুমিল্লার পাদুয়ার বাজার বিশ্বরোড দিয়ে জাঙ্গালিয়া নেমে যাবেন, ভাড়া নেবে ২০০-৩০০ টাকা। আড়াই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগবে। জাঙ্গালিয়া নেমে টমছমব্রিজ অটোতে করে পাঁচ টাকা নিবে। কুমিল্লা শহর থেকে ১০ কিলোমিটার এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা বাইপাস নন্দনপুর থেকে তিন কিলোমিটার পশ্চিমে ময়নামতি জাদুঘর। সিএনজিচালত রিকশা/ইজিবাইকে করে কোটবাড়ি থেকে ময়নামতি জাদুঘরে জনপ্রতি ভাড়া ১০ টাকা।
যেখানে থাকবেন
কুমিল্লা এসে থাকতে পারেন, বেশ কয়েকটি ভালোমানের হোটেল আছে এখানে। তাছাড়া বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমিতে (বার্ড) পরিচিত কেউ থাকলে বা আগে যোগাযোগ করে থাকার ব্যবস্থা করতে পারেন।