মাহেলা জয়াবর্ধনেঃ দ্যা শ্রীলঙ্কান ম্যাজেস্টিক।
Tweet
২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ ফাইনালে মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে, জহির খানের ফুল লেংথ ডেলিভারিকে কাভারের উপর দিয়ে ৪ মেরে শতক পূর্ণ করার পর, ধারাভাষ্যকার বলছিলেন, ” এ হাইক্লাস ইনিংস ফ্রম এ হাইক্লাস প্লেয়ার, এবসুলূটলি ব্রিলিয়ান্ট” এই কথাগুলো দ্বারাই বুঝা যায় মাহেলা কেমন প্লেয়ার ছিলেন কিংবা কেমন ব্যাটসম্যান ছিলেন। সেদিন ৮৮ বলে ১০৩ রান করেও ম্যাচ হেরে যান, কিন্তু তার ইনিংসটি তাকে মনে করাতে বাধ্য করে।
১৯৭৭ সালের ২৭ই মে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোতে সুনীলা এবং সেনেরাথ দম্পতির ঘরে জন্ম হয় এই লংকান গ্রেটের। তিনি ছিলেন তাদের প্রথম সন্তান। তার পুরো নাম দেনাগামাগে প্রবোধ মাহেলা ডি সিলভা জয়াবর্ধনে। যাকে ক্রিকেট বিশ্ব সংক্ষেপে মাহেলা জয়াবর্ধনে নামেই চিনে। তার একটি ভাই ছিল যার নাম ছিল ধিশাল। কিন্তু মস্তিষ্কে টিউমার হয়ে খুব কম বয়সে মারা যান, যেটি তার জীবনের অন্যতম ট্রাজিক ঘটনা।
ব্যাট বলের এই খেলাটার প্রতি নেশা আর ভালোবাসা জন্মায় খুব ছোট বয়স থেকেই। খেলাটা খেলতেনও দারুন। স্কুল এর অনূর্ধ্ব -১৩ দলের ক্যাপ্টেন ছিলেন। খেলতেন ক্রিকেটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পজিশন “নাম্বার-৩”। দারুন টেকনিক আর লম্বা ইনিংস খেলার জন্য স্কুলে খুব দ্রুতই নামডাক ছড়িয়ে পরে। তারই ফসল ১৯৯৫ সালে সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবের হয়ে ক্রিকেটে প্রফেশনাল জগতে প্রবেশ করেন। ১৯৯৭-৯৮ সিজনে টানা ৪ সেঞ্চুরি হাকিয়ে ডাক পান শ্রীলঙ্কার টেস্ট দলে।
১৯৯৭ সালে ভারতের বিপক্ষে প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে অভিষেক হয় টেস্ট ক্রিকেটে। তবে উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেন নাই। তবে ক্রিকেটে বিশ্বকে জানান দেন ১৯৯৯ সালে ভারতের বিপক্ষেই সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাবে ২৪২ রানের নান্দনিক ইনিংস খেলার পর। টেস্ট তার বেশ কিছু স্মরণীয় ইনিংস আছে, তার মধ্যে তার ক্যারিয়ার সেরা ৩৭৪ নিয়ে কথা না বললেই নয়। লংকান্দের টেস্ট ইতিহাসের সর্বচ্চো রানের ইনিংসটি তারই (৩৭৪, সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে)। এই ইনিংস খেলার পথেই কুমার সাঙ্গাকারা সাথে গড়েন ৬২৪ রানেই ঐতিহাসিক জুটি। ক্যারিয়ারে এমন বহু তার কথন আছে লাল বলের ক্রিকেটে। ২০১৪ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলেন শেষ টেস্ট। ক্যারিয়ারে মোট টেস্ট খেলেছেন ১৪৯ টি, সেখানে ২৫২ ইনিংসে পঞ্চাশ গড় ছুইছুই (৪৯.৮৫) তে করেন ১১,৮১৪ রান। যাতে হাফ সেঞ্চুরি ৫০ টি আর শতক ৩৪ টি, ডাবল সেঞ্চুরি আছে ৭ টি।
টেস্ট ক্রিকেটের পাশাপাশি ওয়ানডেতেও ছিলেন সমান ভাবে উজ্জ্বল। ১৯৯৮ সালে অভিষেকের পর ২০১৫ সালে বিদায় জানানোর আগে দেশের হয়ে খেলেছেন ৪৪৮ ম্যাচ,যাতে ৪১৮ ইনিংসে ৩৩.৩৮ গড়ে রান ১২,৬৫০। ৭৭ টি হাফ সেঞ্চুরির পাশাপাশি ১৯ টি শতক হাকিয়েছেন। দেশকে ২০০৭ আর ২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনালে তুলেছেন। একবার গ্রিলক্রিষ্ট আর আরেকবার ধোনি তান্ডবে শিরোপা ছুয়ে দেখা হয়নি।
মাহেলা খেলেছেন ক্রিকেটের ক্ষুদে ফরম্যাটেও। ৫৫ ম্যাচে ব্যাট হাতে রান ১৪৯৩। আছে ১ টি সেঞ্চুরি। ওয়ানডেতে বিশ্বকাপ জিতা না হলে টি-টোয়েন্টি তে ২০১৪ সালে জিতেছেন বিশ্বকাপ।
মাহেলা একজন ভালো ব্যাটসম্যান এর পাশাপাশি ছিলেন, দারুণ ফিল্ডার। স্লিপে ক্যাচ খুব কমই ছুটেছে তার হাত থেকে। যার প্রমান পুরো ক্যারিয়ারে মোট ক্যাচ ধরেছেন ৪৪০ টি।
এছাড়াও বেশ কিছু রেকর্ড আছে তার মধ্যে ২৫,৯৫৭ রান নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেটে ৪থ রান সংগ্রহকারী তিনি। শচীন টেন্ডুলকারের পর সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলা প্লেয়ার তিনি ৬৫২ ম্যাচ। সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠে ২৯২১ রান করে টেস্ট এক স্টেডিয়ামে সবচেয়ে বেশি রানের রেকর্ড তার দখলে।
দারুণ ব্যাটিং টেকনিক আর ধরে খেলার জন্য লংকানদের ৩ নাম্বারে ছিলেন আস্থার প্রতীক। তার ড্রাইভ আর ফ্লিক শট গুল ছিলো চোখের শান্তি।
খেলা ছাড়ার পর কোচিং পেশায় যুক্ত হয়েছেন ছিলেন আইপিএল দল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের কোচ। বর্তমানে নিজ দেশের কোচিং কনসালটেন্ট হিসেবে নিযুক্ত আছেন।
গতকাল ছিল ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যানের ৪৬ তম জন্মদিন।
কার্টেসি:- জিহাদ সাদেক।