ভ্রমণে নিরাপদ থাকার কিছু টিপস
Tweet
পুরো দুনিয়া ঘুরে বেড়ানো হয়ত অনেকের ই স্বপ্ন আর এর একটা অন্যরকম থ্রিল আছে। বেশিরভাগ সময়ই সবাই ঘুরতে গিয়ে নিরাপদে ফিরে আসে। তবে কম হলেও অনেকের সাথে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে যায়, আবার একটু সতর্ক থাকলে এসব এড়ানো যায়। ভ্রমণের সময় নিরাপত্তা নিয়ে অনেকেই খুব একটা ভাবে না আবার এমন অনেক আছে যারা অনেক বেশি ভেবে নিয়ে ঘর থেকেই বের হোন না। দেশের বাইরে আর দেশে কোন দুর্ঘটনার কবলে পড়া একই, দেশে থাকলে মানুষের সান্ত্বনা পাবেন বাইরে থাকলে সেটা হয়ত পাবেন না এতটুকুই।
স্বদেশ কিংবা বিদেশ যেখানেই ভ্রমণ করুন না কেন কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকলে ভ্রমণ হবে নিরাপদ ও আরামদায়ক।
অনেকেই ভ্রমণের সময় খেয়ালের বশে কিংবা অজ্ঞতাবশত কিছু ভুল করে থাকেন। আর তাই পড়তে হয় বিড়ম্বনায়। এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক তেমন কিছু বিষয় সম্পর্কে।
* ভ্রমণের সময় অপরিচিত কারো দেওয়া ব্যাগ কিংবা অন্যকোনো সামগ্রী নিজ দায়িত্বে রাখা কিংবা বহন ঝুঁকিপূর্ণ। সড়ক, রেল, নৌ কিংবা আকাশ পথে ভ্রমণের সময় অপরিচিত কেউ যদি আপনার হাতে কোনো ব্যাগ দিতে চায় বা রাখতে বলে বিনয়ের সঙ্গে না বলুন কিংবা তাকে এড়িয়ে চলুন। সন্দেহজনক আচরণের কেউ যদি কোনো কিছু দেখে রাখতে বলে তবে সাবধান থাকুন।
* এয়ারপোর্টের বিড়ম্বনা এড়াতে অনেকে সহযাত্রীর মাধ্যমে নির্ধারিত ওজনের অতিরিক্ত মালামাল বহনের চেষ্টা করেন। অনেককেই বলতে শোনা যায়, ভাই/আপা আমার ব্যাগে ৪/৫ কেজি বাড়তি মালামাল আছে। আপনারতো কিছু কম আছে। আপনি এটা যদি পাস করে দেন তবে, আমার উপকার হয়।- দেশী মানুষ ভেবে আপনি হয়তোবা মানবতার খাতিরে ব্যাগটা নিয়ে পার করে দেওয়ার কথা ভাবলেন। ভুলে গেলে চলবে না, ব্যাগে অবৈধ কোনো জিনিসপত্র থাকলে আপনি নিজেই বিপদে পড়বেন।
* বাস, ট্রেন ও অন্যান্য যানবাহনের টিকিটে লেখা থাকে অপরিচিত লোকের দেওয়া কিছু খাবেন না। তারপরেও অনেকে এ বিষয়ে লোভ সামলাতে পারেন না। আবার অনেকে ভদ্রতার খাতিরে হালুয়া কিংবা কোল্ড ড্রিংস খাওয়ার পর সোজা চলে যান হাসপাতালে। অবশ্য তাদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় থাকে না।
* যানবাহনে চলাচলে নিজের খাবার নিজে খান। অন্যের সঙ্গে খাবার বিনিময় করা থেকে বিরত থাকুন।
* একটা সময় ছিল যখন পুরুষদের পকেটে সবসময় একটা ছোট রুমাল থাকতো। হাঁচি কিংবা কাশি এলে ‘নতুন বরের’ মতো তারা রুমাল দিয়ে মুখ ঢেকে রাখতেন। এখন সবকিছুতেই ডিজিটালের ছোঁয়া লেগেছে। অনেকেই এখন রুমালের পরিবর্তে টিস্যু পেপার ব্যবহার করেন। যাদের সর্দি কাশি আছে তারা সবসময় সঙ্গে একটি ছোট রুমাল রাখুন। যাত্রা পথে কারো কাছ থেকে টিস্যু চাওয়া থেকে বিরত থাকুন। হতে পারে একটি টিস্যুই আপনার যাত্রাপথে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার অন্যতম কারণ।
* ট্রেনে চলাচলে জানালা বন্ধ করে রাখুন। হরতাল, অবরোধ ছাড়াই মাঝেমধ্যে চলন্ত ট্রেনে ‘দুষ্ট লোকের’ ছোঁড়া ইটপাটকেলে যাত্রীদের আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে আপনার সিটের পাশের জানালাটি বন্ধ আছে কি-না তা দেখে নিন। চলন্ত ট্রেনে দরজা খুলে দাঁড়িয়ে থাকাও ঝুঁকিপূর্ণ। এতে দুর্ঘটনার আশংকা থাকে।
* বাসে ভ্রমণের সময় যাত্রীদের লাগেজ কিংবা মালামাল পরিবহনে টোকেন দেওয়া হয়। টোকেন থাকা স্বত্ত্বেও মাঝেমধ্যে মালামাল চুরি হওয়ার আশংকা থাকে। গাড়ি থেকে নামার স্টপেজগুলোতে লাগেজ নামানোর সময় খেয়াল রাখুন আপনার কোনো ব্যাগ হাতবদল হচ্ছে না-তো। অনেক সময় একই রকমের ব্যাগ হাতবদল হয়। একজনের ব্যাগ অন্যজনের কাছে চলে যায়। ব্যাগে চাইলে একটি রঙিন ফিতা লাগিয়ে রাখতে পারেন যাতে দূর থেকে আপনার ব্যাগ শণাক্ত করতে পারেন।
* নৌপথে পরিবহনে কেবিন থেকে বের হয়ে বাইরে পায়চারি করার আগে জানালা বন্ধ করে রাখুন। জানালার পাশে হাতব্যাগ কিংবা মূল্যবান জিনিসপত্র না রাখাই ভালো। মালামাল নামানোর সময় সম্ভব হলে নিজেই বহন করুন। কুলিদের হাতে মালামাল বহন ঝুঁকিপূর্ণ। কখন যে জনমানুষের ভিড়ে কোন দিকে আপনার জিনিসপত্র নিয়ে কেটে পড়বে তা হয়তো বুঝতেই পারবেন না। হাজারো লোকের ভিড়ে আপনার মালামাল হারাতে না চাইলে এ বিষয়ে সতর্ক থাকুন।
* যানবাহনে নতুন পরিচিত কারো সঙ্গে কথাবার্তায় ব্যক্তিগত, পারিবারিক, পেশাগত কিংবা ব্যবসায়িক আলাপচারিতা থেকে বিরত থাকুন। মোবাইলে যত কম কথা বলা যায় ততই ভালো। খুব জরুরি না হলে বলুন গাড়ি থেকে নেমে ফোন দিচ্ছি।
* যাত্রাপথে আপনার যদি মনে হয় কেউ আপনাকে ‘ফলো’ করছে কিংবা সন্দেহমূলক গতিবিধি দেখলে দ্রুত নিরাপদ স্থানে চলে যান। কিংবা স্থানীয় আইনপ্রয়োগকারী পুলিশ কিংবা দায়িত্বরত কারো সহযোগিতা নিন।
* প্রতিটি অঞ্চলের রয়েছে নিজস্ব সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ। কোথাও ভ্রমণের আগে তা জেনে নিন। কথায় বলে একই শব্দ কারো ভাষায় গালি আবার কারো মুখের বুলি। অঞ্চলভেদে কিছু শব্দের ব্যবহারে সীমাবদ্ধতা রয়েছে। সিলেট, চট্রগ্র্রাম, নোয়াখালি, বরিশাল ও ময়মনসিংয়ের নিজস্ব কিছু শব্দভাণ্ডার রয়েছে। যেগুলো বলার আগে আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে।
* ছোট ছেলেমেয়েদের নিয়ে ভ্রমণের সময় তাদের পকেটে একটি আইডি কার্ড কিংবা আপনার ফোন নম্বর ও বাসার ঠিকানাসংবলিত একটুকরো কাগজ লিখে দিন। অবশ্যই তাদেরকে আপনার ফোন নম্বর ও বাসার ঠিকানা মুখস্ত করিয়ে নিন।