ঘুরে আসুন এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম বটগাছ
Tweet
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে রয়েছে এশিয়া মহাদেশের প্রাচীন বৃহত্তম বটগাছ। জেলার কালীগঞ্জ উপজেলা শহর থেকে পূর্বে আট কিলোমিটার দূরে ৮ নম্বর মালিঘাট ইউনিয়নের বেথুলী মৌজায় এই বটগাছের অবস্থান। স্থানীয়রা জানান, ১৯৮২ সালের পূর্ব পর্যন্ত এশিয়া মহাদেশের মধ্যে বৃহত্তম বটগাছ বলে পরিচিতি ছিল কলকাতার বোটানিক্যাল গার্ডেনের একটি গাছ। পরে বিবিসির এক তথ্যানুষ্ঠান প্রতিবেদনে প্রচার হয়। কালীগঞ্জ উপজেলার বেথুলী মৌজার সুইতলা মল্লিকপুরের বটগাছই এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম বটগাছ। ১১ একর জমিজুড়ে রয়েছে এর অস্তিত্ব। এর উচ্চতা আনুমানিক ২৫০ থেকে ৩০০ ফুট। বর্তমানে বটগাছটি ৫২টি বটগাছে রূপ নিয়েছে।
১৯৮৪ সালে এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তম খ্যাত এ বটগাছের অবস্থান ও নামকরণ নিয়ে রয়েছে নানা জটিলতা এবং রয়েছে কিংবদন্তি। কারো কাছে সুইতলার বটগাছ, কারো কাছে সুইতলা মল্লিকপুরের বটগাছ, আবার কারো কাছে বেথুলীর বটগাছ বলে এটি পরিচিত। বিবিসির জরিপে একে এশিয়ার সবচেয়ে বড় বটগাছ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। আর ২০০৯ সাল থেকে সামাজিক বন বিভাগ যশোর এ বটগাছটির ব্যবস্থাপনা করে আসছে। গাছটি সম্পর্কে স্থানীয়রা কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে পারেনি, তবে প্রায় দুইশ’ থেকে তিনশ’ বছর পুরোনো বলে ধারণা করা হয়।
এই গাছের উৎপত্তি সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য জানা না গেলেও এলাকার বয়োবৃদ্ধদের মুখে জানা যায়, একটি কুয়ার পাড়ে ছিল এই গাছের মূল অংশ। তখন জনবসতি ছিল খুবই কম। রাস্তার পাশে এই গাছটি ছিল ডালপালা পাতায় পরিপূর্ণ। গাছের নিচে রোদ-বৃষ্টি পড়ত না। মাঘ মাসের শীতের রাতেও গাছের তলায় গরম থাকত। গরমকালে গাছের নিচে ঠান্ডা লাগত। পথিকরা গাছের তলায় শুয়ে-বসে বিশ্রাম নিত। বাস্তবে এই এলাকায় সুইতলা নামক কোনো স্থানের অস্তিত্ব নেই। তাই বয়োবৃদ্ধদের ধারণা, পথশ্রান্ত পথিকরা যখন এই মনোরম স্থানে শুয়ে-বসে বিশ্রাম নিত, তখন থেকেই অনেকের কাছে এটি সুইতলা বটগাছ বলে পরিচিতি লাভ করে। আর এর থেকেই নামকরণ হয় সুইতলা বটগাছ।
মূল গাছ এখন আর নেই। বর্তমানে প্রায় দু-তিনশ ‘ব’ নেমে প্রায় ১১ একর জমি দখল করে নিয়েছে এই বৃহত্তম গাছটি। বটগাছটি কেন্দ্র করে পাশেই বাংলা ১৩৬০ সালের দিকে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বেথুলী বা মল্লিকপুরের বাজার।
এশিয়া মহাদেশের বৃহত্তর বটগাছের ঐতিহাসিক দিক বিবেচনা করে অনেক স্থান থেকে প্রতিনিয়ত দর্শনার্থীরা আসেন। এর গুরুত্ব বিবেচনা করেই ১৯৯০ সালেই বটগাছের পাশেই প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি রেস্টহাউস নির্মাণ করা হয়।
যেভাবে আসবেন
ঢাকা থেকে ঝিনাইদহের দূরত্ব ২০০ কিলোমিটার আর গন্তব্য পর্যন্ত, অর্থাৎ কালীগঞ্জ পৌঁছাতে আর ১৬ কিলোমিটার যেতে হয়।
রাজধানী ঢাকা থেকে প্রতিদিন ঝিনাইদহ ও কালীগঞ্জের উদ্দেশে বেশ কিছু এসি, ননএসি পরিবহন ছেড়ে আসে। এছাড়া ব্যক্তিগত গাড়িতে করেও আসতে পারবেন।
যেখানে থাকবেন
এশিয়ার বৃহত্তম বটগাছটি কালীগঞ্জ উপজেলা শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। সেখানে একটি রেস্টহাউস রয়েছে, তবে সেখানে এক-আধবেলা বিশ্রাম নেওয়া যায়। রাতে থাকার জন্য কালীগঞ্জ উপজেলা শহরে কয়েকটি সরকারি-বেসরকারি রেস্টহাউস রয়েছে।
কী খাবেন
এখানে আশপাশে কিছু দোকানপাট রয়েছে, যেখানে হালকা নাশতা করা যায়। এছাড়া উপজেলা শহরে খাবারের অনেক হোটেল পাবেন।