ঘুরে আসুন ফাতরার বন
Tweet
সাগরকন্যা খ্যাত পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া থানার অন্তর্গত বঙ্গোপসাগরের বুকে জেগে ওঠা একটি চরের নাম ‘ফাতরার চর’। যদিও বন বিভাগের নামানুসারে এর নাম ‘ফাতরার বন’। মূলত সুন্দরবনেরই একটি অংশ পটুয়াখালীর এই অংশে এসে নাম নিয়েছে ফাতরার চর। বিখ্যাত সমুদ্রসৈকত কুয়াকাটাকে চেনে না এমন কম মানুষই আছে। সেই কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর ও খাল পেরিয়ে ট্রলারে করে মাত্র এক ঘণ্টা সময় লাগে এই চরে যেতে।
আগেই বলেছি, সুন্দরবনের একটি অংশ হচ্ছে এই চর। তাই এটিও একটি ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট। দিনে দুবার এটি জোয়ার-ভাটায় প্লাবিত হয়। বনে সুন্দরী, কেওড়া, বাইন, গোলপাতাসহ আরো বিভিন্ন প্রজাতির ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ দেখা যায়। অজগর, গোখরা, গুই সাপের মতো সরীসৃপেরও দেখা পেতে পারেন ভাগ্য সহায় হলে। এ ছাড়া ছোট-বড় বিভিন্ন প্রজাতির পাখির ডাকে আপনি বিমোহিত হবেন।
দিগন্ত বিস্তৃত সমুদ্রের বুকে চলার কিছুক্ষণ পরই আপনার চোখে পড়বে সাগরের বুকে জেগে ওঠা ফাতরার চরের বনভূমি। এ যেন সাগরের বুকে ভাসমান কোনো অরণ্য। ট্রলারে চেপে যখনই আপনি ফাতরার চরের খালে ঢুকবেন, তখনই আপনাকে স্বাগত জানাবে দুপাশের ঘন সবুজ অরণ্য। ট্রলারের জেটি পেরিয়ে আপনি চরের ভেতরে ঢুকলেই চোখে পড়বে শান-বাঁধানো একটি পুকুর ও বন বিভাগ নির্মিত একটি রেস্টহাউস। মূলত চরে অস্থায়ীভাবে বসবাস করা মানুষের মিঠাপানির জন্য করা হয়েছে এই পুকুর। বন বিভাগের কয়েকজন বনরক্ষী ছাড়া এখানে কেউ স্থায়ীভাবে বসবাস করে না। পুকুরপাড় দিয়ে আপনি এবার প্রবেশ করবেন ঘন গহিন অরণ্যে। প্রকৃতির এই নিস্তব্ধতার মাঝে ক্ষণে ক্ষণে ডেকে ওঠা পাখির ডাক আপনাকে নিয়ে যাবে এক অন্য জগতে। চরের পূর্ব অংশে রয়েছে একটি ছোট সমুদ্রসৈকত, ভাটার সময়ে আপনি নামতে পারেন এই সৈকতটিতে। এখানে যেতে হলে বনের সবুজ অরণ্য আর কয়েকটি ছোট খালের ওপরে তৈরি বাঁশের সাঁকো পেরিয়ে যেতে হবে। ঘন সবুজ পেরিয়ে সাগরের বিশালতা মুগ্ধ করবে যেকোনো ভ্রমণপিয়াসী মানুষকে। তবে দৃষ্টিনন্দন এই চরটিতে এখনো পর্যটকদের জন্য থাকার কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি। আপনি মাত্র দুই ঘণ্টা সুযোগ পাবেন চরটি ঘুরতে। তবে বন বিভাগের কোনো কর্তাব্যক্তির অনুমতি সাপেক্ষে আপনি থাকতে পারেন ওই রেস্টহাউসে। সে ক্ষেত্রে সাক্ষী হওয়ার সুযোগ মিলতে পারে সাগরের বুকে জেগে ওঠা এক গহিন অরণ্যের বিচিত্র সব ঘটনা প্রত্যক্ষ করার। কেবল নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়েই আপনি ঢুকতে পারবেন ফাতরার চরে। ভ্রমণপিয়াসী মানুষের জন্য মাত্র দুই ঘণ্টা হয়তো কয়েক মিনিটের সমান। তবে নাগরিক কোলাহল থেকে ক্ষণিক সময়ের প্রকৃতির এই নৈসর্গিক রূপ আপনাকে রসদ জোগাবে আরো বহুদিন যান্ত্রিকতার ভিড়ে বেঁচে থাকার।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে আমতলীর লঞ্চে বা সাকুরা/মেঘনা/সুগন্ধা/পর্যটক বাসে এসে মোটর সাইকেলে তালতলি। এছাড়াও কুয়াকাটা থেকে টেংরাগিরি ইকোপার্ক বা ফাতরার বন যাওয়ার জন্য ট্রলারের ব্যবস্থা আছে। লোকাল,রিজার্ভ উভয় ভাবেই যাওয়া যায়।বনের ভিতর দিয়ে হেটে হেটে সাগর পাড়।
কোথায় থাকবেন
বনটিতে ঢুকলেই চোখে পড়বে শান-বাঁধানো একটি পুকুর ও এর পাশে বাংলোর মতো একটা বাড়ি। এটা আমতলী ফরেস্ট রেঞ্জের রেস্টহাউস।
কী খাবেন
এখানে খাবারের দোকান আছে, যেখানে ভাত, মাছ, মুরগির মাংস ভুনা পাওয়া যায়।