তাজমহল নিয়ে অজানা কিছু তথ্য!
Tweet
ভারতের আগ্রায় অবস্থিত তাজমহল সত্যিকারের ভালোবাসার প্রতীক। সপ্তদশ শতকে মুঘল সম্রাট শাহজাহান তার প্রয়াত স্ত্রী মুমতাজ মহলের স্মৃতির উদ্দেশে গড়ে তোলেন রাজকীয় এই সমাধিস্তম্ভ। এটি ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্যগুলোর অন্যতম। প্রতি বছর এখানে ৭০-৮০ লাখ ভ্রমণপিপাসু ভিড় করে।
বিশ্বের সপ্তম আশ্চর্যের তালিকায় তাজমহল অন্যতম। ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত মুঘল আমলের এই স্থাপনা তৈরি করা
হয় ২২ বছর ধরে ২০ হাজার শ্রমিকের অক্লান্ত পরিশ্রমে। অবশ্য ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকা সত্ত্বেও তাজমহলের অনেক তথ্যই মানুষের অজানা। একনজরে জেনে নিন সেগুলো।
১. মুঘল সম্রাট শাহজাহানের তৃতীয় স্ত্রী ছিলেন মুমতাজ মহল।
বিয়ের আগে তার নাম ছিল আর্জুমান্দ বানো বেগম।
২.
মুঘল সম্রাটকে বিয়ে করার আগে মমতাজের অন্য একজনের সঙ্গে বিয়ে
হয়েছিল। মমতাজ মহলের
রূপে মোহিত শাহজাহান মমতাজের প্রথম স্বামীকে
খুব নির্মমভাবে হত্যা করেন। তারপর মমতাজকে
তিনি বিয়ে করেন।
৩. শাহজাহানের
১৪তম সন্তান জন্মদানের সময় ইন্তেকাল করেন মুমতাজ মহল।
৪. বুরহানপুরের শাহি কেল্লা থেকে কিছু দূরে জায়নাবাদের আহুখানার বরাদরিতে মমতাজকে অস্থায়ী ভাবে সমাহিত করা হয় প্রথমে।
৫. তাজমহলের ভেতর ও বাহিরের ক্যালিগ্রাফির
চমৎকার কাজ আছে। মমতাজ মহলের সমাধি ক্ষেত্রেও তাঁর পরিচিতি ও প্রশংসার শিলালিপি
দেখা যায়। সমাধিক্ষেত্রের একপাশে আল্লাহর ৯৯ নাম ক্যালিগ্রাফিক শিলালিপিতে অঙ্কিত
আছে।
৬. তাজমহল নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করতে কাজে লাগানো হয় প্রায় একহাজার হাতি।
৭. তাজমহলের
উচ্চতা ১৭১ মিটার বা ৫৬১ ফুট দীর্ঘ যা কুতুবমিনারের চেয়েও বড়।
৮. ভারতের পাঞ্জাব, রাজস্থান, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, চীন, তিব্বত ও
আরব দেশ থেকে আনা হয়েছিল তাজমহল নির্মাণের উপকরণ।
৯. ২৮ ধরণের মূল্যবান ও আধামূল্যবান পাথর
সাদা মার্বেলের উপর বসানো হয়েছিলো। যার মধ্যে আকর্ষণীয় নীলকান্তমণি ও ছিলো।
১০. তাজমহলের পিলারগুলো বাহিরের দিকে হেলানো।
ভূমিকম্প হলে এগুলো যেনো সমাধির উপরে না পরে এজন্যই এভাবে তৈরি করা হয়েছে।
১১. দিনের বিভিন্ন সময়ে তাজমহলের বিভিন্ন রঙ দেখা যায়। তাজমহল খুব ভোরে গোলাপী, দিনে সাদা ও চাঁদের আলোয় সোনালী রঙের দেখায়। তাজমহলের সাদা মার্বেল ও প্রতিফলিত টাইলস এর রঙের পরিবর্তনে সাহায্য করে।
১২. মোঘল
সম্রাটের সৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও তাজমহলের স্থাপত্যকলা ছিলো বিশ্বব্যপী অনুপ্রাণিত।
এটি নির্মাণ করা হয়েছে ইসলামিক, ফারসি ও ভারতীয় স্থাপত্যের
এক অপূর্ব মিশ্রণে।
১৩. তাজমহলের স্থপতির নাম সরকারি ভাবে কোথাও লেখা নেই। তবে এই স্থাপনাটির স্থপতি ছিলেন আহমেদ লাহোরি। দিল্লির শাহজাহানাবাদ ও লালকেল্লার স্থপতিও ছিলেন তিনি।
১৪. তাজমহল
নির্মাণের জন্য নিযুক্ত করা হয় ২২ হাজার মানুষ। এছাড়াও তাজমহলের নির্মাণ সামগ্রী বহনের জন্য
ব্যবহার করা হয়েছিলো ১০০০
হাতি।
১৫. বস্তুত
এই সুবিশাল সুরম্য সমাধিসৌধে কোথাও একমাত্র
লিপিকার আমানত খানের নাম ও তারিখ ছাড়া আর কোনো নাম বা তারিখ লেখা নেই।
১৬. তাজমহলের সব কিছুই প্রতিসম শুধুমাত্র
একটি জিনিষ ছাড়া। আর সেটি হচ্ছে এর ভেতরের দুটি সমাধি। কারণ পুরুষের সমাধি মেয়েদের
সমাধির চেয়ে বড় হয়।
১৭. তাজমহলের
মূল্য ৩২ মিলিয়ন রুপি। যার বর্তমান মূল্য ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি।
১৮. তাজমহল সম্পর্কে একটি প্রচলিত মিথ হচ্ছে- নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার সাথে
সাথে প্রতিটা শ্রমিকের হাত কেটে ফেলার নির্দেশ দেন সম্রাট শাহজাহান। যাতে কেউ
পুনরায় তাজমহল তৈরি করতে না পারে। তবে এটি সত্য নয়। আরেকটি মিথ হচ্ছে- তাজমহলের
মতোই আরেকটি সমাধি এর বিপরীত পাশে নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন সম্রাট শাহজাহান কালো
মার্বেল দিয়ে। কিন্তু ক্ষমতাচুত্য হওয়ায় সেটি আর সম্ভব হয়নি। কিন্তু এর কোন প্রমাণ
পাওয়া যায়নি।