সেরা সব সবুজ শহর
Tweet
কোপেনহেগেন, ডেনমার্ক
মাইলের পর মাইল সাইক্লিংয়ের রুট ছড়িয়ে থাকা ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনের
জনপ্রিয়তা বিশ্বব্যাপী। প্রায় ছয়লাখ জনমানবের এই শহরের অর্ধেক জনগনই পরিবেশকে দূষিত
করা মোটর গাড়ির বদলে সাইকেল ব্যবহার করতেই ভালোবাসে বেশি। সাইক্লিংয়ের প্রতি থাকা
এই ভালোবাসার ফলস্বরূপ এই শহরে কার্বন ডাই অক্সাইডের নিঃসরণের পরিমাণ খুবই কম।
কোপেনহেগেনের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে চাইলে সাইক্লিং কিংবা পায়ে হাঁটাই সর্বোত্তম উপায়। শ’খানেকেরও বেশি সাইকেল স্টেশন আছে এই শহরে। এছাড়াও আছে পরিবেশ-বান্ধব বিদ্যুৎ ও সৌরবিদ্যুতে চালিত নৌপরিবহন। শহরটির লক্ষ্য ২০২৫ সালের মাঝেই কার্বন-নিরপেক্ষ দেশে পরিণত হওয়া।
পরিবেশে কার্বন ডাই অক্সাইডের নির্গমন কমাতে ড্যানিশরা প্রায় সবকিছুতেই রিসাইক্লিং করে। এছাড়াও তেল ও গ্যাসের ব্যবহার কমাতে প্রতিনিয়তই সেখানে বাড়ানো হচ্ছে উইন্ডমিলের সংখ্যা। তাদের বিল্ডিংগুলোতেও ব্যবহৃত হয় সৌরবিদ্যুৎ। এছাড়াও সামনের বছরগুলোতে প্রচুর বায়োগ্যাসের প্লান্ট বসাবার ব্যবস্থা নিচ্ছে তারা। শহরের শতকরা ৭১ শতাংশ হোটেল রুমই পরিবেশ-বান্ধব।
অ্যামস্টারডার্ম, নেদারল্যান্ড
বহুকাল ধরেই বাইকিং অ্যামস্টারডার্ম শহরের অবিচ্ছেদ্য এক অঙ্গ। বলা হয়ে থাকে, এ শহরের জনসংখ্যার চাইতেও সাইকেলের সংখ্যা বেশি। সুন্দর এই শহরের সবখানে জালের মতো ছড়িয়ে আছে খাল আর সরু রাস্তা। যাতায়াতের জন্য তাই সাইকেলের চাইতে উপযুক্ত আর কিছুই নেই এই শহরে। কোপেনহেগেনেরই মতো এখানেও রয়েছে সাইক্লিংয়ের জন্য আলাদা রুট। এখানে বিদ্যুৎচালিত গাড়িও পাওয়া যায় অনেক। শহরে তিনশো’রও বেশি স্টেশন রয়েছে গাড়ি চার্জ করবার জন্য।
‘অ্যামস্টারডার্ম স্মার্ট সিটি’ নামের একটি প্রকল্প চালু করেছিলো শহরের কর্তৃপক্ষ ২০০৯ সালে। এই প্রকল্পের প্রধান লক্ষ্যই ছিলো কার্বন ডাই অক্সাইডের নির্গমন কমানো। লক্ষ্যে পৌঁছবার জন্য কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ব্যবহৃত বস্তুর রিসাইক্লিং, সৌরবিদ্যুতের প্যানেল বসানো, বৈদ্যতিক গাড়ি ও বাস সার্ভিস, এবং সাইক্লিংয়ের রুট তৈরী করে দেয়া ইত্যাদি। অ্যামস্টারডার্মের বেশিরভাগ জনগনই এখন ব্যবহার করে সৌরবিদ্যুৎ।
স্টকহোম, সুইডেন
ছবির মতো সুন্দর শহর স্টকহোমের প্রথম অঙ্গীকার পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পরিবেশ-বান্ধব জীবন। ৬,৫১৯ স্কয়ার কিলোমিটার শহরের এক-তৃতীয়াংশ জুড়ে আছে ১২টি সবুজ পার্ক। স্থানীয়রা তাদের নিজ জমিতে বনাঞ্চল গড়তে চাইলেও সরকারের তরফ থেকে বাড়িয়ে দেয়া হয় সহযোগীতার হাত। ইউরোপীয়ান গ্রীন ক্যাপিটাল হিসেবে স্টকহোমই প্রথম পুরস্কার পেয়েছিলো ২০১০ সালে।
স্ক্যান্ডিনেভিয়ান এই শহরটি বর্জ্য পুনর্ব্যবহারের জন্যও সুপরিচিত। বর্জ্যকে বায়োগ্যাসে রূপান্তর করে নেয় তারা। আগামী বছরগুলোতে বায়োগ্যাস উত্পাদন বাড়িয়ে জীবাশ্ম জ্বালানীর ব্যবহার কমাবার লক্ষ্য গ্রহণ করেছে সুইডেন সরকার। লক্ষ্য তাদের ২০৫০ সাল নাগাদ জীবাশ্ম জ্বালানীমুক্ত শহর গড়বার।
গ্রিনহাউজ গ্যাসের নির্গমন ২৫ শতাংশ কমিয়ে এনে রেকর্ড গড়েছিলো স্টকহোম ১৯৯০ সালে। পরিবেশ-বান্ধব জ্বালানী ব্যবহার করে এমন কিছু বাস সার্ভিসও রয়েছে এই শহরে। এছাড়াও এখানে সাইক্লিংয়ের জন্য রয়েছে সুব্যবস্থা। সারা শহরে সাইক্লিং রুটসহ শ’খানেক সাইকেল স্টেশনও রয়েছে।
ভ্যাঙ্কুভার, কানাডা
বিশ্বের অন্যতম বাসযোগ্য ও সবুজ শহর কানাডার উপকূলীয় শহর ভ্যাঙ্কুভার। এখানে আছে নবায়নযোগ্য জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র, যা শহরের ৯৩ শতাংশ বৈদ্যুতিক চাহিদা মেটাতে পারে। পরিবেশে কার্বন ডাই অক্সাইডের নির্গমনকে সর্বনিম্ন স্তরে নামিয়ে আনতে ভ্যাঙ্কুভারের চেষ্টা সর্বাত্মক।
২০২০ সালের মধ্যে ভ্যাঙ্কুভারকে বিশ্বের সবুজতম শহর হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যই শহরবাসী ও সরকারের। সেজন্য গ্রীনেস্ট সিটি অ্যাকশন টিম নামের দক্ষ একটি দলও গঠন করা হয়েছে। প্রচুর বৃক্ষরোপনের পাশাপাশি সরকার পরিবেশ-বান্ধব কয়েক হাজার চাকরিরও ব্যবস্থা করেছে। এছাড়াও বৈদ্যতিক গাড়ির ব্যবহার অনেক এই শহরে।
কুরিতিবা, ব্রাজিল
নগর পরিকল্পনার জন্য দক্ষিন ব্রাজিলের কুরিতিবা পরিচিতি বিশ্বব্যাপী। গড়ে প্রতি হাজার শহরবাসীর জন্য রয়েছে ১২ একর সবুজ ভূমি। এখানে মোট ৪’শ বর্গকিলোমিটার সবুজ ভূমি আছে। বিশাল এই ভূমি শহরের জীববৈচিত্র্য উন্নত করার পাশাপাশি আবহাওয়াও নিয়ন্ত্রণে রাখে। কুরিতিবার বোটানিক্যাল গার্ডেনে সাড়ে তিন লাখেরও বেশি প্রজাতির গাছ আছে।
প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য কুরিতিবাতে রয়েছে কঠোর আইন। স্থানীয় গাছপালাযুক্ত ভূমিতে অবৈধভাবে প্রবেশ ও ব্যবহার ঠেকাতে কড়াকড়িভাবে প্রয়োগ করা হয় এই আইন। এহাড়াও কুরিতিবার পরিবহন ব্যবস্থাও অত্যন্ত ভালো। বেশিরভাগ শহরবাসীই চলাচলের জন্য ব্যবহার করে বাস সার্ভিস। ফলে বাড়তি যানবাহনের কার্বনের নির্গমন কমে আসে। এছাড়াও শহরের ফুটপাথ আর সাইক্লিং রুটও অত্যন্ত উন্নত। ফলে পরিবেশ-বান্ধব প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় থাকে সবসময়ই।