ভূটান ভ্রমণে যা মিস করা যাবে না একদমই!
Tweet
উঁচু পাহাড়, ঘন বন,
তুষার স্তরে বাঁধা পেয়ে উড়ে যাওয়া মেঘের বহর, ছন্নছাড়া হিমেল হাওয়ায় মায়াবী
কান্না, ঝর্না ধারায় কখনো মান কখনো অভিমান, এমনই বহু সাজে সজ্জিত নৈসর্গিক
সৌন্দর্য্যের স্বর্গ রাজ্য, ছোট্ট দেশ ভূটান। প্রাকৃতিক অলংকারে অলংকৃত
সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি ভূটান শুধু দৃশ্যমান সুন্দরই নয় যার সৌন্দর্য্য থেকে নিঃসৃত
হয় নিখাদ অক্সিজেন যা কিনা ভূটানে বাসরত প্রানীকূলের প্রয়োজনের চেয়ে কয়েক গুণ
অধিক। তাই তো বিশ্বে একমাত্র ভূটানকেই বলা হয় অক্সিজেনের দেশ।
১. অপরূপ সুন্দর পারোর
সৌন্দর্য্য-
ভূটানে প্রবেশের একমাত্র প্রবেশদ্বারের শহর পারোর সৌন্দর্য্য যে না
দেখেছে, তাকে বোঝানো যাবে না সে রূপ। সৌন্দর্য্যের লীলাভূমি পারোতেই আছে ভূটানের
একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। মনোমুগ্ধকর পাহাড়ী উপত্যকা যেন অপার সৌন্দর্য্যের
স্বর্গরাজ্য। এছাড়াও এখানে আছে দেখার মতো কিছু নতুন ও প্রাচীন স্থাপনা। মঠ, মন্দির
ও শিল্পকলাগুলো বিশ্ববিখ্যাত তাদের সৌন্দর্য্যের জন্য। বিখ্যাত পারো জং প্রাচীন এক
ওয়াচ টাওয়ার।
২. টাইগার’স নেস্ট-
বাঘের বাড়ি হিসেবে পরিচিত তাক্তসাং লাখাং ভূটানের অন্যতম একটি পবিত্র স্থান। পারো উপত্যকার উপরে প্রায় ১,০০০ মিটার উচ্চতায় একটি পাথরের প্রান্তে ঝুলন্ত, তাক্তসাং মঠটি ভুটানের সর্বাধিক আইকনিক ল্যান্ডমার্ক। মঠটি প্রথমে ১৬৯২ সালে এমন একটি জায়গায় নির্মিত হয়েছিল, যেখানে গুরু রিম্পোচে ৮ শতাব্দীতে প্রার্থনা করেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়। প্রাচীন কাঠামোটি আগুনে নষ্ট হওয়ার পরে ১৯৯৮ সালে পুনর্নির্মাণ করা হয়েছিল।
৩. নর্মজিন ল্যাম রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো-
ভুটানের রাজধানী থিম্পু হ’ল দেশের বৃহত্তম শহর। এটি ভুটানের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয় কেন্দ্র। নর্মজিন ল্যাম হল শহরের প্রধান পথ। কোনও ট্র্যাফিক লাইট ছাড়াই বিশ্বের একমাত্র প্রধান রাস্তা। রাস্তার পাশের ক্যাফেতে বসে উপভোগ করে নিন থিম্পুর জনজীবন।
৪. তাশিছো জং-
ওয়াং চুয়ের তীরে অবস্থিত, তাশিছো জং থিম্পুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি নিদর্শন। এই বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ভবনটি ভুটান সরকারের সংসদ। আসল থিম্পু জংটি নির্মান করা হয়েছিলো ১২১৬ সালে। আগুনে পুড়ে অনেকবার ধ্বংস হয়েছে ভবনটি। ১৯৬২ সালে পুনাখা থেকে থিম্পুতে রাজধানী স্থানান্তরিত করার সময়ে একে সংসদ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
৫. দোচালা পাস থেকে হিমালয় দর্শন-
দোচুলা পাস ভুটানের একটি পর্বতমালা। পুনাখা ও থিম্পু সংযুক্ত থাকে এই পাসের মাধ্যমেই। ৩,১০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত, দোচুলা পাসের চূড়া থেকে হিমালয় পর্বতশ্রেণীর চমৎকার এক দৃশ্য উপভোগ করা যায়।
৬. পুনাখার আশ্রম-
প্রায় ৩০০ বছর ভূটানের রাজধানী ছিলো পুনাখা। তাই এর পরতে পরতে রয়েছে ঐতিহাসিক স্মৃতি। পুনাখার উপত্যকার রিতশা গ্রাম সাদা এবং লাল ধান কাটার জন্য বিখ্যাত। এছাড়াও, পুনাখা জং দুর্গটি ফো ছু ও মো ছু নদীর সঙ্গমে একটি দ্বীপে অবস্থিত।
৭. ভূটানি খাবার-
ভূটানি খাবার বিখ্যাত বিভিন্ন রকমের মসলা ও ঝাল স্বাদের জন্য। মূলত চীন ও তিব্বতের রন্ধনশৈলীর বিস্তর প্রভাব আছে ভূটানি রান্নায়। প্রতিটি ভূটানি খাবারের সাথেই প্রধান খাবার হিসেবে থাকে লাল ভাত। সাথে থাকে শুকরের মাংস, গরুর মাংস, মুরগী এবং শাকসব্জির প্রধান খাবার। পনির এবং মরিচ হচ্ছে যে কোনও সাইড ডিশ বা স্ন্যাক এর প্রাথমিক উপাদান। গাভীর দুধ দিয়ে তৈরি টক পনির দাতশি, মূলত সস তৈরির জন্য ব্যবহৃত হয়।
৮. তসেচু উতসব-
ভূটানের সবচাইতে বড় উতসব তসেচু। এটি প্রতি বছর অষ্টম চন্দ্র মাসের ১০তম দিনে অনুষ্ঠিত হয়, যা সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরে হয়। থিম্পু তসেচু ছাড়াও পারো তসেচুও জনপ্রিয় অনেক। গুরু রিম্পোচে (গুরু পদ্মসম্ভা) এর জন্মদিনের সাথে মিলিয়ে পালন করা হয় এটা। থিম্পু তসেচু হয় তিন দিনের জন্য। এখানে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের মুখোশ নৃত্য দ্বারা পরিচালিত অনুষ্ঠান। বৌদ্ধ ধর্মীয় শিক্ষাগুলি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য করা হয় এসব নৃত্য। থিম্পু তসেচু তাশীহো জংয়ের বাইরে অনুষ্ঠিত হয়। হাজার হাজার স্থানীয় সন্ন্যাসী রাজকীয় এই উত্সব উদযাপন করতে নামেন।
৯. ভূটানি গ্রামাঞ্চলে
রোডট্রিপ-
ভূটানের গ্রামাঞ্চলের রাস্তায় একটি
রোডট্রিপ পূর্ণতা এনে দিবে ভূটান ভ্রমণে। হিমালয়ের চূড়ার দৃশ্য সম্বলিত এই
রোডট্রিপ যোগ করবে আরও রোমাঞ্চ।
১০. জিগমে দর্জি ন্যাশনাল পার্ক-
ভুটানের বৃহত্তম জাতীয় সংরক্ষণাগারগুলির মধ্যে রয়েছে জিগমে দর্জি জাতীয় উদ্যান। বন্যজীবনে সমৃদ্ধ এবং বিস্তৃত জৈবিক বৈচিত্র্য সরবরাহ করে। পার্বত্য অঞ্চলটি জাতীয় ফুলের নীল পোস্ত এবং রোডডেন্ড্রন সহ অসংখ্য ফুল দিয়ে ঢাকা রয়েছে।