জাবি’র ইট-পাথরের দেয়াল কথা বলে শিল্পীর তুলিতে
Tweet
বাংলাদেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)। শহরের কাছেই অবস্থিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করলেই ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দেয়ালে চোখে পড়ে অনিন্দ্য সুন্দর সব চিত্রকর্ম।
ছাত্র-শিক্ষক
কেন্দ্রের (টিএসসি) ভেতর দিকের দেয়ালে বিখ্যাত অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্র “সং অব
দ্য সি”র একটি দৃশ্যের আদলে শৈশবের কল্পনা জগৎ, সমাজ বিজ্ঞান ভবনের সামনের যাত্রী ছাউনির
ভেতরে তাকালে চোখে পড়ে অজানায় পাড়ি জমানো কোনো এক সাইক্লিস্টের ছবি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের বাইরে জাতির পিতার চিরচেনা সেই রাশভারী
ভঙ্গি, কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ভবনের (জাকসু) ভেতরে তো প্রায়
পুরোটাই দখল করে আছে নিপুণহাতে আঁকা আরও একাধিক ছবি।
সবুজেঘেরা
জাহাঙ্গীরনগর ক্যাম্পাসের দেয়ালগুলোকে ভাষা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা
বিভাগের ৪২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ মামুর ও তার বন্ধুরা।
২০১৩
সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পরে মামুরের মনে হলো প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ক্যাম্পাসের
দেয়ালগুলো কেমন যেন সৌন্দর্যহীন। উপরন্তু পোস্টার লাগিয়ে সেগুলোকে করে ফেলা হয়েছে
আরও দৃষ্টিকটূ।
উন্মুক্ত
ক্যানভাসে আঁকা ছবিগুলোর প্রত্যেকটিই যেন জীবন্ত। সেগুলো যেমন দর্শকদের অভিভূত করে, দেওয়ালগুলোও যেন তেমনি
ছবির ভাষায় মানুষের সঙ্গে অনবরত ভাবের আদান-প্রদান করে।
নিজের
ক্যাম্পাসকে দৃষ্টিনন্দন করে তোলার প্রয়াসে কয়েকজন সতীর্থ বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে
মামুর শুরু করলেন ইট-পাথরের দেয়ালকে কথা শেখাতে। শুরু হলো দেয়ালে ছবি আঁকা।
একসময় থমকেও যেতে হলো
অর্থাভাবে। একেকটি চিত্রকর্মের জন্য যে পরিমাণ রংয়ের প্রয়োজন তার খরচ নেহায়েত কম নয়। প্রথমদিকে নিজেদের হাত
খরচের অর্থ বাঁচিয়ে ছবি আঁকলেও একটা সময় গিয়ে দেখা দিলো অর্থাভাব।
অর্থাভাবে
এমন সুন্দর একটি প্রয়াস থমকে যাবে?
ভ্রাতৃত্বের ক্যাম্পাস জাহাঙ্গীরনগরে তাই কি হয়? এগিয়ে এলেন মামুরের বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সাবেক শিক্ষার্থী অর্থাৎ
বড়ভাইয়েরা।
আবার
শুরু হলো মামুরদের দেয়ালচিত্রের কাজ। দৃষ্টিনন্দন সব চিত্রকর্ম ফুটে উঠতে শুরু
করলো বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রী ছাউনি,
হলের দেয়াল, জাকসু ভবন, টিএসসি,
ট্রান্সপোর্ট আর ডিপার্টমেন্টের দেওয়ালে দেয়ালে। তরুণ এই শিল্পীদের
শৈল্পিক মনন ক্যাম্পাসের বটগাছকেও সাজিয়েছে রঙিন সাজে।
দৃষ্টিনন্দন
এসব শিল্পকর্ম প্রশংসিত হয়েছে ক্যাম্পাসের বাইরেও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের
কল্যাণে এসব চিত্রকর্মের ছবি পৌঁছে গেছে দেশের বাইরেও।
সৌন্দর্যবর্ধনের
পাশাপাশি জাবি’র তরুণ চিত্রকরদের ছবিতে বিভিন্ন সময় ফুটে উঠেছে প্রতিবাদের ভাষা।
উদাহরণস্বরূপ, ২০১৭ সালে ভিসি’র বাসভবন
ভাংচুর ও শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনায় অর্ধশত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে করা মামলার প্রতিবাদে
নতুন কলা ভবনে আঁকা হয়েছিল প্রতিবাদী চিত্রকর্ম।
এতো
গেলো ছবি আঁকার গল্প। সৌন্দর্যপ্রিয় মানুষের জন্য আঁকার পরের গল্প একইসঙ্গে আনন্দ
ও কষ্টের। আনন্দের
অংশটি হলো, প্রতিটি ছবি আঁকার পরেই জাবি শিক্ষার্থীরা তো বটেই, ক্যাম্পাসে
ঘুরতে যাওয়া দর্শনার্থীরাও সেগুলোর সঙ্গে নিজেদেরকে ক্যামেরাবন্দি করেন। শিল্পীর
কাছেও বিষয়টি ভালোলাগার।
আবার
খারাপ লাগে যখন, বিভিন্ন সংগঠনের দেওয়াল লিখন কিংবা কোচিংয়ের বিজ্ঞাপনে ঢেকে দেওয়া হয় পুরো
ছবি। কখনওবা চিত্রকর্মের সৌন্দর্যে লাগে অনাকাঙ্খিত কালির আঁচড়। বিষয়গুলো শিল্পী
হিসেবে তাকে ব্যথিত করে বলে জানান মামুর।
ঢাকা
ট্রিবিউন’কে
মামুর জানান, বড়ভাইদের সৌজন্যে বেশকিছু রং পাওয়া গেছে।
শিগগিরই ক্যাম্পাসজুড়ে আরও কিছু ছবি আঁকার কাজে হাত দেবেন তারা।