পানির নিচে ডাকবাক্স!
Tweet
পানির নিচে ডাকবাক্সের কথা কেইবা ভাবে! কল্পনা নয়, বাস্তবেই আছে এই ডুবো ডাকবাক্স। তবে তা হাতেগোনা। জলে ডুবে এগুলোর মাধ্যমে বন্ধু বা স্বজনদের পোস্টকার্ড পাঠাতে পারেন যে কেউ। বিশ্বের চারটি দেশে একটি করে ডুবো ডাকবাক্স আছে। এর মধ্যে দুটোই এশিয়ায়। এগুলোই দেশগুলোকে আলাদা পরিচিতি এনে দিয়েছে।
পুলাউ লায়াং লায়াং (মালয়েশিয়া)
দক্ষিণ চীন সাগরের প্রবালদ্বীপ পুলাউ লায়াং লায়াংয়ে ২০১৫ সালে ডাকবাক্সটি তৈরি করা হয়। ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪০ মিটার গভীরে এটি স্থাপনের মাধ্যমে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙেছে মালয়েশিয়া। এখান থেকে পাঠানো পোস্টকার্ডে বিশেষ পোস্টমার্ক ও মালয়েশিয়া বুক অব রেকর্ডসের লোগোসংবলিত ডাকটিকিট থাকে। চিঠিগুলো ওয়াটারপ্রুফ প্লাস্টিকের ব্যাগে সিল মেরে নির্দিষ্ট ঠিকানা অনুযায়ী পাঠানো হয়।
হাইডঅ্যাওয়ে আইল্যান্ড (ভানুয়াতু)
প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশ ভানুয়াতুর ক্ষুদ্র দ্বীপ হাইডঅ্যাওয়ে আইল্যান্ড ডুবো ডাকবাক্সের জন্য বিখ্যাত। এটি স্থাপন করা হয় ২০০৩ সালে। মাটি থেকে তিন মিটার নিচে এই ডাকবাক্সে ওয়াটারপ্রুফ পোস্টকার্ড রয়েছে। ডুবুরি ও পর্যটকরা এখানে চিঠি ফেলতে পারেন। এছাড়া ডাকঘর কর্মীদের সহায়তার জন্য অনুরোধ করা যায়। চিঠিগুলো দায়িত্বরত ডুবুরি-কাম-কর্মীরা সংগ্রহ করে ঠিকানা অনুযায়ী পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন। পোস্টকার্ডে ডাকটিকিট যুক্ত করতে বিশেষ এমবস ডিভাইস ব্যবহার হয়।
সুসামি বে (জাপান)
জাপানের ওয়াকায়ামা প্রিফেকচারে জেলেদের শহর সুসামির গভীরে রয়েছে বিখ্যাত আরেকটি সুদৃশ্য ডাকবাক্স। এটিকেও বিশ্বের প্রথম ডুবো ডাকবাক্স হিসেবে বিবেচিত। ১৯৯৯ সালে ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০ মিটার গভীরে স্থাপন করা হয় এটি। প্রতিবছর এখানে একহাজার থেকে দেড় হাজার চিঠি জমা হয়। এখন পর্যন্ত সংখ্যাটা দাঁড়িয়েছে ৩২ হাজারে! এতেই বোঝা যায় লাল রঙা ডাকবাক্সটির জনপ্রিয়তা। এটি স্থাপনের আগে সুসামির কথা খুব কম লোকই জানতো। ডুবুরিরা স্থানীয় দোকান থেকে জলনিরোধক পোস্টকার্ড কিনে তেলনির্ভর পেইন্ট মার্কার দিয়ে বার্তা লিখে ডাকবাক্সে ফেলেন। কিছুদিন পরপর একবার করে দোকানের কর্মী সেগুলো সংগ্রহ করে স্থানীয় ডাকঘরে দিয়ে আসেন।
রিসর (নরওয়ে)
নরওয়ের নয়নাভিরাম উপকূলীয় শহর রিসরে আছে বিশ্বের একমাত্র ডুবো কিন্তু শুকনো ডাকবাক্স! অন্য তিনটি ডুবো ডাকবাক্সের কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় ভেজা পরিবেশে। কিন্তু রিসরের ডাকবাক্স চলে গ্রীষ্মকালীন মাসগুলোতে। একটি জেটির চার মিটার নিচে স্থাপন করা হয় এটি। পর্যটকরা এতে নিজেদের চিঠি রাখেন। দুই-তিন সপ্তাহ পরপর সেগুলোতে সিল মেরে ওয়াটারপ্রুফ ব্যাগে ভরে পানির নিচে নিয়ে ডাকবাক্সে ফেলা হয়। এর ভেতরে শুষ্ক পরিবেশে ডাকটিকিট মেরে চিঠিগুলো ওপরে ফিরিয়ে আনা হয়। এরপর স্বাভাবিক ডাকঘরের নিয়মে ঠিকানা অনুযায়ী পাঠান সংশ্লিষ্টরা। পর্যটন আকর্ষণ হিসেবে ২০০৪ সালের ৪ জুন ফাইবার গ্লাসে পানির ট্যাংক আকৃতির পাঁচ টন ওজনের ডাকবাক্সটি স্থাপন করা হয়। এর ভেতরে থাকে বাতাস। ফলে জায়গাটি শুকনো রাখা যায়।
সি ফ্লোর (বাহামাস)
ক্যারিবীয় অঞ্চলের দেশ বাহামাসে ‘সি ফ্লোর’ নামে একটি ডুবো ডাকবাক্স ছিল। ১৯৩৯ সালে বিশ্বের প্রথম এই ডুবো ডাকবাক্স স্থাপন করেছিলেন আমেরিকান আলোকচিত্রী জন আর্নেস্ট উইলিয়ামসন (১৮৮১-১৯৬৬)। সমুদ্রতলদেশীয় ফটোগ্রাফির পথিকৃত ছিলেন তিনি। ১৯১২ সালে পানির নিচে পুরু কাচের একটি চেম্বার ডিজাইন করে রাখেন। এর ভেতর থেকে সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য পর্যবেক্ষণ করতে সেগুলোর ছবি তুলতে সক্ষম হন তিনি। তার অভিযাত্রা নজরে আনতে ১৯৩৯ সালে ডুবো ডাকবাক্স স্থাপিত হয়। কিন্তু দুই বছর পরেই এর কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। ‘সি ফ্লোর’ ডাকবাক্সের স্মৃতিরক্ষায় ১৯৬৫ সালে বাহামাস ডাকবিভাগ একটি ডাকটিকিট প্রকাশ করে।