বাংলাদেশের কাশ্মীর, শহীদ সিরাজ লেক

শহীদ সিরাজ লেক মূলত
টেকেরঘাট চুনাপাথর খনিজ প্রকল্পের পরিত্যক্ত একটি কোয়ারি। ১৯৪০ সাল থেকে এখানে
চুনাপাথর সংগ্রহ করে সিলেটের ছাতক উপজেলার সুরমা নদীর তীরে আসাম বেঙ্গল সিমেন্ট
কোম্পানির কারখানায় পাঠানো হতো। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর এই কোয়ারির সব কার্যক্রম
বন্ধ হয়ে যায়।
১৯৬০ সালে টেকেরঘাটে
৩২৭ একর জমিতে চুনাপাথরের সন্ধান পায় বাংলাদেশ রসায়ন শিল্প সংস্থা (বিসিআইসি)।
১৯৬৬ সালে মাইনিংয়ের মাধ্যমে এখান থেকে পাথর উত্তোলন করা হয়। পরে লোকসান দেখিয়ে
কোয়ারিটি বন্ধ করে দেয় বিসিআইসি। এরপর দীর্ঘদিন ধরে পানি জমে এই জায়গা পরিণত হয়
লেকে।

মেঘালয় পাহাড়, সবুজ বনানী, উঁচু-নিচু টিলা এখানকার সৌন্দর্য
বাড়িয়েছে। বর্ষাকালে লেকের পানি কিছুটা ঘোলাটে হলেও শীত মৌসুমে তা নীলাভ বর্ণ ধারণ
করে। লেকের এই রূপ পর্যটকদের বিমোহিত করে।
গাঢ় নীল রঙের পানি
থাকায় শহীদ সিরাজ হ্রদকে ‘নীলাদ্রি লেক’ নামে ডাকা হয়। এ নামেই এটি বেশি
পরিচিত। লেকের পাশে কোয়ারিতে ব্যবহৃত কয়েক দশকের পুরনো লোহার যন্ত্রপাতি ও
ন্যারোগেজ রেললাইন এখানকার সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে। দেখে মনে হয় প্রাচীন কোনও
নগরের পাশে নীলাভ জলের আভা!
সম্প্রতি এলাকাটির খুব কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে একটি শিমুল বাগান। এর ওপর দিয়েই বয়ে গেছে মোহনীয় যাদুকাটা নদী। লেক, পাহাড়, নদী আর হাওরের এই মিতালী পর্যটকদের মন ভরিয়ে দেয় দারুণ ভালোলাগায়! দিগন্তে মেশা সবুজ ধানের মাঠকে মনে হবে প্রকৃতির সাজানো মনোরম আঙিনা।

যেভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সড়কপথে সুনামগঞ্জ যাওয়া যায়। এরপর মোটরসাইকেল বা সিএনজিতে চড়ে (জনপ্রতি ১০০ টাকা) তাহিরপুর উপজেলা অথবা লাউড়েরগড় যেতে হয়। কেউ চাইলে পায়ে হেঁটে লাউড়েরগড় যেতে পারেন। সেখান থেকে হেঁটে এগোলেই যাদুকাটা নদী ও বারেক টিলা। এরপর মোটরসাইকেল ভাড়া করে সীমান্ত দিয়ে টেকেরঘাট, ভাড়া জনপ্রতি ৭০-৮০ টাকা। বর্ষায় তাহিরপুর থেকে নৌকায় যাওয়ার ভাড়া জনপ্রতি ৬০-৭০ টাকা। এজন্য সময় লাগবে দুই ঘণ্টা। শুষ্ক মৌসুমে জনপ্রতি ১০০ টাকা ভাড়ায় মোটরসাইকেলে চড়ে টেকেরঘাট যাওয়া যায়।