চর কুকরি মুকরি যখন ডাকে ভ্রমণ পিপাসুদের
Tweet
চরাঞ্চল বেড়াতে কার না ইচ্ছা জাগে । সময়-সুযোগ করাটাই আসল ব্যাপার। অনেক সময়ই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ডাকে যারা চলে যান এসব দুর্গম চরাঞ্চলে । তারা আসলেই সৌভাগ্যবান। এসব চরাঞ্চলের মধ্যে পর্যটকদের সবচেয়ে বেশি যে চরটি আকর্ষণ করে তাহলো দ্বীপ কন্যা কুকরি মুকরি। উপকূলীয় জেলা ভোলা থেকে বিচ্ছিন্ন জনপদ চরফ্যাশন উপজেলার একটি ইউনিয়ন। ভোলা জেলা শহর থেকে কুকরি মুকরির দূরত্ব ১২০ কিঃ মিঃ। চারদিকে নিবিড় কালচে সবুজের সমারোহ।
দ্বীপের পূর্বদিকে প্রমত্তা মেঘনা ও শাহাবাজপুর চ্যানেল। দক্ষিণান্তে বঙ্গোপসাগর, পূর্বে বুড়াগৌড়াঙ্গ এবং মেঘনার মিলনাস্থল। চর কুকরি মুকরির যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজ আর সবুজ। দৃষ্টিকে সম্মোহন করে হাতছানি দিতে থাকে টুকরো টুকরো নিবিড় বনভূমি। একদিকে বঙ্গোপসাগরের উত্তাল ঢেউ, বৈরী বাতাস, চিরসবুজ গাছ-গাছালি, মন ভুলানো সমুদ্র সৈকত, মায়াবী হরিণের দল আর অসংখ্য নাম না জানা পাখ-পাখালি বিস্তৃত সবুজ বনাঞ্চল কুকরীমুকরীকে ভ্রমণ বিলাসীদের তীর্থ ভূমিতে পরিণত করেছে।
চর কুকরি মুকরি ভ্রমণের উপযুক্ত সময়ঃ
শীতকালে চর কুকরি মুকরির আসল সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। আবার এখানে ক্যাম্পিং করার জন্য শীতকালেই উপযুক্ত সময়। বর্ষায় চরের অধিকাংশ অংশই ডুবন্ত থাকে তাই বর্ষাকালে চর কুকরি মুকরি ভ্রমণ না করাই শ্রেয়। চর কুকরি মুকরি ভ্রমণের জন্য নভেম্বর-মার্চ মাস সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।
কিভাবে যাবেনঃ
চর কুকরি মুকরিতে যেতে নদী পথ হচ্ছে সবচেয়ে সহজ উপায়। নদী পথে যাতায়াতে খরচ ও শারীরিক কষ্ট কম হয়। ঢাকার সদরঘাট থেকে বেতুয়াঘাট, চরফ্যাসন গামী লঞ্চে উঠতে হবে। এই পথে তাসরিফ, কর্ণফুলী, ফারহান ইত্যাদি লঞ্চ নিয়মিত যাতায়াত করে। এসব লঞ্চের ডেকের ভাড়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, সিঙ্গেল কেবিন ভাড়া ১০০০-১২০০ টাকা এবং ডাবল কেবিন ভাড়া নিতে ২০০০ থেকে ২২০০ টাকা লাগে। ঘাট থেকে ১০০ টাকা মোটর সাইকেল ভাড়া করে কিংবা ৪০ থেকে ৫০ টাকা ভাড়ায় টেম্পোতে চরে চরফ্যাশন সদরে এসে সেখান থেকে ৩০ টাকা বাস ভাড়া অথবা ১৫০ টাকা মোটর সাইকেল ভাড়ায় দক্ষিণ আইচা আসুন।
দক্ষিন আইচা থেকে ১০ থেকে ১৫ টাকায় টেম্পো বা মোটরসাইকেল ভাড়ায় চর কচ্ছপিয়া যেতে পারবেন। চর কচ্ছপিয়া থেকে ৫০ থেকে ৬০ টাকায় ট্রলারে চেপে অথবা অথবা ১৫০ টাকা ভাড়ায় স্পীডবোটে চেপে পৌঁছে যাবেন চর কুকরি-মুকরি। এছাড়া ট্রলার রিজার্ভ করেও যেতে পারবেন এক্ষেত্রে আপনাকে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা খরচ করতে হবে।
লঞ্চের টিকেট কাটতে সরাসরি নাম্বার সমূহে যোগাযোগ করুনঃ
ফারহানঃ ০১৭৯৮২৮৮৬৯২/ ০১৭৯৮২৮৮৬৯৩/০১৭৯৮২৮৮৬৯৪
কর্ণফূলীঃ ০১৭৯৮৫১৬৭২৬ / ০১৭৭৯৯৭২৬৪০
তাসরিফঃ ০১৭১২৩৯৩৮১২ / ০১৭৮২৪৭৬৩৭৯
কোথায় থাকবেন?
কুকরী-মুকরিতে হোমস্টে সার্ভিস চালু রয়েছে সেখানে থাকতে পারবেন। এছাড়া বন বিভাগের রেস্ট হাউসে অনুমতি নিয়ে রাত্রি যাপন করতে পারবেন। রেস্ট হাউজে থাকতে চাইলে আগেই জানিয়ে যাওয়া ভালো। রেস্ট হাউসের রুমগুলোর ভাড়া ২০০০-৫০০০ টাকা। হোম স্টের ক্ষেত্রে জন প্রতি ২৫০-৫০০ টাকা ভাড়ায় থাকতে পারবেন। হোম স্টে সার্ভিসের ব্যবস্থা আছে।
কোথায় খাবেনঃ
হোম স্টে তে থাকা এবং খাওযার সু-ব্যবস্থা রয়েছে। বন বিভাগের রেস্ট হাউস কতৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে তারাই খাবারের ব্যবস্থা করে থাকেন ।
কোথায় ঘুরবেনঃ
কুকরি তে নারকেল বাগান, বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন খালের মোহনায় রঙ্গিন নৌকায় চেপে প্রকৃতি ও প্রতিবেশ দর্শন যেখানে ভাগ্য ভালো হলে হরিণের দেখা পেয়ে যেতে পারেন। তারুয়া দ্বীপের লম্ব সমুদ্র সৈকতে স্থান ও রাতে সৈকত তীরবর্তী বনে ক্যাম্পিং করতে পারেন। এছাড়া সমুদ্রে মৎস্য আহরণ, ট্রেইল ট্রাকিং, সি ফুড উপভোগ সহ সোনারচর, শিবচর, মুজিব কেল্লা ও অন্যান্য দর্শনীয় স্থানে ভ্রমণ করতে পারবেন।