১৩ বছর পর বিমানের টোকিও ফ্লাইট
Tweet
বাংলাদেশের এয়ারলাইনসগুলো ঢাকা-টোকিওর মধ্যে সপ্তাহে মাত্র দুটি ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ ছিল। একই সঙ্গে ব্যাংকক হয়ে টোকিওতে ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে ঢাকা-ব্যাংকক সেক্টরে বিমানের যাত্রী ধারণক্ষমতার ৩৫ শতাংশের বেশি যাত্রী পরিবহনের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা ছিল। যা বাংলাদেশি বিমান সংস্থা ও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ঢাকা-ব্যাংকক-টোকিও রুটে ফ্লাইট পরিচালনার ক্ষেত্রে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করছিল।
তবে সেই প্রতিবন্ধকতা দুর করতে দুই দেশের মধ্যে বিমান চলাচল চুক্তি সংশোধন হয়েছে। জাপানে বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে ফিফথ ফ্রিডম পাওয়ার ফলে সেই নিষেধাজ্ঞা আর থাকছে না। এতে আকাশপথে দুই দেশের মধ্যে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সূত্র জানায়, ঢাকা-টোকিওর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সরাসরি ফ্লাইট চালু ছিল। তবে লোকসানের কারণে ২০০৬ সালে তা বন্ধ হয়ে যায়। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে দীর্ঘ ১৩ বছর পর আবারও ঢাকা-টোকিও রুটে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ফ্লাইট চালু হচ্ছে। শিগগিরই দুই দেশের মধ্যে এই ফ্লাইট চালু করবে রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ারলাইনসটি।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্র জানায়, তবে সেই চুক্তি সই হলেও নানা জটিলতায় দীর্ঘদিন ধরে ফ্লাইট চালু সম্ভব হয়নি। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের যেকোনো এয়ারলাইনস জাপানের যেকোনো বিমানবন্দরে (হানেদা ব্যতীত) যেকোনোসংখ্যক যাত্রী ও কার্গো ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ পাচ্ছে। এখন বাংলাদেশি এয়ারলাইনসগুলো বাংলাদেশ থেকে চীন (মেইন ল্যান্ড চায়না) ছাড়া বিশ্বের অন্য যেকোনো দেশের বিমানবন্দরের যাত্রী নিয়ে জাপানের টোকিওতে (নারিতা বিমানবন্দর) যেতে পারবে এবং একইভাবে টোকিও হতে যাত্রী বাংলাদেশে আনতেও পারবে।
বাংলাদেশেও এখন জাপানি কম্পানিগুলোর বিনিয়োগ বাড়ছে। পাশাপাশি জাপান সরকারও বাংলাদেশে তাদের উন্নয়ন সহায়তা বাড়িয়েছে। একই সঙ্গে জাপানের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের রপ্তানি বাড়ছে। এতে করে জাপান বাংলাদেশের বড় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদার হয়ে উঠছে। এ ছাড়া জাপান বাংলাদেশসহ ৯টি দেশ থেকে সাড়ে তিন লাখ দক্ষ জনশক্তি নেওয়ার কথা জানিয়েছে। এতে দীর্ঘদিন নানা মহল থেকে সরকারের কাছে সরাসরি ফ্লাইট চালুর দাবি জানানো হচ্ছিল।
গত ২৯ জানুয়ারি জাপানের টোকিওতে বাংলাদেশ ও জাপানের অ্যারোনটিক্যাল অথরিটির মধ্যে একটি দ্বিপক্ষীয় বিমান চলাচল চুক্তি পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান।
বেবিচকের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মফিদুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে বিমান চলাচলের ক্ষেত্রে এখন নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। শুধু যাত্রীবাহী বিমান চলাচলই নয়, আগে জাপান ও বাংলাদেশের মধ্যে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট পরিচালনার কোনো সুযোগ না থাকলেও এখন বিমান সংস্থাগুলো দুই দেশের মধ্যে কার্গো ফ্লাইটও পরিচালনা করতে পারবে। ফলে বিমানের পাশাপাশি যেকোনো বাংলাদেশি এয়ারলাইনস জাপানে ফ্লাইট পরিচালনার সুযোগ নিতে পারবে।’
তিনি বলেন, দুই দেশের অ্যারোনটিক্যাল অথরিটির মধ্যে অনুষ্ঠিত সভাটি বন্ধুপ্রতিম দুই দেশের মধ্যে শুধু যাত্রী, কার্গো পরিবহনকেই আরো সহজতর করব না বরং পর্যটনসহ ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা করা যায়।
ফের ফ্লাইট পরিচালনা কবে থেকে শুরু হবে—জানতে চাইলে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোকাব্বির হোসেন গতকালে কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মাস দুয়েকের মধ্যে টোকিও ফ্লাইট চালু করতে পারব বলে আশা করছি। একই সঙ্গে আমরা জাপান হয়ে আরো কিছু রুটে কোড শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমরা সপ্তাহে দুটি ঢাকা-ব্যাংকক-টোকিও এবং আরেকটি ঢাকা-টোকিও সরাসরি ফ্লাইট দিতে পারি। আমরা যাচাই করে দেখছি।’
তিনি বলেন, একটি ফ্লাইট অপারেশনে অনেক দেশের কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে। এসব বিষয় সরকারের কাছ থেকে চিঠিটি পেলে আমরা এই প্রক্রিয়া শুরু করতে পারব।’ জাপান ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অর্গানাইজেশনের (জেট্রো) তথ্য অনুযায়ী, ২০০৮ সালে বাংলাদেশে কার্যরত জাপানি কম্পানির সংখ্যা ছিল ৭০টি। এক দশক পর ২০১৮ সালে সংখ্যাটি ২৭৮-এ উন্নীত হয়েছে। জাপানের সজিত করপোরেশন মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প পার্ক করতে চাইছে।
তামাকজাত পণ্য উৎপাদন ও বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান জাপান টোব্যাকো গত জুনে দেশের আকিজ গ্রুপের তামাক ব্যবসা কিনে নেয়। এতে জাপানের কম্পানিটি বিনিয়োগ করছে প্রায় ১২ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। সরাসরি বিমান চলাচল শুরু হলে এই রুটে পর্যাপ্ত যাত্রী পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।