বঙ্গবন্ধুর মানবতার দর্শন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে হবে
Tweet
নির্মূল কমিটির সভায় বিশিষ্টজন
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বঙ্গবন্ধুর বিশ্বশান্তি ও মানবতার দর্শন তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন বিশিষ্টজন। তারা বলেছেন, বাংলাদেশসহ বহির্বিশ্বের ৩০ কোটি বাঙালির মাতৃভাষাকে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক মর্যাদায় অভিষিক্ত করেছিলেন জাতিসংঘের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাংলায় ভাষণ দিয়ে। তাই মুজিববর্ষে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির বর্ণাঢ্য ঐতিহ্য তুলে ধরারও উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। আর এসব কর্মকাণ্ডে তরুণ প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করতে হবে। তাদের সৃজনশীল পরিকল্পনা ও উদ্যম মুজিববর্ষে নাগরিক উদ্যোগে নতুন মাত্রা সংযোজন করবে।
গত রোববার জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে ‘মুজিববর্ষে শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীদের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশিষ্টজন এসব কথা বলেন। প্রয়াত অধ্যাপক কবীর চৌধুরীর ৯৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি এই আলোচনা সভার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী মুক্তিযোদ্ধা টিপু মুনশি। তিনি বলেন, বক্তৃতা-বিবৃতিতে আমরা অনেকেই অসাম্প্র্রদায়িক চেতনার কথা বলি, কিন্তু এটি এখানেই শেষ নয়। অসাম্প্র্রদায়িক চেতনার বিষয়টি মন-মানসিকতায়, কাজেকর্মে প্রমাণ করতে হবে, ধারণ করতে হবে; তাহলেই মুজিববর্ষের সার্থকতা। এই দায়িত্ব শিল্পী,সংস্কৃতিকর্মীসহ জনগণকেই পালন করতে হবে।
স্বাগত বক্তৃতায় নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ঋণ শোধ করার জন্য একটি পথ খোলা আছে, সেটি হলো তিনি যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তার বাস্তবায়ন করা। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য ৩০ লাখ মানুষ দেশ স্বাধীন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন। এখন বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে হলে সরকারের পাশাপাশি নাগরিক সমাজেরও করণীয় রয়েছে। ‘
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতা সংযোজন করার সময় বঙ্গবন্ধু এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বহুবার বলেছেন, ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। প্রত্যেক মানুষের নিজ নিজ ধর্ম পালন ও প্রচারের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকবে। শুধু রাষ্ট্র ও রাজনীতি ধর্মের ব্যাপারে নিরপেক্ষ থাকবে, কোনো বিশেষ ধর্মকে প্রশ্রয় দেবে না। আমাদেরও বঙ্গবন্ধুর এই চেতনাকে ধারণ করতে হবে। তবেই ধর্ম ও রাষ্ট্র দুই-ই নিরাপদ থাকবে। অনুষ্ঠানে কবীর চৌধুরী স্মারক বক্তৃতা দেন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও নাট্যনির্দেশক মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দীন ইউসুফ বাচ্চু। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাঙালি ইতিহাসে প্রথম বাংলা ভাষায় সংবিধান প্রণয়ন করে। সংকীর্ণ জাতীয়তাবাদের বিপরীতে সব জাতিসত্তার সাংস্কৃতিক বিকাশই ছিল আমাদের সংবিধানের মূল চরিত্র। আর যখন সাংস্কৃতিক মুক্তি আসবে তখনই অন্যান্য ধর্ম-বর্ণের মানুষের প্রতি সহমর্মিতা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন সম্ভব হবে। ফলে রাষ্ট্র তখন ধর্মনিরপেক্ষ হয়ে উঠবে। তাই বাহাত্তরের সংবিধান পুনর্বহাল ছাড়া এ দেশে ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
কথাশিল্পী অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, ‘আমরা এখন মুজিববর্ষ পালন করছি, কিছু মানুষ মনে করে আমরা কিছুটা বাড়াবাড়ি করছি। কিন্তু এটা ঠিক নয়। কারণ বাংলাদেশে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে রেডিও-টেলিভিশনে প্রচার করা হয়নি। একটিই উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর নাম ও তার দর্শন এ দেশের মানুষের মন থেকে সরিয়ে ফেলা। আর এখন সেই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যদি প্রচারের নামে একটু বাড়াবাড়ি করা হয়, তা সঠিক। তরুণ প্রজন্মের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর দর্শন ছড়িয়ে দিতে হলে এর প্রয়োজন আছে।’
সভাপতির বক্তৃতায় শহীদজায়া শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে জানা, চেনা, তার দর্শন যেন আমরা ধারণ করতে পারি, বুঝতে পারি। বঙ্গবন্ধুর প্রতি যে আমাদের ভালোবাসা তা সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে হবে। শুধু বঙ্গবন্ধু বলে, জয় বাংলা বলে স্লোগান দিলে হবে না, বঙ্গবন্ধুর চেতনা ও কর্মকে জানতে হবে। তার দেশপ্রেম নিয়ে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।’
প্রজন্ম ‘৭১-এর সহসভাপতি আসিফ মুনীর তন্ময়ের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম ফর সেক্যুলার বাংলাদেশের ফিনল্যান্ড শাখার আহ্বায়ক ড. মুজিবুর দফতরি, টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি ফোরাম হিউম্যানিজম তুরস্ক শাখার সাধারণ সম্পাদক শাকিল রেজা ইফতি প্রমুখ।