কক্সবাজার সৈকত ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা
Tweet
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া প্রতিরোধে মঙ্গলবার থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করেছে সরকার। এ সুযোগে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করতে পারে মানুষ। এ আশঙ্কায় কক্সবাজার, চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, খাগড়াছড়ি ও কুয়াকাটা ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ও নিরুৎসাহিত করেছে প্রশাসন।
করোনাভাইরাসকে কেন্দ্র করে পর্যটন শহর কক্সবাজারে পর্যটক আগমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকবে বলেও জানান কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাব কমাতে সরকার সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে কিছু কিছু অতি উৎসাহী পরিবারের লোকজন দেশের বিভিন্ন পর্যটন স্পট ঘুরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। যে কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
জেলা প্রশাসক কামাল হোসেন বলেন, সরকার স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসাসহ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করেছে বাসায় বসে থাকার জন্য। পাশাপাশি শিশুদের করোনাভাইরাস থেকে যতটুকু সম্ভব মুক্ত রাখার জন্য। কিন্তু লোকজন সরকারের এই মহৎ উদ্যোগের প্রতি সমর্থন না জানিয়ে দেশে দেশে ঘুরতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাই বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে পর্যটক আগমনে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
এ দিকে এমনিতেই ভরা মৌসুমেও অনেকটা পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার। পাশাপাশি আগামী ২৬ মার্চের বন্ধের সময়কে কেন্দ্র পর্যটন শহরের চার শতাধিক হোটেল, মোটেল, গেস্ট হাউজসহ কটেজগুলোতে সবক’টি রুম কয়েকমাস আগে বুকিং হয়ে যায়। কিন্তু সম্প্রতি সময়ে করোনাভাইরাসের প্রভাবকে কেন্দ্র করে বুকিং বাতিলের হিড়িক পড়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এই অবস্থায় বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে বলে জানালেন হোটেল ব্যবসায়ীরা।
কলাতলীর মেরিন ড্রাইভ হোটেল রিসোর্ট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মুকিম খান বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে হোটেল কক্ষের বুকিং কমে গেছে। পাশাপাশি কয়েকমাস পূর্বে যে বুকিংগুলো ছিল তাও অনেকটা বাতিল হয়ে যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, এখন পর্যটনের ভরা মৌসুম। অন্যান্য বছর এই সময়ে পর্যটকে ভরা থাকলেও, এবারের চিত্র ভিন্ন। করোনাভাইরাসের প্রভাবে কক্সবাজারে আসা অনেকটা বন্ধ করে দিয়েছেন পর্যটকরা। এই অবস্থা চলতে থাকলে পর্যটন ব্যবসায়ীরা যেমন ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবেন ঠিক তেমনি সরকারও বিশাল অংকের রাজস্ব হারাবে।
বুধবার বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকতস্থ লাবণী পয়েন্ট, সুগন্ধা পয়েন্ট, ডায়াবেটিক পয়েন্ট, হিমছড়িসহ কলাতলীর আরও কয়েকটি পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, খুবই স্বল্পসংখ্যক পর্যটক সৈকতের বালিয়াড়িতে ঘোরাফেরা করছেন। সৈকতের বালিয়াড়িতে খালি পড়ে আছে কিটকটগুলো। হকার ও ফটোগ্রাফাররা বেকার সময় পার করছেন।
সৈকতের কিটকট ব্যবসায়ী মো. হাসান বলেন, চলতি মাস থেকে সৈকতে পর্যটক আসা কমে গেছে। যেখানে সৈকতের একেকটি পয়েন্টে ৪০-৫০টি কিটকট (ছাতা) থাকার পরও পর্যটকদের বসার জন্য জায়গা দিতে পারতাম না। সেখানে এখন এই কিটকটগুলো খালি পড়ে আছে। আর ব্যবসাও হচ্ছে না।
পর্যটন-সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বছরের মধ্য নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত কক্সবাজারে ভরা পর্যটন মৌসুম। এ সময়ে পর্যটকদের আনাগোনায় মুখরিত থাকে সমুদ্র সৈকতসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন পর্যটন স্পট। প্রতিদিনই কক্সবাজারে আগমন ঘটে অন্তত ৫০ হাজারেরও বেশি পর্যটকের। কিন্তু গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া রোগী শনাক্তের পর থেকে ভরা মৌসুমেও কক্সবাজারে বেড়াতে আসা পর্যটকের ঢলে ভাটা পড়েছে।
এ ছাড়া বর্তমানে কক্সবাজারে বিদেশ ফেরত ৫ জন করোনাভাইরাসের আশঙ্কায় কোয়ারেন্টাইনে রয়েছে বলে জানালেন সিভিল সার্জন।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন ডা. মাহবুবুর রহমান বলেন, করোনাভাইরাসের আশঙ্কায় কক্সবাজারে পাঁচ বিদেশ ফেরত ব্যক্তিকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তবে সরকারি বিধিনিষেধ থাকার কারণে এর বাইরে আমার (সিভিল সার্জন) পক্ষে কিছু বলা সম্ভব না।
এ দিকে করোনাভাইরাস সম্পর্কে পর্যটকরা যাতে সচেতনতা অবলম্বন করে চলাফেরা করেন এবং বর্তমান সময়ে যেন বাসাবাড়ি ছেড়ে কক্সবাজার বেড়াতে না আসে সে জন্য হোটেল-মোটেল কর্তৃপক্ষসহ পর্যটন শিল্প-সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।