পর্যটনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ব্যবহৃত সকল দৃশ্যমান ও অদৃশ্য উপাদানই ‘পর্যটনসম্পদ’ (Parjantan Resources)। বিষয়টি বুঝিয়ে বলছি। পর্যটন হলো জীবনমুখি সকল কাজের সমন্বিত রূপ। এই কাজের সাথে সম্পৃক্ত উপাদানগুলি যেমন যানবাহন, খাদ্য, আবাসস্থল এবং বিনোদন উপাদানসহ বিশ্রাম ও শিক্ষার ইত্যাদি পর্যটন সমপদের আওতাভূক্ত। প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট সকল উপাদানই পর্যটনসম্পদ যা মানুষের জীবনে প্রয়োজনীয়। দৃশ্যমান উপাদানের মতো অদৃশ্য উপাদানগুলি যেমন আলো, বাতাস, ঋতু, ভাষা, সঙ্গীত, আচরণ এসবও পর্যটনসম্পদ। অর্থাৎ পৃথিবীতে অবস্থিত সকল উপাদানই জীবনের উপাদান এবং পর্যটনেরও উপাদান। জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় না এমন কিছু পর্যটনের জন্যও প্রয়োজনীয় না। এ থেকে আমরা সহজেই বলতে পারি যে, জীবনের উপাদান ও পর্যটনের উপাদান অভিন্ন এবং জীবনের সকল উপাদানের যোগফল হলো পর্যটনের মোট সম্পদ। নিচের সমীকরণের সাহায্যে তা প্রকাশ করা যায়-
জীবনের উপাদান = পর্যটনের উপাদান = পর্যটনের মোট সম্পদ
আরও পড়ুনঃ ‘দুর্যোগ পরবর্তী দেশের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর হাতিয়ার হতে পারে পর্যটন’
পর্যটনসম্পদের প্রকারভেদ:
অধ্যয়নের সুবিধার জন্য পর্যটনসম্পদকে মোট ৫ (পাঁচ) টি শ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। উদাহরণসহ এদেরকে নিচে উপস্থাপন করা হলো:
ক. ব্যবহারের ভিত্তিতে ২ (দুই) প্রকার: প্রাথমিক (সার্ট, নদী, বাস যা পর্যটনে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে তৈরি হয় নাই। কিন্তু পরবর্তীতে সেসব পর্যটনে ব্যবহৃত হয়েছে) ও মাধ্যমিক (হোটেল, থিমপার্ক যা পর্যটনে ব্যবহারের উদ্দেশ্যেই তৈরি করা হয়েছে)।
খ. অবস্থানের ভিত্তিতে ২ (দুই) প্রকার: স্থানীয় (জাতীয় স্মৃতিসৌধ, লালবাগ কেল্লা ইত্যাদি) ও আন্তর্জাতিক (আগ্রার তাজমহল, প্যারিসের আইফেল টাওয়ার ইত্যাদি)।
গ. সৃষ্টির ভিত্তিতে ২ (দুই) প্রকার: প্রাকৃতিক (সুন্দরবন, ব্রহ্মপুত্র নদ ইত্যাদি) ও মানবসৃষ্ট (জাতীয় জাদুঘর, বায়তুল মোকাররম মসজিদ ইত্যাদি)।
ঘ. ভৌত অবস্থার ভিত্তিতে ২ (দুই) প্রকার: দৃশ্যমান (ট্রেন, হিমালয় পর্বত ইত্যাদি) ও অদৃশ্য (খাবারে স্বাদ, মানুষের আচরণ ইত্যাদি)।
ঙ. পণ্য উৎপাদনের ভিত্তিতে ৬ (ছয়) প্রকার: সাংস্কৃতিক (সঙ্গীত, নৃত্য ইত্যাদি), ঐতিহাসিক (স্বাধীনতা জাদুঘর, বধ্যভূমি ইত্যাদি), শিক্ষামূলক (লাউয়াছড়া রেইন ফরেস্ট, জাতীয় সংসদের আর্কিটেকচারাল ডিজাইন ইত্যাদি), বাস্তুভিত্তিক (সুন্দরবনের জৈববাস্তু, গ্রামের সাংস্কৃতিক বাস্তু ইত্যাদি), জৈবিক (জাতীয় চিড়িয়াখানা, বাংলাদেশ হার্বেরিয়াম ইত্যাদি) ও বিনোদনমূলক (শিল্পকলা একাডেমি, পালাগান ইত্যাদি)।
পর্যটনসম্পদের শুমারি তাৎপর্য কী?
শুমারির মাধ্যমে সংখ্যাতাত্তি¡ক গণনা করে সম্পদের প্রকৃত পরিমাণ নির্ণয় করা হয়। পর্যটনসম্পদের ক্ষেত্রে এর প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। শুমারি ব্যাতিরেকে নিচের কাজগুলি সঠিকভাবে করা যাবে না। ফলে বাংলাদেশের পর্যটন কখনোই একটি মানসম্মত পর্যটনে বিশ^ দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না।
ক. পর্যটনের জাতীয় পরিকল্পনা গ্রহণের জন্য।
খ. পর্যটনের প্রডাক্ট লাইন তৈরি এবং নিশ প্রডাক্ট (Niche Product) তৈরির জন্য।
গ. পর্যটনে মোট জনবলের সংখ্যা নির্ণয় ও তাদের প্রশিক্ষণ পরিকল্পনার জন্য।
ঘ. আমদানি ও রপ্তানির সেবাপণ্যের মান নির্ধারণের জন্য।
ঙ. পর্যটনসম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অন্যান্য মন্ত্রণালয় বা বিভাগের সাথে যৌথনীতি ও কৌশল নির্ধারণের জন্য।
চ. পর্যটনসম্পদের জীবনচক্র (Life Cycle) নির্ধারণের জন্য।
ছ. বিপন্নপ্রায় সম্পদ (Endangered Resources) ব্যবহারের নীতি ও রীতি নির্ধারণের জন্য।
পর্যটনসম্পদের শুমারি কে করবে?
বাংলাদেশের সকল শুমারি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো করলেও পর্যটন শুমারি বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ডকেই করতে হবে। তবে প্রয়োজনে তারা পরিসংখ্যান ব্যুরোর সাথে যৌথভাবে এই শুমারি করতে পারে।
উপসংহার:
বাংলাদেশের পর্যটনসম্পদ শুমারি অত্যবশ্যকীয়। এমনকি শুধু একবার করলেই চলবে না। পর্যটনসম্পদের প্রতিনিয়ত পরিবর্তন হয় বিধায়, প্রতি ১০ (দশ) বছরে একবার করে এই শুমারি করতে হবে। তা না হলে সম্পদ সংরক্ষণ ও ব্যবহারে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না। ফলশ্রæতিতে, দেশের সামগ্রিক সম্পদের প্রভূত ক্ষতি হবে।
সভাপতি, বাংলাদেশ ট্যুরিজম ফাউন্ডেশন (বিটিএফ) আহবায়ক, সম্মিলিত পর্যটন জোট