মাগফিরাতেই রোজার দ্বিতীয় অধ্যায়ের সার্থকতা
Tweet
লেখক, কামিল শিবলী
ফ্রিল্যান্স রাইটার
সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের বানিয়েছেন। এরপর সেই উত্তম অবয়বে দিয়েছেন রুহের সঞ্চার। মাতৃগর্ভ হয়ে এ পৃথীবি এসেছি আমরা নিষ্পাপ স্বরুপ। এর পর খোদার পরীক্ষাগারে একে একে দিয়ে চলেছি পরীক্ষা। তিনি চাইছেন, বান্দাকে আমি পরীক্ষা করি। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কি সেই পরীক্ষা। উত্তর হচ্ছে একটি মানব জীবনের শুরু থেকে জীবনের শেষ পর্যন্ত রব্বুল আলামীনকে ভয় করা।
তিনি সকল কিছুর স্রষ্টা তা স্বীকার করে তার আদেশ মতো চলা। আর এই পথ চলাতে আমাদের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ দ্ধারা প্রতিনিয়ত আমরা নানা রকম গুণা করে চলেছি। এসব গুণা মাফ করার কথা এবং সেই সাথে কখন কখন মাফ হতে পারে সেই পদ্ধতিও তিনি জানিয়েছেন। এরমধ্যে অন্যতম একটি সময় আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জাত বলেছেন, রমজানের মধ্যভাগের দশদিন।
আমরা রমজানের প্রথম দশক বা বরকতের দশক পাড় হয়ে এসেছি। দ্বিতীয় দশক তথা মাগফিরাত বা ক্ষমার দশকও প্রায় শেষ। গুনাহ মাফের সুবর্ণ সুযোগ। আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা পাওয়ার শ্রেষ্ঠ সময়। তাই ক্ষমার জন্য আকুল হই। আল্লাহতায়ালা এই দশকে তার বান্দার সকল গুণা ক্ষমা করেন। নেক বান্দারা রাব্বুল আলামিনের কাছে ক্ষমা চান। তার কাছে কেউ নিরাশ হন না।
আমাদের সবার উচিত, মাগফিরাতের এ দশক থেকে পুরোপুরি ক্ষমার সুযোগ কাজে লাগানো। মাগফিরাত শেষ হতে অল্প সময় বাকি আছে, বিশ রোজার সূর্যাস্তের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত। এই সময়ে আমাদের গোনাহগুলো মাফের জন্য আল্লাহর কাছে বেশি বেশি চাইতে থাকি।
বেশি বেশি ইবাদত বন্দেগী করি, চোখের পানি ফেলে প্রার্থনায় অংশ নেই। যা রাব্বুল আলামীনকে বিগলিত করে। বলতে থাকি- তুমি তো অতি ক্ষমাশীল, ক্ষমা তো তোমার পছন্দ অতএব আমাকে ক্ষমা কর। তুমি তো পরম দয়ালু, আমি ভুল করেছি, আমি তোমার দয়া প্রার্থনা করছি।
আল্লাহ তায়ালাকে রাজিখুশী করার জন্য ইবাদতের পাশাপাশি ভালো ভালো কাজ করা, দান করা, আত্মীয়-স্বজনের হক আদায় করব এবং গরীব-দুঃখীর কষ্টের ভাগিদার হবো। আল্লাহ খুশী হলে ক্ষমা পাওয়া সহজ হবে।
রমজানে দান করে সৃষ্টিকর্তা কৈট্য অর্জন করার সুযোগ। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘একজন মিসকিনকে দান করলে তা শুধু একটি দান হিসেবে গণ্য হবে, কিন্তু একজন গরীব আত্মীয়কে দান করলে তাতে দ্বিগুণ সওয়াব হয়। প্রথমে সওয়াব হবে দান করার জন্য, দ্বিতীয় বার হবে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য।’
আল্লাহ রব্বুল আলামীন তাঁর বান্দার নিকট হতে প্রার্থনা বা মোনাজাত শোনা এবং কবুল করা পছন্দ করেন। আল-কোরআনের ৬ষ্ঠ সূরা আল আন আমের ৬৩-৬৪ আয়াতে উল্লিখিত হয়েছে- ‘বলুন, কে তোমাদের ত্রাণ করেন যখন তোমরা স্থলভাগের ও সমুদ্রের বিপদে কাতরভাবে এবং গোপনে তাঁর নিকট অনুনয় কর এভাবে- আমাদের এই বিপদ হতে ত্রাণ করলে আমরা অবশ্যই কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হবো। বলুন আল্লাহই তোমাদেরকে বিপদ হতে ও সমস্ত দুঃখ-কষ্ট হতে পরিত্রাণ করেন। এতদসত্ত্বেও তোমরা তাঁর শরিক কর।’
ক্ষমা চাওয়া নিয়ে কোরআনের এরশাদ হচ্ছে- ‘তোমরা ধাবমান হও স্বীয় প্রতিপালকের ক্ষমার দিকে এবং সেই জান্নাতের দিকে যার বিস্তৃতি আসমান ও জমিনের ন্যায়, যা প্রস্তুত করা হয়েছে মুত্তাকিদের জন্য, যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল; আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদেরকে ভালোবাসেন এবং যারা কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে অথবা নিজেদের প্রতি জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ব্যতীত কে পাপ ক্ষমা করবে? এবং তারা যা করে ফেলে, জেনে শুনে তারই পুনরাবৃত্তি করে না।’ (সূরা আল ইমরান: আয়াত ১৩৩-৩৫)।