পর্যটন শিল্প সম্পৃক্তদের নিয়ে সংলাপ জরুরী
Tweet
বিশ্ব উত্তপ্ত কড়াইয়ে বিরান হচ্ছে। মৃত্যুর মিছিল সবকিছুকে স্তব্দ করে দিচ্ছে। মানুষ জান নিয়ে পালাবে সে রাস্তাও খোলা নেই। গোটা বিশ্ব যেন ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। বলা যায় বিশ্বটা এই অতিদানব করোনার কম্যান্ডেই চলছে। এ অবস্থার সূত্রপাত চীন মুলুকের উহানে গত বছরের ডিসেম্বরে। তবে, এর শেষ কবে এবং কোথায় কেউ জানেনা। অথচ বিশ্বের এই ডেডলক অবস্থা সবার আগে ধাক্কা দিয়েছে পর্যটন শিল্পকে।
অবশ্য এ শিল্পের গতিপ্রকৃতিটাই এমন। বাংলাদেশের লগি-বৈঠা কিংবা আমেরিকার নাইন-ইলেভেনের মত দুর্বিপাক বলুন অথবা চিকনগুনিয়া কিংবা করোনা তাণ্ডবের মত দুর্যোগই বলুন এই পর্যটনই লণ্ডভণ্ড হয় সবার আগে। আর এর মূল কারণ হচ্ছে শিল্পটির সেবার ধরণ। শতভাগ সেবা নির্ভর এই শিল্পটি মানুষের একেবারে মৌলিক সেবা যেমন তার সার্বিক যাতায়াত, থাকা-খাওয়া, আনন্দ-বিনোদন সবই সে দিয়ে থাকে।
তার সাথে থাকে দেখা, জানা, বেড়ানো, অবসর বিনোদন, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা-সংস্কৃতি, ধর্ম ইত্যাদি চর্চার সুযোগ। যেজন্য পর্যটন এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড় শিল্প হিসেবে শুধু অর্থনীতি, সমাজ আর সংস্কৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। সে বিশ্বের সকল কর্মসংস্থানের শতকরা দশ ভাগ দখল করে দুনিয়ার গরীবি হঠাও আন্দোলনের মূল শক্তি। তার সাথে পরিবেশ্ রক্ষা আর টেকসই উন্নয়নের পুরোধাও এই পর্যটন। তাকে বাদ দিয়ে উন্নয়নের পরিপূর্ণতার বিষয়টি হালে চিন্তাই করা যায় না।
এমন এক শিল্প যদি গোটা বিশ্বব্যাপী লণ্ডভণ্ড হয়ে যায় তাহলে অবস্থাটা কি হতে পারে তা অনুমান করতেও ভয় লাগে। যেজন্য একে পুনরুদ্ধারের জন্য কি করা যেতে পারে তা নিয়ে গোটা বিশ্বে চিন্তাভাবনার শেষ নেই। পর্যটনের বিশ্ব মুরুব্বী জাতিসংঘ বিশ্ব পর্যটন সংস্থা বা ইউ এন ডাবলু টি ও ইতোমধ্যে ডাবলু এইচ ও; ডাবলু টি টি সি; আই সি এ ও; আই এ টি এ ইত্যাদি আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোকে নিয়ে আপোদকালীন কমিটি করে কাজ করছে। পাশাপাশি তাদের নিজস্ব গবেষক এবং বিশেষজ্ঞরাও নিয়মিত কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
তারপরও কথা থাকে, এসব উদ্যোগ এবং তৎপরতা কতদূর যাবে। করোনা ভাইরাসে্র নির্দিষ্ট কোন মেয়াদ নেই। এজন্য ইউ এন ডাবলু টি ও বলছে, পর্যটন শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা নিয়ে এই মুহুর্তে কোন মন্তব্য করা অনেকটা আগ বাড়িয়ে বলা হয়ে যাবে। অথচ দিন গড়াচ্ছে আর পর্যটনের ক্ষয়ক্ষতি শুধু বেড়েই চলেছে। যেজন্য সংস্থাটি এখন পর্যন্ত যে মন্তব্য করেছে তাতেও গা শিউরে উঠে। বিশ্বের একশত ভাগ পর্যটক গন্তব্য ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। এতে কর্মসংস্থান কমবে ১০০-১২০ মিলিয়ন; আন্তর্জাতিক পর্যটক আগমন কমবে শতকরা ৬০-৮০ ভাগ এবং রাজস্ব কমবে ৯১০ বিলিয়ন থেকে ১.২ ট্রিলিয়ন আমেরিকান ডলার।
পর্যটন নিয়ে কাজ করে এমন আন্তর্জাতিক ও বেসরকারী সংস্থা ওয়ার্ল্ড ট্র্যাভেল এন্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল বা ডাবলু টি টি সি একই সুরে কথা বলছে। উভয় সংস্থাই পর্যটনের বৈশ্বিক এই দূরাবস্থা মোকাবেলার জন্য একযোগে কাজ করছে। বিশেষ করে পর্যটনের বিশ্ব মুরুব্বী ইউ এন ডাবলু টি ও অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে তার দায়িত্ব পালন করছে। তারা ইতোমধ্যে তাদের সদস্য দেশগুলোর পর্যটন মন্ত্রীদের সাথে ধারাবাহিক আলাপ শুরু করেছে। একই সাথে বেসরকারী উদ্যোক্তাদের সাথেও যোগাযোগ রেখে তাদের বক্তব্য গ্রহণ করে বিবেচনায় নিচ্ছে। সংস্থাটি বিশ্বাস করে করোনায় যেমনি গুরুত্ব পাচ্ছে ‘টেস্ট এন্ড টেস্ট’ তেমনি পর্যটনের জন্যও ‘ডায়লগ এন্ড ডায়ল’ অপরিহার্য।
সব মিলিয়ে গোটা বিশ্বে পর্যটন এখন ডায়লগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। উদ্দেশ্য, এই শিল্প এবং শিল্প সম্পৃক্ত সবাইকে বাঁচানো এবং আবার কার্যক্রম শুরু করা। এলক্ষ্যে ইউ এন ডাবলু টি ও বেশ কিছু বিষয়ে নির্দেশনা এবং পরামর্শ দিচ্ছে। যা সদস্য দেশগুলোর সরকার এবং প্রশাসন ছাড়াও বেসরকারী খাতের সবার জন্য অত্যন্ত উপযোগী। কারণ, পর্যটন যেহেতু একান্তই সেবা নির্ভর এবং বহুমাত্রিক একটি শিল্প সেহেতু এখানে প্রতিষ্ঠানের সাথে সাথে ব্যক্তির ভুমিকাকেও অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনায় নেয়া হয়ে থাকে। তাই আমরাও পর্যায়ক্রমিকভাবে ইউ এন ডাবলু টিও; ডাবলু টি টি সি; আমাদের সরকার ও প্রশাসন; বেসরকারী উদ্যোক্তা এবং সকল পর্যায়ের শ্রমদাতাদের নিয়ে আলোচনার চেষ্টা করবো।
জামিউল আহমেদ
পর্যটন ব্যক্তিত্ব ও বিশেষজ্ঞ