প্রচারের অভাবে কেউ সেভাবে জানে না পর্যটনের অবদান
Tweet
আজ ২৩ মে ২০২০ (শনিবার) বাংলাদেশ ট্যুরিজম এন্ড এভিয়েশন মিডিয়া ফোরামের সাথে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের এক অনলাইন সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জাবেদ আহমেদ এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন সম্মিলিত পর্যটন জোটের আহবায়ক ও বাংলাদেশ ট্যুরিজম ফাউন্ডেশনের সভাপতি মোখলেছুর রহমান। প্রধান আলোচক ছিলেন ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা ও দি বাংলাদেশ মনিটর পত্রিকার সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম। বাংলাদেশ ট্যুরিজম এ্যাণ্ড এভিয়েশন মিডিয়া ফোরামের প্রেসিডেন্ট ও দি ম্যাসেজ বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক কাজী রহিম শাহরিয়ার-এর সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন-পর্যটন বিচিত্রার সম্পাদক মহিউদ্দিন হেলাল, দি ট্যুরিজম ভয়েস পত্রিকার সম্পাদক শহীদুল ইসলাম সাগর ও ওয়েলকাম বাংলাদেশ-এর সম্পাদক এম. জেড. আই. ডাল্টন জহির।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাবেদ আহমেদ বলেন, ট্যুরিজম তার নিজস্ব শক্তিমত্তা নিয়েই ঘুরে দাঁড়াবে। করোনা সংকট মেকাবেলায় আমরা একে উদ্ধারের জন্য বিস্তারিত পরিকল্পনা করছি। এই পরিকল্পনা সম্পন্ন হলে একে নিয়ে আমরা ২৩টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকদেরকে যুক্ত করতে তাদের কাছে যাবো। পর্যটন বাংলাদেশের জিডিপিতে যে অবদান রাখছে, তা অনস্বীকার্য। তবে তা প্রচারের অভাবে কেউই সেভাবে জানেন না। তাই মিডিয়ার ভূমিকি অপরিসীম। প্রধান অতিথি আরো বলেন, পর্যটনের প্রান্তিকজনগণকে সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণের আওতায় এনে আমরা যৎসামান্য আর্থিক সহযোগিতা প্রদান করছি। অবিলম্বে ট্যুর অপারেটরদের জন্য পূর্ণাঙ্গ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মোখলেছুর রহমান পর্যটনখাতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সবচেয়ে বেশি অংশগ্রহণ ও অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নকালে এরা যেন কোনভাবেই বাদ না পড়ে। করোনাউত্তরকালে প্রত্যেক স্টেকহোল্ডার ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর প্রটোকল নির্ধারণের উপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি আরো বলেন যে, পর্যটনকে সংগঠিত করতে হলে সকল স্টেকহোল্ডারদেরকে একক ও যৌথভাবে সংগঠিত করতে হবে। ট্যুরিজম বোর্ডকে এই দায়িত্ব নিতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
প্রধান আলোচক কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, পর্যটন মিডিয়া কর্মীদের পেশাগত উৎকর্ষ সাধন করতে হবে এবং তাদেরকে পর্যটন খাত ঘুরে দাঁড় করানোর পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে হবে। মূলধারার মিডিয়াকে পর্যটনে অধিক ব্যবহারের তাগিদ দিয়ে তিনি বলেন, আমাদের পাশ্ববর্তী দেশগুলিকে আমাদের পর্যটন রপ্তানির গন্তব্য হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে। কারণ ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে এখন আর পর্যটক পাওয়া যাবে না। আক্ষেপ করে কাজী ওয়াদিুল আলম বলেন, ৭-৮ বছর আগে ট্যুরিজম স্যাটেলাইট একাউন্ট এবং ট্যুরিজম আইকনের জন্য পদক্ষেপ নিয়েও বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড তা করতে পারলো না। পর্যটন সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদেরকে উন্নয়ন ও অনুসন্ধানী পর্যটন সংবাদ পরিবেশন করতে হবে। পর্যটনের প্রকৃত উন্নয়নের জন্য সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। তাঁর মতে, নিউ ইয়র্ক, জোহানেসবার্গ ও প্যারিসের চেয়ে ঢাকা এখনো অনেক নিরাপদ। তাই ৩১ বছরের পুরাতন পর্যটন পত্রিকা বাংলাদেশ মনিটরের এই সম্পাদক বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ইমেজ তৈরি করার উপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
বাংলাদেশ ট্যুরিজম এ্যাণ্ড এভিয়েশন মিডিয়া ফোরামের প্রেসিডেন্ট ও দি ম্যাসেজ বাংলাদেশ পত্রিকার সম্পাদক কাজী রহিম শাহরিয়ার বলেন, আধুনিক বিশ্বে পর্যটনকে যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে পর্যটন ও এর সঙ্গে সম্পর্কিত সেবা সেক্টরসমূহ একক বৃহত্তম শিল্প হিসেবে অন্য সব কিছুকে অতিক্রম করে গেছে। সর্বাধিক মূলধন বিনিয়োগ ও সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে এ খাতেই পৃথিবীর সর্বাধিক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ দু’ভাবেই পৃথিবীর বেকার সমস্যা সবচেয়ে দ্রæত সমাধান হচ্ছে পর্যটন শিল্পের মাধ্যমে। বাংলাদেশেও পর্যটনকে লাভজনক শিল্পে রূপান্তর করা সম্ভব। অথচ বাংলাদেশ আজও পর্যটনকে পরিপূর্ণ শিল্পরূপে গড়ে তোলার কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ১৯৯৯ সালে শিল্পনীতিতে পর্যটনকে প্রথমবারের মতো অত্যাবশ্যকীয় খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হলেও অদ্যাবধি একে শিল্প হিসেবে ঘোষণা করা হয় নি। তিনি বাংলাদেশ ট্যুরিজম এ্যাণ্ড এভিয়েশন মিডিয়া ফোরাম গঠনের প্রেক্ষাপট, এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ও ১০ (দশ) দফা কর্মসূচী তুলে ধরেন। তিনি ট্যুরিজমখাত সংশ্লিষ্ট মিডিয়াগুলোতে বিরাজমান সমস্যাগুলো চিহ্নিতকরণ ও সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ এবং এ খাত সংশ্লিষ্ট মিডিয়া কর্মীদের সহযোগিতার জন্য একটি কল্যাণ তহবিল গঠনের প্রস্তাব করেন।
ফোরামের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও পর্যটন বিচিত্রার সম্পাদক মহিউদ্দিন হেলাল বলেন, পর্যটন মিডিয়ার জন্য স্ট্যান্ডার্ড অপারেশনাল প্রসিডিউর তৈরি করতে হবে। দায়িত্বশীল প্রচার মাধ্যম হিসেবে বিশ^স্ততা ও তথ্যসূত্রসহ সংবাদ পরিবেশন করা উচিত। পর্যটন সংবাদকর্মীদের প্রশিক্ষণের উপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, জাতিসঙ্ঘ বিশ্ব পর্যটন সংস্থা পাবলিক ও প্রাইভেটের পর মিডিয়াকে পর্যটনের তৃতীয় উপাদান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাই মিডিয়া ছাড়া পর্যটন অচল। তিনি সরকার ও মিডিয়ার সমন্বয়ে পর্যটন গন্তব্যে আইসব্রেকিং ট্যুর করার তাগিদ দিয়ে বলেন, ভ্রমণকারীদেরকে শঙ্কামুক্ত করার জন্য বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার।
ফোরামের কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য শহীদুল ইসলাম সাগর বলেন, বেশিরভাগ মিডিয়াই সাংবাদিকদেরকে পর্যটন বিষয়ে সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে অফিসিয়ালি দায়িত্ব দেয় না। বাংলাদেশ ট্যুরিজম ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ১০ জন সাংবাদিককে ১ বছর মেয়াদি পর্যটন সাংবাদিকতায় ফেলোশীপ প্রদানের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এভাবে ধীরে ধীরে দেশে একটি কার্যকর পর্যটন সাংবাদিকতা গড়ে উঠবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ফোরামের অর্থ সম্পাদক এম. জেড. আই. ডাল্টন জহির বলেন, সময় এসেছে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড এবং বাংলাদেশ ট্যুরিজম এন্ড মিডিয়া ফোরামের এক হয়ে কাজ করার। তাহলে সত্যিকার অর্থে পর্যটন মানুষের কাছে পৌঁছুতে পারবে। বিদেশি ভ্রমণলেখক কিংবা সাংবাদিকদেরকে এনে ফ্যাম ট্যুর করে এদেশে বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বাড়ানো যাবে না। বরং এই ফোরামের সাথে টেকসই সম্পর্ক উন্নয়নের মাধ্যমে প্রকৃত পর্যটন বাজার গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
জুম মিটিং এ অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক আবু রায়হান সরকার, সদস্য এবিম ইব্রাহীম প্রমুখ।